আসুন শিখি ও জানি

Saturday

বাক্য বাক্য কাকে বলে ? কত প্রকার ও কী কী ? | Bangla Sentence

May 17, 2025 0



 বাক্য 


সুচিপত্র---

  • বাক্য কাকে বলে ? বাক্য কী ? উদাহরণ সহ আলোচনা 
  •  বাক্য কত প্রকার ও কী কী ? বাক্যের প্রকারভেদ সহ আলোচনা।
  • গঠন অনুসারে বাক্য কত প্রকার ও কী কী ?উদাহরণসহ আলোচনা।
  •  অর্থ অনুসারে বাক্য কত প্রকার ও কী কী ? উদাহরণ সহ আলোচনা।
  • গুণ অনুসারে বাক্য কত প্রকার ও কী কী ? উদাহরণ সহ বিস্তারিত আলোচনা।


বাক্য

কয়েকটি শব্দ মিলিত হয়ে যখন একটি পূর্ণ মনের ভাব প্রকাশিত হয়, তখন তাকে বাক্য বলে। আবার বলা যায় এক বা একাধিক শব্দ নিয়ে গঠিত পূর্ণ অর্থবোধক ভাষিক একককে বাক্য বলে।

ব্যাকরণবিদদের মতে, বাক্য হলো এক বা একাধিক অর্থপূর্ণ শব্দের সমাহার যা সম্পূর্ণ ভাব প্রকাশ করে। অর্থাৎ যে সুবিন্যাসটি পদসমষ্টি দ্বারা কোন বিষয়ে বক্তার মনোভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ পায় তাকে বাক্য বলে। বাক্য সম্পর্কে বিভিন্ন ব্যক্তির মতামত নিম্নে দেওয়া হলো –

পাণিনি: “কর্ম ধাতু ইতি বাক্যম্” (অর্থ: কর্ম এবং ধাতু মিলে বাক্য গঠিত হয়।)

ডক্টর সুনীতি কুমার মুখোপাধ্যায়ের মতে, “পরস্পর অর্থসম্বন্ধবিশিষ্ট যে পথগুলো দ্বারা একটি সম্পূর্ণ ধারণা বা বক্তব্য বা ভাব প্রকাশ পায় সে পদ গুলোর সমষ্টিকে বাক্য বলে”।

ভর্তৃহরি: “শব্দাশ্রয়ঃ প্রকাশঃ” (অর্থ: শব্দের সমাহারে অর্থ প্রকাশ পায়।)

কৌটিল্য: “কর্ম-কারক-ভাবে-কৃতঃ শব্দঃ সর্বনাম-বিশেষণ-সমেতঃ বাক্যম্” (অর্থ: কর্ম, কারক, ভাব, শব্দ, সর্বনাম এবং বিশেষণের সমন্বয়ে বাক্য গঠিত হয়।)

শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য: “অর্থপ্রকাশকঃ শব্দসমাহারঃ বাক্যম্” (অর্থ: অর্থ প্রকাশকারী শব্দের সমাহারকে বাক্য বলে।)

শঙ্করাচার্য: “যদর্থং বোধয়তি তৎ বাক্যম্” (অর্থ: যা অর্থ বোধায় তাকে বাক্য বলে।)

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর: “বাক্য হল মনের ভাব প্রকাশের একক।”

মাইকেল মধুসূদন দত্ত: “বাক্য হল ভাব প্রকাশের অস্ত্র।”

কাজী নজরুল ইসলাম: “বাক্য হল চিন্তার প্রতিচ্ছবি।

বাক্য কত প্রকার ও কী কী ? বাক্যের প্রকারভেদ সহ আলোচনা।

সাধারণত বাক্যের প্রধান অংশ তিনটি। যথা – কর্তা, কর্ম ও ক্রিয়া। বাক্যের ক্রিয়াকে যে চালায়, সে হলো কর্তা। যাকে অবলম্বন করে ক্রিয়া সম্পাদিত হয় তাকে কর্ম বলে। আর বাক্যের মধ্যে যে অংশ দিয়ে কোন কিছু করা, ঘটা বা হওয়া বোঝাই তাকে ক্রিয়া বলে। যেমন: শাওন ও স্মরণ বই পড়ে। এখানে শাওন ও স্মরণ হলো কর্তা, বই হলো কর্ম আর পড়ে হলো ক্রিয়া।

বাক্য কত প্রকার ও কী কী ? 

উত্তর:—

প্রতিটি বাক্যের প্রধানত দুটি অংশ থাকে। যথা: –

ক) উদ্দেশ্য
খ) বিধেয়

নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো —

ক) উদ্দেশ্য:—

বাক্যের যে অংশে কাউকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলা হয়ে থাকে তাকে উদ্দেশ্য বলে। যেমন – রহিম বল খেলছে। সীমা বই পড়তেছে। এখানে বাক্য দুটির মাঝে ‘রহিম‘ এবং ‘সীমা‘ হলো উদ্দেশ্য।

খ) বিধেয়:—

উদ্দেশ্য সম্বন্ধে যা বলা হয় তাকে বিধেয় বলে। যেমন – করিম ক্রিকেট খেলছে। আসিফ বই পড়তেছে। বাক্য দুটির মাঝে ‘ক্রিকেট খেলছে‘ এবং ‘বই পড়তেছে‘ হলো বিধেয়।

গঠন অনুসারে বাক্য কত প্রকার ও কী কী ?উদাহরণসহ আলোচনা।

উত্তর:—

গঠন অনুসারে বাক্য

গঠন অনুসারে বাক্য তিন প্রকার। যথা —

ক) সরল বাক্য

খ) মিশ্র বা জটিল বাক্য

গ) যৌগিক বাক্য

নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো —

ক) সরল বাক্য

সরল বাক্য হল এমন বাক্য যেখানে একটি মাত্র কর্তা এবং একটি মাত্র সমাপিকা ক্রিয়া থাকে। এই বাক্যগুলো সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে এবং আরও কোনো বাক্যের উপর নির্ভরশীল হয় না।

উদাহরণ:

  • ছেলেটি বই পড়ছে।
  • মেয়েটি গান গাইছে।
  • সূর্য উঠেছে।
  • পাখি উড়ছে।
  • ফুল ফুটেছে।

সরল বাক্যের বৈশিষ্ট্য:

  • একটি কর্তা থাকে।
  • একটি সমাপিকা ক্রিয়া থাকে।
  • সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে।
  • আরও কোনো বাক্যের উপর নির্ভরশীল হয় না। 

সরল বাক্য চেনার সহজ উপায়

সরল বাক্যে একটিই সমাপিকা ক্রিয়া থাকে। একটি সরল বাক্যে একটি বা একাধিক অসমাপিকা ক্রিয়া থাকতে পারে। যেমন- কেহ কহিয়া না দিলেও (অসমাপিকা ক্রিয়া) তপোবন বলিয়া বোধ হইতেছে (সমাপিকা ক্রিয়া)।

সরল বাক্যে ক্রিয়াপদ উহ্য থাকতে পারে। যেমন- জ্ঞানী লোক সকলের শ্রদ্ধার পাত্র। 

সরল বাক্যের ভেতরে কোন খণ্ডবাক্য বা একাধিক পূর্ণবাক্য থাকে না। যেমন- চেহারা নিষ্প্রভ হলেও তার মুখাবয়বে একটা পরিতৃপ্তির আভা ছিল।

খ) জটিল বা মিশ্র বাক্য 

জটিল বা মিশ্র বাক্য হলো যে বাক্যে একটি স্বাধীন বাক্য এবং এক বা একাধিক অধীন বাক্য পরস্পর সাপেক্ষভাবে ব্যবহৃত হয়। অন্য কথায়, জটিল বাক্যে একাধিক বাক্য থাকে যেখানে একটি বাক্য অন্য বাক্যের উপর নির্ভর করে।

মিশ্র বা জটিল বাক্যের উদাহরণ:

 যখন বৃষ্টি হবে, তখন আমরা ঘরে বসে গল্প করবো।

এই বাক্যটিতে দুটি বাক্য রয়েছে:

প্রধান বাক্য: “আমরা ঘরে বসে গল্প করবো।”

অধীন বাক্য: “যখন বৃষ্টি হবে।”

সংযোজক শব্দ “যখন” প্রধান বাক্য এবং অধীন বাক্যকে যুক্ত করেছে। অধীন বাক্যটি “আমরা ঘরে বসে গল্প করবো” এই প্রধান বাক্যের সময় নির্ধারণ করে।

আরও কিছু উদাহরণ:

  • যে দেশের মানুষ শিক্ষিত, সেই দেশ উন্নত।
  • যদি আমরা পরিশ্রম করি, তাহলে অবশ্যই সফল হব।
  • যেহেতু বিকেল হয়ে গেছে, তাই আমরা বাড়ি ফিরি।
  • যারা সত্যবাদী, তাদের সবাই সম্মান করে।
  • যেখানে নিয়ম নেই, সেখানে অরাজকতা বিরাজ করে।

মিশ্র বা জটিল বাক্যের বৈশিষ্ট্য:

  • জটিল বাক্যে একটি প্রধান বাক্য এবং এক বা একাধিক অধীন বাক্য থাকে।
  • প্রধান বাক্য স্বাধীনভাবে সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে।
  • অধীন বাক্য প্রধান বাক্যের উপর নির্ভর করে এবং এর অর্থ সম্পূর্ণ হয় না।
  • সংযোজক শব্দ ব্যবহার করে প্রধান বাক্য এবং অধীন বাক্যকে যুক্ত করা হয়। যেমন: যখন, যদি, কারণ, যেখানে, যাতে, ইত্যাদি।

জটিল বা মিশ্র বাক্য চেনার সহজ উপায়:

জটিল বা মিশ্র বাকে একাধিক খণ্ডবাক্য থাকে। এদের মধ্যে একটি প্রধান খণ্ডবাক্য এবং অন্যগুলো সেই বাক্যের উপর নির্ভর করে। যেমনঃ যেহেতু তুমি বেশি নম্বর পেয়েছ, সুতরাং তুমি প্রথম হবে।

অধিকাংশ জটিল বাক্যে প্রতিটি খণ্ডবাক্য এর পর কমা (,) থাকে। যথা- যিনি পরের উপকার করেন, তাঁকে সবাই শ্রদ্ধা করে।

জটিল বাক্যের সাপেক্ষ সর্বনাম ও নিত্য সম্বন্ধীয় যোজক যোগ করতে হয়। যথা- 

সাপেক্ষ সর্বনাম : যে….সে, যা….তা, যিনি….তিনি, যারা…. তারা। যেমনঃ যিনি বিদ্বান, তিনি সর্বত্র আদরণীয়।

নিত্য সম্বন্ধীয় যোজক: যখন…. তখন, যেমন…. তেমন, বরং…. তবু, যেইনা….অমনি, যেহেতু….সেহেতু/সেজন ̈। যেমনঃযখন বিপদ আসে, তখন দুঃখও আসে।

গ) যৌগিক বাক্য

যৌগিক বাক্য হল এমন বাক্য যেখানে দুটি বা ততোধিক স্বাধীন বাক্য সংযোজক শব্দ ব্যবহার করে যুক্ত থাকে। এই বাক্যগুলো সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে এবং একে অপরের উপর নির্ভরশীল নয়।

যৌগিক বাক্যের উদাহরণ:

১.  আমি বাংলায় কথা বলতে পারি, কিন্তু ইংরেজিতে (কথা বলতে) তেমন পারি না।

এই বাক্যটিতেও দুটি স্বাধীন বাক্য রয়েছে:

প্রথম বাক্য: “আমি বাংলায় কথা বলতে পারি।”

দ্বিতীয় বাক্য: “ইংরেজিতে তেমন পারি না।”

সংযোজক শব্দ “কিন্তু” দুটি বাক্যকে যুক্ত করেছে। এই দুটি বাক্যই সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে এবং একে অপরের বিপরীত অর্থ বহন করে।

আরও কিছু উদাহরণ:

  • রাস্তাঘাট ভিড় হয়েছে, তাই আমরা ট্রেনে যাব।
  • সে গান গাইতে পারে, নাচতে পারে, আঁকতেও পারে।
  • সত্যবাদী বলেই, তাকে সকলে বিশ্বাস করে।
  • ছেলেটি গরিব কিন্তু সৎ।

যৌগিক বাক্যের বৈশিষ্ট্য:

  • দুটি বা ততোধিক স্বাধীন বাক্য থাকে।
  • সংযোজক শব্দ ব্যবহার করে বাক্যগুলো যুক্ত থাকে।
  • প্রতিটি বাক্যই সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে।
  • বাক্যগুলো একে অপরের উপর নির্ভরশীল নয়।
  • তুলনা: যেমন, তার চেয়ে, ইত্যাদি।

যৌগিক বাক্য চেনার সহজ উপায়--

যৌগিক বাক্যের অন্তর্গত নিরপেক্ষ বাক্যগুলো আর, এবং, ও, বা, কিন্তু, অথবা, অথচ, কিংবা, বরং, তথাপি, তবে, তবে কি না, নতুবা, তবু, হয়..নয়, হয়.. না হয়, কেন..না, তত্রাচ, অপিচ প্রভৃতি অব্যয় যোগে সংযুক্ত বা সমন্বিত থাকে।  তবে কোন অব্যয় ছাড়াও দুটি সরল বাক্য একসঙ্গে হয়ে যৌগিক বাক্য গঠন করতে পারে।

প্রশ্ন: অর্থ অনুসারে বাক্য কত প্রকার ও কী কী ? উদাহরণ দাও।

উত্তর:—

অর্থ অনুসারে

অর্থ অনুযায়ী বাক্য সাত প্রকার। যথা:

  1. নির্দেশক বাক্য
  2. প্রশ্নবোধক বাক্য
  3. অনুজ্ঞাসূচক বাক্য
  4. বিস্ময়সূচক বাক্য
  5. ইচ্ছাসূচক বাক্য
  6. কার্যকারণাত্মক বাক্য
  7. সন্দেহ সূচক বাক্য

১) নির্দেশক বাক্য- যে বাক্যে কোনো ঘটনা বা ভাবের বিবৃতি থাকে সেই বাক্যকে নির্দেশক বা নির্দেশাত্মক বাক্য বলে। এই প্রকার বাক্যকে বিবৃতিমূলক বাক্যও বলা হয়।

উদাহরণ: 

  • ছেলেটা একদম পড়াশোনা করে না।
  • আমড়া গাছে আম হয় না। 
  • অদিতি পড়াশোনায় খুব ভালো।
  • কোয়েল কাল কলকাতা যাবে।

বাক্যে যে ঘটনা বা ভাবের বিবৃতি থাকে তা ইতিবাচক নাকি নেতিবাচক- এই বিচারে নির্দেশক বাক্যকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

(ক) হ্যাঁ-বাচক বাক্য: যে বাক্যের দ্বারা কোনো কিছু স্বীকার করা হয় বা মেনে নেওয়া হয় তাকে হ্যাঁ-বাচক বাক্য বলে। এই প্রকার বাক্যের অপর নাম সদর্থক বাক্য বা অস্ত্যর্থক বাক্য বা হ্যাঁ-বোধক বাক্য বা ইতিবাচক বাক্য।

উদাহরণ:

  • অমলেন্দুবাবু জীবনবিজ্ঞান পড়ান। 
  • আমাদের প্রধানশিক্ষক মহাশয় ভালো মানুষ। 
  • ট্রেন যথাসময়ে স্টেশনে পৌঁছালো।

(খ) না-বাচক বাক্য: যে বাক্যে কোনো কিছু অস্বীকার বা নিষেধ করা হয়, তাকে না-বাচক বাক্য বলা হয়। না-বাচক বাক্যকে নঞর্থক বাক্য বা নাস্ত্যার্থক বাক্য বা না-বোধক বাক্য বা নেতিবাচক বাক্য বলে।

উদাহরণ:

  • আমাদের পথ নেই আর।
  • এ কলমে লেখা যায়না।
  •  এখনো ছেলেটা বাড়ি ফেরেনি।

(২) প্রশ্নবোধক বাক্য (Interrogative Sentence):– যে বাক্যের দ্বারা কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করা হয় বা জানতে চাওয়া হয়, তাকে প্রশ্নবোধক বাক্য বা প্রশ্নাত্মক বাক্য বলে। প্রশ্নবোধক বাক্য হল এমন বাক্য যেখানে কোনো প্রশ্ন করা হয়। এই বাক্যগুলো সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে এবং কোনো অধীন বাক্যের উপর নির্ভরশীল হয় না। প্রশ্নবোধক বাক্যের শেষে প্রশ্নবোধক চিহ্ন (?) ব্যবহার করা হয়। 

উদাহরণ:

  • ছেলেটা কেমন পড়াশোনা করছে?
  • আমড়া গাছে কি আম হয়? 
  • অদিতির গানের গলা কেমন? 
  • কোয়েল কাল কোথায় যাবে?

প্রশ্নবোধক বাক্যের বৈশিষ্ট্য:

  • কোনো প্রশ্ন করা হয়।
  • সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে।
  • কোনো অধীন বাক্যের উপর নির্ভরশীল হয় না।
  • শেষে প্রশ্নবোধক চিহ্ন (?) ব্যবহার করা হয়।

(৩) অনুজ্ঞাবাচক বাক্য (Imperative Sentence):– যে বাক্যের দ্বারা আদেশ, অনুরোধ, উপদেশ ইত্যাদি বোঝায় তাকে অনুজ্ঞাবাচক বাক্য বলে। অনুজ্ঞাসূচক বাক্য হল এমন বাক্য যেখানে কোনো আদেশ, অনুরোধ, নিষেধ, অনুমতি, উপদেশ, ইত্যাদি প্রকাশ করা হয়। এই বাক্যগুলো সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে এবং কোনো অধীন বাক্যের উপর নির্ভরশীল হয় না।

উদাহরণ:

  • দরজা বন্ধ করো। (আদেশ)
  • আমাকে একটু পানি দাও। (অনুরোধ)
  • এখানে আসো না। (নিষেধ)
  • তুমি যাও। (অনুমতি)
  • পড়াশোনা ভালোভাবে করো। (উপদেশ)

অনুজ্ঞাসূচক বাক্যের বৈশিষ্ট্য:

  • কোনো আদেশ, অনুরোধ, নিষেধ, অনুমতি, উপদেশ, ইত্যাদি প্রকাশ করে।
  • সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে।
  • কোনো অধীন বাক্যের উপর নির্ভরশীল হয় না।
  • অনুজ্ঞাসূচক বাক্যের প্রকারভেদ:
  • আদেশাত্মক বাক্য: যেখানে কোনো কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
অনুজ্ঞাসূচক বাক্যের প্রকারভেদ:
  1. প্রার্থনামূলক বাক্য: যেখানে কোনো অনুরোধ করা হয়। উদাহরণ: 
  2. নিষেধাত্মক বাক্য: যেখানে কোনো কাজ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়।  উদাহরণ: 
  3. অনুমতিমূলক বাক্য: যেখানে কোনো কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়। উদাহরণ: 
  4. উপদেশাত্মক বাক্য: যেখানে কোনো কাজ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।  উদাহরণ: 

(৪) প্রার্থনাসূচক বা ইচ্ছাসূচক বাক্য (Optative Sentence):– যে বাক্যের দ্বারা বক্তার মনের ইচ্ছা প্রকাশ পায় কিম্বা কোনো কিছু প্রার্থনা করা বোঝায়, তাকে প্রার্থনাসূচক বা ইচ্ছাসূচক বাক্য বলে। প্রার্থনা সূচক বাক্য হল এমন বাক্য যেখানে ঈশ্বরের কাছে কোনো আকাঙ্ক্ষা, অনুরোধ, প্রার্থনা, ইত্যাদি প্রকাশ করা হয়। এই বাক্যগুলো সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে এবং কোনো অধীন বাক্যের উপর নির্ভরশীল হয় না। প্রার্থনা সূচক বাক্যের শেষে বিস্ময়বোধক চিহ্ন (!) বা প্রশ্নবোধক চিহ্ন (?) ব্যবহার করা হয়।

উদাহরণ:

  • ভগবান তোমার মঙ্গল করুন। 
  • মানুষটা যেন দৃষ্টি ফিরে পায়।
  • আজ যেন বৃষ্টি না হয়।

প্রার্থনা সূচক বাক্যের বৈশিষ্ট্য:

  • ঈশ্বরের কাছে কোনো আকাঙ্ক্ষা, অনুরোধ, প্রার্থনা, ইত্যাদি প্রকাশ করে।
  • সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে।
  • কোনো অধীন বাক্যের উপর নির্ভরশীল হয় না।
  • শেষে বিস্ময়বোধক চিহ্ন (!) বা প্রশ্নবোধক চিহ্ন (?) ব্যবহার করা হয়।

প্রার্থনা সূচক বাক্যের প্রকারভেদ:

  • নিবেদনমূলক বাক্য: যেখানে ঈশ্বরের প্রতি নিবেদন করা হয়।
  • ক্ষমা প্রার্থনামূলক বাক্য: যেখানে ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়।
  • সাহায্য প্রার্থনামূলক বাক্য: যেখানে ঈশ্বরের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা হয়।
  • আকাঙ্ক্ষা প্রকাশক বাক্য: যেখানে ঈশ্বরের কাছে কোনো আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করা হয়।

(৫) বিস্ময়বোধক বা আবেগসূচক বাক্য(Exclamatory Sentence): যে বাক্যের দ্বারা মনের আনন্দ, দুঃখ, ভয়, ঘৃণা, ক্রোধ প্রভৃতি আবেগ প্রকাশ করা হয়, তাকে বিস্ময়বোধক বা আবেগসূচক বাক্য বলে। বিস্ময়সূচক বাক্য হল এমন বাক্য যেখানে কোনো আকস্মিক ঘটনা, বিস্ময়, আনন্দ, দুঃখ, ভয়, রাগ, ইত্যাদি প্রকাশ করা হয়। এই বাক্যগুলো সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে এবং কোনো অধীন বাক্যের উপর নির্ভরশীল হয় না।  বিস্ময়সূচক বাক্যের শেষে বিস্ময়বোধক চিহ্ন (!) ব্যবহার করা হয়।

উদাহরণ:

  •  আহা! কী দেখিলাম!
  • হায় রে পোড়া কপাল!
  • বাব্বা! কত উন্নতি করেছ! 
  • হায় হায়! লোকটা অকালেই চলে গেল!

বিস্ময়সূচক বাক্যের বৈশিষ্ট্য:

  • কোনো আকস্মিক ঘটনা, বিস্ময়, আনন্দ, দুঃখ, ভয়, রাগ, ইত্যাদি প্রকাশ করে।
  • সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে।
  • কোনো অধীন বাক্যের উপর নির্ভরশীল হয় না।
  • শেষে বিস্ময়বোধক চিহ্ন (!) ব্যবহার করা হয়।

(৬) কার্যকারণাত্মক বা শর্তসাপেক্ষ বাক্য(Conditional Sentence)- যে বাক্যের দ্বারা কোনো কারণ বা শর্ত প্রকাশ পায়, তাকে কার্যকারণাত্মক বা শর্তসাপেক্ষ বাক্য বলে।

উদাহরণ:

  • যতক্ষন শ্বাস ততক্ষণ আশ।
  • যদি ধোঁয়া দেখো বুঝবে আগুনও আছে। 
  • পড়তে হয়, নাহলে পিছিয়ে পড়তে হয়।
  • যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা।

(৭) সন্দেহবাচক বাক্য বা সংশয়াত্মক বাক্য: যে বাক্যের দ্বারা বক্তার মনের সংশয় ও সন্দেহ প্রকাশিত হয় তাকে সন্দেহ বাচক বাক্য বা সংশয়াত্মক বাক্য বলে।

যেমন:— 

  • মরে গেছে হয়তো।
  • এই বুঝি পা পিছলে পড়ে গেলাম। 
  • সময়ের কাটা যেন থেমে গেছে।
  • বোধহয় ও পারবে।

নির্দেশক বাক্য / বিবৃতিমূলক বা বর্ণনামূলক বাক্য

যে বাক্যে কোন কিছুকে সাধারণ ভাবে বর্ণনা করা হয় , তাকে নির্দেশক বাক্য / বিবৃতিমূলক বাক্য বলে। 

নির্দেশক বাক্য দুই প্রকারের- ক) ইতিবাচক/ হ্যাঁবাচক/অস্ত্যৰ্থক বাক্য খ) নেতিবাচক/না- বাচক/ নঞর্থক বাক্য

ক) ইতিবাচক/হ্যাঁ বাচক/অস্ত্যৰ্থক বাক্য: যে বাক্যে অর্থকে স্বীকৃতি দেওয়া হয় বা স্বীকার করা হয় তাকে ইতিবাচক বাক্য বলে। যেমন- আমি গান গাই।                                                                                              

খ) নেতিবাচক/না-বাচক/ নঞর্থক বাক্য: যে বাক্যে অর্থ 'না' অর্থে প্রকাশ করা হয় তাকে নেতিবাচক বাক্য বলে। যেমন- আমি গান গাই না।

গুণ অনুসারে বাক্য কত প্রকার ও কী কী ? উদাহরণ সহ বিস্তারিত আলোচনা।

উত্তর:—

গুণ অনুসারে বাক্য

একটি সার্থক বাক্যের তিনটি গুণ থাকা আবশ্যক। যথা:—

ক) আকাঙ্ক্ষা

 খ) আসত্তি

গ) যোগ্যতা

নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো—

ক) আকাঙ্খা (Expectancy)

বাক্যের অর্থ পরিষ্কারভাবে বোঝার জন্য এক পদের পর অন্য পদ শলনার যে ইচ্ছা, তাই আকাঙ্ক্ষা। যেমন— 

অশুদ্ধ বাক্য

সকালে বিছানা থেকে উঠেই ………। [বাক্যের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়েছে]

আমি তার বাড়ি ..…..।[বাক্যের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়েছে]

মিথ্যাবাদীকে কেউ .......।[বাক্যের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়েছে]

শুদ্ধ বাক্য 

আমি তার বাড়ি যাবো।[বাক্যের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়েছে]

মিথ্যাবাদীকে কেউ বিশ্বাস করে না।[বাক্যের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়েছে]

সকালে বিছানা থেকে উঠেই আমি মুখ-হাত ধুই ।[বাক্যের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়েছে]


খ) আসত্তি/পদস্থাপন (Proximity)

বাক্যের অর্থসঙ্গতি রক্ষার জন্য সুশৃংখল পদবিন্যাসই আসত্তি। 

অশুদ্ধ বাক্য —

আমরা বিদ্যালয়ে জন্য যাই শেখার লেখাপড়া ।[সঠিকভাবে বিন্যস্ত না হওয়ায় বক্তার মনোভাব স্পষ্ট বোঝা যায় না।]

শিক্ষক - শিক্ষিকাকে দরকার করা সম্মান। [বাক্য নয় — আসত্তি নেই]

স্কুলে আমি খেয়ে যাব ভাত।  [বাক্য নয় — আসত্তি নেই]

শুদ্ধ বাক্য —

আমরা বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেখার জন্য যাই।[ বাক্যটিতে বক্তার মনোভাব সম্পন্নভাবে প্রকাশ পেয়েছে। সুতরাং বাক্যটি আসত্তি সম্পন্ন।

শিক্ষক -শিক্ষিকাকে সম্মান করা দরকার।[ বাক্যটিতে বক্তার মনোভাব সম্পন্নভাবে প্রকাশ পেয়েছে। সুতরাং বাক্যটি আসত্তি সম্পন্ন।

‘আমি ভাত খেয়ে স্কুলে যাব’ [ বাক্যটিতে বক্তার মনোভাব সম্পন্নভাবে প্রকাশ পেয়েছে। সুতরাং বাক্যটি আসত্তি সম্পন্ন।

গ) যোগ্যতা (Propriety)

বাক্যস্থিত পদসমূহের অন্তগত এবং ভাবগত মিলবন্ধনের নাম যোগ্যতা। যেমন –

অশুদ্ধ —

গোরুটি আকাশে উড়ছে। [বাক্য নয়, —গোরুর আকাশে ওড়ার যোগ্যতা নেই।]

বর্ষার রৌদ্র প্লাবনের সৃষ্টি করে। [ বাক্য নয় , —রোদ্র প্লাবনের সৃষ্টি করে না।]

ঝাঁট ঝাঁ রৌদ্রে  আমরা ভিজে গেলাম। বাক্য নয়, — রৌদ্রে ভেজা যায় না।]

শুদ্ধ বাক্য —

পাখিটি আকাশে উড়ছে।[যোগ্যতা সম্পুর্ণ বাক্য]

ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে আমরা ভিজে গেলাম।[যোগ্যতা সম্পুর্ণ বাক্য]

ছোট্ট একটা দুলছে সন্ধ্যার বাতাসে।[যোগ্যতা সম্পুর্ণ বাক্য]


বাক্য রূপান্তর

বাক্যের অর্থ পরিবর্তন না করে বাক্যের প্রকাশভঙ্গি বা গঠনরীতিতে পরিবর্তন করাকেই বাক্য রূপান্তর বলা হয়।

সরল থেকে জটিল বাক্যে রূপান্তর

সরল বাক্যের কোন একটি অংশকে সম্প্রসারিত করে একটি খন্ডবাক্যে রূপান্তরিত

করতে হয় এবং তার খণ্ডবাক্যটির সঙ্গে মূল বাক্যের সংযোগ করতে উপরোক্ত সাপেক্ষ সর্বনাম বা সাপেক্ষ অব্যয়গুলোর কোনটি ব্যবহার করতে হয়। যেমনঃ

সরল বাক্য: ভাল ছেলেরা কম্পিউটারে বসেও ইন্টারনেটে পড়াশুনা করে।

জটিল বাক্য: যারা ভাল ছেলে, তারা কম্পিউটারে বসেও ইন্টারনেটে পড়াশুনা করে।

সরল বাক্য: ভিক্ষুককে ভিক্ষা দাও।

জটিল বাক্য: যে ভিক্ষা চায়, তাকে ভিক্ষা দাও।

সরল বাক্য: পড়া শোনা করলে চিন্তা কী?

জটিল বাক্য: যে পড়া শোনা করে, তার চিন্তা কী?

সরল বাক্য: অন্ধকে আলো দাও।

জটিল বাক্য যে অন্ধ, তাকে আলো দাও।

সরল বাক্য তোমার কথা আজীবন মনে থাকবে।

জটিল বাক্য যতদিন জীবিত থাকব, ততদিন তোমার কথা মনে থাকবে।

জটিল থেকে সরল বাক্যে রূপান্তর

জটিল বাক্যটির অপ্রধান/ আশ্রিত খণ্ডবাক্যটিকে একটি শব্দ বা শব্দাংশে পরিণত করে সরল বাক্যে রূপান্তর করতে হয়। যেমন:—

জটিল বাক্য: যত দিন বেঁচে থাকব, এ কথা মনে রাখব।

সরল বাক্য: আজীবন এ কথা মনে রাখব।

জটিল বাক্য: যদি দোষ স্বীকার কর তাহলে তোমাকে কোন শাস্তি দেব না।

দোষ স্বীকার করলে তোমাকে কোন শাস্তি দেব না।

যাদের বুদ্ধি নেই, তারাই এ কথা বিশ্বাস করবে। 

সরল বাক্য: বুদ্ধিহীনরাই এ কথা বিশ্বাস করবে।

জটিল বাক্য: যদি কথা রাখেন, তাহলে আপনাকে বলতে পারি। 

সরল বাক্য: কথা রাখলে আপনাকে বলতে পারি।

সরল থেকে যৌগিক বাক্যে রূপান্তর

সরল বাক্যের কোন অংশকে সম্প্রসারিত করে একটি পূর্ণ বাক্যে রূপান্তরিত করতে হয় এবং পূর্ণ বাক্যটির সঙ্গে মূল বাক্যের সংযোগ করতে উপরোক্ত অব্যয়গুলো ব্যবহার করতে হবে। যেমনঃ

সরল বাক্য: দোষ স্বীকার করলে তোমাকে কোন শাস্তি দেব না

যৌগিক বাক্য: দোষ স্বীকার কর, তাহলে তোমাকে কোন শাস্তি দেব না। (এক্ষেত্রে ‘তাহলে’ অব্যয়টি ব্যবহার না করলেও চলতো)

সরল বাক্য: আমি বহু কষ্টে শিক্ষা লাভ করেছি।

যৌগিক বাক্য: আমি বহু কষ্ট করেছি এবং/ ফলে শিক্ষা লাভ করেছি।

সরল বাক্য: পরিশ্রম করলে ফল পাবে।

যৌগিক বাক্য: পরিশ্রম করবে এবং ফল পাবে।

সরল বাক্য: মিথ্যা কথা বলে বিপদে পড়েছ।

যৌগিক বাক্য: মিথ্যা কথা বলেছ, তাই বিপদে পড়েছ।

যৌগিক থেকে সরল বাক্যে রূপান্তর

যৌগিক বাক্যে একাধিক সমাপিকা ক্রিয়া থাকে। অন্যদিকে সরল বাক্যে একটিই

সমাপিকা ক্রিয়া থাকে। তাই যৌগিক বাক্যের একটি সমাপিকা ক্রিয়াকে অপরিবর্তিত রেখে বাকিগুলোকে সমাপিকা ক্রিয়ায় পরিণত করতে হবে। যৌগিক বাক্যে একাধিক পূর্ণ বাক্য থাকে এবং তাদের সংযোগ করার জন্য একটি অব্যয় পদ থাকে। সেই অব্যয়টি বাদ দিতে হবে। যেমন:—

যৌগিক বাক্য: তার বয়স হয়েছে, কিন্তু বুদ্ধি হয়নি। (সমাপিকা ক্রিয়া হয়েছে, হয়নি)

সরল বাক্য: তার বয়স হলেও বুদ্ধি হয়নি। (‘ হয়েছে ’ সমাপিকা ক্রিয়াকে ‘ হলেও অসমাপিকা ক্রিয়ায় রূপান্তরিত করা হয়েছে)

যৌগিক বাক্য: মেঘ গর্জন করে, তবে ময়ূর নৃত্য করে। (সমাপিকা ক্রিয়া-করে ও করে)

সরল বাক্য: মেঘ গর্জন করলে ময়ূর নৃত্য করে। (‘ করে ’ সমাপিকা ক্রিয়াকে ‘ করলে ’ অসমাপিকা ক্রিয়ায় রূপান্তরিত করা হয়েছে)

যৌগিক বাক্য: সত্য কথা বলি নি, তাই বিপদে পড়েছি। 

সরল বাক্য: সত্য কথা না বলে বিপদে পড়েছি।

যৌগিক বাক্য: তিনি ধনী ছিলেন কিন্তু সুখী ছিলেন না। 

সরল বাক্য: তিনি ধনী হলেও সুখী ছিলেন না।

জটিল থেকে যৌগিক বাক্যে রূপান্তর

জটিল বাক্যকে যৌগিক বাক্যে রূপান্তর করতে হলে এই খণ্ডবাক্যগুলোর পরস্পর নির্ভরতা মুছে দিয়ে স্বাধীন করে দিতে হবে। এজন্য সাপেক্ষ সর্বনাম বা অব্যয়গুলো তুলে দিয়ে যৌগিক বাক্যে ব্যবহৃত অব্যয়গুলোর মধ্যে উপযুক্ত অব্যয়টি বসাতে হবে। পাশাপাশি ক্রিয়াপদের গঠনের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। যেমন

জটিল বাক্য: যদি সে কাল আসে, তাহলে আমি যাব।

যৌগিক বাক্য: সে কাল আসবে এবং আমি যাব।

জটিল বাক্য: যদিও তাঁর টাকা আছে, তবুও তিনি দান করেন না।

যৌগিক বাক্য: তাঁর টাকা আছে, কিন্তু তিনি দান করেন না।

জটিল বাক্য: যখন বিপদ আসে, তখন দুঃখও আসে। 

যৌগিক বাক্য: বিপদ এবং দুঃখ এক সময়ে আসে।

জটিল বাক্য: সে যেমন কৃপণ তেমন চালাক। 

যৌগিক বাক্য: সে কৃপণ ও চালাক।

যৌগিক থেকে জটিল বাক্যে রূপান্তর

যৌগিক বাক্যে দুইটি পূর্ণ বাক্য কোন অব্যয়ের দ্বারা যুক্ত থাকে। এই অব্যয়টি তুলে দিয়ে সাপেক্ষ সর্বনাম বা অব্যয়ের প্রথমটি প্রথম বাক্যের পূর্বে ও দ্বিতীয়টি দ্বিতীয় বাক্যের পূর্বে বসালেই জটিল বাক্যে রূপান্তরিত হবে। যেমনঃ

যৌগিক বাক্য: দোষ স্বীকার কর, তোমাকে কোন শাস্তি দেব না।

জটিল বাক্য: যদি দোষ স্বীকার কর, তাহলে তোমাকে কোন শাস্তি দেব না।

যৌগিক বাক্য: তিনি অত্যন্ত দরিদ্র কিন্তু তার হৃদয় অত্যন্ত মহৎ।

জটিল বাক্য: যদিও তিনি অত্যন্ত দরিদ্র, তবুও তার হৃদয় অত্যন্ত মহৎ।

যৌগিক বাক্য: এ গ্রামে একটি দরগাহ আছে, সেটি পাঠানযুগে নির্মিত।

জটিল বাক্য: এ গ্রামে যে দরগাহটি আছে, সেটি পাঠানযুগে নির্মিত।

যৌগিক বাক্য: তুমি বেশি নম্বর পেয়েছ সুতরাং তুমি প্রথম হবে।

জটিল বাক্য: যেহেতু তুমি বেশি নম্বর পেয়েছ সেহেতু তুমি প্রথম হবে।

যৌগিক বাক্য: শিশিরের বয়স যথাসময়ে ষোল হইল, কিন্তু সেটা স্বভাবের ষোলো।

জটিল বাক্য: যদিও শিশিরের বয়স ষোলো তথাপি সেটা স্বভাবের ষোল।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ বাক্য রূপান্তর:—

সরল বাক্য: তার বয়স বাড়লেও বুদ্ধি বাড়েনি।

জটিল বাক্য: যদিও তার বয়স বেড়েছে, তথাপি বুদ্ধি বাড়েনি ৷

যৌগিক বাক্য: তার বয়স বেড়েছে কিন্তু বুদ্ধি বাড়েনি।

সরল বাক্য: দরিদ্র হলেও তাঁর অন্তঃকরণ অতিশয় উচ্চ।

জটিল বাক্য: যদিও তিনি অত্যন্ত দরিদ্র, তথাপি তাঁর অন্তঃকরণ অতিশয় উচ্চ।

যৌগিক বাক্য: তিনি অত্যন্ত দরিদ্র, কিন্তু তাঁর অন্তঃকরণ অতিশয় উচ্চ।

সরল বাক্য: দোষ স্বীকার করলে তোমাকে কোনো শাস্তি দেব না।

জটিল বাক্য: যদি দোষ স্বীকার কর, তাহলে তোমাকে কোনো শাস্তি দেব না।

যৌগিক বাক্য: দোষ স্বীকার কর, তবে তোমাকে কোনো শাস্তি দেব না।

সরল বাক্য: কাল সে আসলে আমি যাব।

জটিল বাক্য: যদি সে কাল আসে, তাহলে আমি যাব।

যৌগিক বাক্য: সে কাল আসবে এবং আমি যাব।

সরল বাক্য: মেঘ গর্জন করলে ময়ূর নৃত্য করে।

জটিল বাক্য: যদি মেঘ গর্জন করে, তাহলে ময়ূর নৃত্য করে।

যৌগিক বাক্য; মেঘ গর্জন করে, তবে ময়ূর নৃত্য করে।

সরল বাক্য: মিথ্য কথা বলার জন্য তোমার পাপ হবে।

জটিল বাক্য: যেহেতু তুমি মিথ্যা বলেছ, সেহেতু তোমার পাপ হবে।

যৌগিক বাক্য: তুমি মিথ্যা বলেছ, সুতরাং তোমার পাপ হবে।

সরল বাক্য: সত্য কথা না বলে বিপদে পড়েছি।

জটিল বাক্য: যেহেতু আমি সত্য কথা বলিনি, সেহেতু আমি বিপদে পড়েছি।

যৌগিক বাক্য: সত্য কথা বলিনি, তাই বিপদে পড়েছি।

সরল বাক্য: সে পরিশ্রমী হলেও নির্বোধ।

জটিল বাক্য: যদিও সে পরিশ্রমী তথাপি নির্বোধ।

যৌগিক বাক্য: সে পরিশ্রমী বটে, কিন্তু নির্বোধ।

সরল বাক্য: পড়াশুনা করলে জীবনে উন্নতি করতে পারবে।

জটিল বাক্য: যদি পড়াশুনা কর, তাহলে জীবনে উন্নতি করতে পারবে।



ধন্যবাদ 

Tuesday

দেশী শব্দ | Deshi Sobdo | Bangla Sobdo Bhandar | বাংলা শব্দ ভান্ডার

April 08, 2025 0

দেশী শব্দ 

বঙ্গদেশে আর্যজাতির প্রভাব পড়বার অনেক আগে থেকে কোল (অস্ট্রিক), দ্রাবিড় প্রভৃতি অনার্যজাতির মানুষ এখানে বসবাস করে আসছে। তাদের ভাষার কিছু কিছু শব্দও বাংলা ভাষায় এসেছে। এইসব শব্দকে দেশী শব্দ বলা হয়।

দেশী শব্দ: বঙ্গদেশের প্রাচীনতম অধিবাসী কোল, ভিল প্রভৃতি অনার্যজাতির ভাষা থেকে প্রতমূল বা অজ্ঞাতমূল যে-সমস্ত শব্দ বাংলা ভাষায় এসেছে, সেগুলিকে দেশী শব্দ বলে। দেশী শব্দের উদাহরণ:— অঢেল, কাঁচুমাচু, খোকা, খুকি, গাড়ি, গোড়া, ঘাড়, ঘোড়া, চাল, চাঙ্গা, চিড়, চিংড়ি, চেঁচামেচি, ছানা, ঝাঁকা, কাঁটা, ঝিঙে, কুলি, ঝানু, ঝোল, টের, টোল, ডগমগ, ডাহা, ডাগর, ডাক, ডাব, ডোবা, ডাঁটো, ডাঁসা, ডিঙি, টেকি, ঢেউ, ঢিল, ঢল, ঢাল, ঢোল, তেঁতুল, দরমা, থোড়, নাদা, পাঁঠা, বাদুড়, বাবা, বিটকেল, ভিড়, মুড়ি। দেশী শব্দের প্রচলন প্রবচনে ও চলিত ভাষায় নিরঙ্কুশ।


বিদেশি শব্দ | Bideshi Sobdo | Bangla Sobdo Bhandar | বাংলা শব্দ ভান্ডার

April 08, 2025 0


বিদেশি শব্দ 

বিদেশী শব্দ: ভারতবর্ষের বাইরের দেশ থেকে অথবা ভারতবর্ষের অন্যান্য প্রদেশ থেকে যে-সকল শব্দ স্ব-রূপে বা কিঞ্চিৎ পরিবর্তিত রূপে বাংলা ভাষায় এসেছে, সেগুলিকে বিদেশী শব্দ বলে। আগন্তুক শব্দগুলির মধ্যে বহির্ভারতীয় ইংরেজি, আরবি, ফারসি ও পর্তুগিজ শব্দই সংখ্যায় বেশি; আর, অন্তর্ভারতীয় প্রতিবেশী শব্দাবলীর মধ্যে হিন্দির আধিকাই উল্লেখনীয়।

ত্রয়োদশ শতকের প্রথমদিকে বঙ্গদেশ তুর্কি-কবলিত হওয়ার পর থেকে ফারসি শব্দ বাংলা ভাষায় প্রবেশলাভকরতে থাকে। বঙ্গদেশ আকবরের শাসনে আসবার পর থেকে বাংলায় ফারসি শব্দের ব্যাপক অনুপ্রবেশ ঘটল। মঙ্গলকাব্যগুলিতে, এমনকি ভারতচন্দ্র ও রামপ্রসাদেও ফারসির ভূরি ভূরি উদাহরণ আছে। ফারসির দৌলতে অসংখ্য আরবি শব্দও বাংলা ভাষায় এসে পড়ল। ষোড়শ শতাব্দী থেকে এদেশে বাণিজ্যরত পর্তুগিজ ফিরিঙ্গিদেরও বহু শব্দ বাংলায় এসেছে। আবার, দীর্ঘদিন ইংরেজ-শাসনাধীনে থাকার ফলে বহু ইংরেজি শব্দ স্ব-রূপে বা ঈষৎ বিকৃতরূপে আমাদের মাতৃভাষার ভাণ্ডারে প্রবেশলাভ করে বাংলাকে পরিপুষ্ট করে তুলেছে এবং এখনও তুলছে। বাংলা ভাষা আপন স্বীকরণক্ষমতার বলে এইসমস্ত বিদেশী শব্দকে এমন আশ্চর্যজনকভাবে আপন করে নিয়েছে যে, এরা যে আদৌ বিদেশী, বেশ সচেতন না হওয়া পর্যন্ত সেটা বুঝতেই পারা যায় না। অতি-পরিচিত বিদেশী শব্দগুলির একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা দেওয়া হল—

  • আরবি:— আকছার, আক্কেল, আজব, আতর, আদব, আদায়, আদালত, আমলা, আমানত, আমির, আয়েশ, আলবত, আলাদা, আল্লা, আসবাব, আসর, আসল, আসামি, আস্তাবল, আহাম্মক, ইজারা, ইজ্জত, ইমান, ইমারত, ইশারা, ইসলাম, ইস্তফা, ইহুদি, ইদ, উকিল, উজির, এখতিয়ার, এজলাস, এলাকা, ওকালতি, ওজন, ওমরাহ, ওরফে, কড়ার, কদম, কদর, কবজা, কলপ, কলম, কসরত, কসাই, কসুর, কাজী, কানুন, কামিজ, কায়দা, কায়েম, কালিয়া, কাহিল, কুলুপ, কেতা (কায়দা), কেল্লা, কৈফিয়ত, খতম, খবর, খসড়া, খাজনা, খাতির, খারাপ, খারিজ, খালাস, খালাসি, খালি, খাস, খাসা, খাসি, খুন, খেয়াল, খেলাপ, খেসারত, খোলসা, গজল, গরজ, গরমিল, গরিব, গলদ, গাফিলতি, গোলাম, ছবি, জবাব, জব্দ, জমা, জমায়ত, জলদি, জলসা, জলুস, জল্লাদ, জহর, জহরত, জাফরান, জামিন, জারি, জালিয়াতি, জাহাজ, জিনিস, জিম্মা, জুলুম, জেরা, জেলা, তছরুপ, তদারক, তফাত, তবলা, তলব, তল্লাশ, তাগাদা, তাজ্জব, তামাশা, তারিখ, তালাক, তালিকা, তালিম, তাস, তুফান, তুলকালাম, তোফা, তোয়াক্কা, তোয়াজ, দখল, দপ্তর, দফা, দলিল, দাখিল, দুনিয়া, দোয়াত, দৌলত, নকশা, নগদ, নবাব, নাগাদ, নাজেহাল, নায়েব, নেশা, ফকির, ফতুয়া, ফতুর, ফয়সালা, ফসল, ফানুস, ফারাক, ফি, ফিরিস্তি, ফুরসত, ফেরার, ফোয়ারা, ফৌজ, বদল, বহাল, বাজে, বাতিল, বাদ, বিদায়, বিলকুল, বিলাত বিলায়ৎ, বিসমিল্লা, মকদ্দমা, মক্কেল, মজবুত, মজলিশ, মজুত, মঞ্জুর, মনিব, মফস্বল,মশগুল, মসজিদ, মসনদ, মশলা, মহকুমা, মহরম, মহল, মানে, মাফ, মারফত, মালিক, মালুম, মাশুল, মিছরি, মিছিল, মুনশি, মুনাফা, মুরুবিব, মুলুক, মুশকিল, মুসলিম, মুসাফির, মেজাজ, মেরামত, মোকাবিলা, মোক্তার, মোক্ষম, মোতায়েন, মোলায়েম, মৌরসি, রকম, রাজী, রায়, রেওয়াজ, শখ, শরবত, শরবতি, শর্ত, শহিদ, শামিল, শুরু, শৌখিন, সদর, সফর, সহিস, সাফ, সাবেক, সাহেব, সেলাম, হক, হজম, হজরত, হদিশ, হয়রান, হলফ, হাওয়া, হাকিম, হাজত, হাজির, হামলা, হাল, হালুইকর, হালুয়া, হিম্মত, হিসাব, হুকুম, হজুর, হেপাজত। 
  • ফারসি:—অজুহাত, অন্দর, আইন, আওয়াজ, আঙুল, আন্দাজ, আপশোস, আবরু, আবহাওয়া, আবাদ, আমদানি, আমেজ, আয়না, আরাম, আশরফি, আশমান, আস্তানা, আস্তে, ইরান, ইসবগুল, ওস্তাদ, কম, কাগজ, কামাই, কামান, কারখানা, কারবার, কারিগর, কিনারা, কিশমিশ, কুস্তি, কোমর, খঞ্জর, খরগোশ, খরচ, খরিদ, থাকি, খানসামা, খাম, খুব, খুশি, খোরাক, খোশামোদ, গজ, গরম, গর্দান, গুজরান, গুম, গুল (ফুল), গোমস্তা, গোয়েন্দা, গোলাপ, গ্রেফতার, চরকা, চরকি, চশমা, চাকর, চাকরি, চাকরান, চাদর, চাঁদা, চাবুক, চালাক, চেহারা, জখম, জমি, জরি, জাদু, ও নোয়ার, জামা, জোয়ান, জোর, তরকারি, তরমুজ, তাজা, তীর (শর), তীরন্দাজ, তৈয়ার, দরকার, দরখাস্ত, দরজা, দরদ, দরবার, দরবেশ, দরাজ, দরুন, দস্তখত, দস্তানা, দহরম, দাগ, দান, দাবি, দামামা, দারোয়ান, দালান, দিলখোশ, দিস্তা, দূরবিন, দেওয়াল, দেরি, দোকান, দোস্ত, নমাজ, নমুনা, নরম, নাচার, নাবালক, নামজাদা, নালিশ, নাশপাতি, নাস্তানাবুদ, নিমক, নিমকি, নিশান, পছন্দ, পয়গম্বর, পরদা, পরগনা, পরী, পরোয়া, পরদা, পলক, পশম, পাঁজা, পাজি, পায়জামা (পাজামা), পায়রা, পালোয়ান, পেয়াদা, পেয়ালা, পেশা, পেস্তা, পোক্ত, পোলাও, পোশাক, পোস্তা, ফরমান, ফরমাশ, ফরিয়াদি বকশিশ, বজায়, বজ্জাত, বদ, বদন (শরীর: গুলবদন-পুষ্পতনু), বনিয়াদ, বন্দর, বন্দুক, বরখাস্ত, বরদাস্ত, বরফ, বরাদ্দ, বরাবর, বস্তা, বাগ, বাগিচা, বাজার, বাজি, বাজিকর, বাদশাহ্, বাদাম, বারান্দা, বাহাল, বিমা, বেকার, বেচারা, বেদম, বেদানা, বেপরোয়া, বেবন্দোবস্ত, বেশ, বেশরম, বেশি, বেংশ, মগজ, মজুমদার, মজুর, ময়দা, ময়দান, মরিচা, মালাই, মালিশ, মাহিনা, মিহি, মেথর, মোজা, মোম, মোরগ, মোহর, রঙ্গিন, রপ্তানি, রসদ, রসিদ, রাস্তা, রুমাল, রেশম, রোজ, রোজগার, লাগাম, লাশ, লেফাফা, শরম, শরিক, শহর, শামিয়ানা, শাল, শালগম, শিকার, শিরনি, শিশি, শের (বাঘ, সিংহ), শোরগোল, সওদাগর, সফেদা, সবজি, সবুজ, সরকার, সরগরম, সরজমিন, সরঞ্জাম, সরাসরি, সরোদ, সর্দি, সাজা, সাদা, সানাই, সাল, সিপাহি, সুদ, সুপারিশ, সে (তিন), সেতার, সেরা, সেরেস্তা, হপ্তা, হরদম, হাঙ্গামা, হাজার, হামেশা, হিন্দু, হিন্দি, হিন্দু, হুঁশ, হুঁশিয়ার, হেস্তনেস্ত।
  • আরবি-ফারসির মিশ্রণ:— আদমশুমার, ওকালতনামা, কুচকাওয়াজ, কেতাদুরস্ত, কোহিনুর, খবরদার, খয়েরখী, খামখেয়াল, জমাদার, জরিমানা, ত-খরচ, না-মঞ্জুর, না-রাজ, নেক-নজর, পিলসুজ, পোদ্দার, বকলম, বরকন্দাজ, বেআইন, বেআক্কেল, বেআদব, বেইজ্জত, বেইমান, বে-এক্তিয়ার, বে-ওজর, বে-ওয়ারিশ, বেকসুর, বেকায়দা, বেকুফ, বেজায়, বেদখল, বেমালুম, বেহদ্দ, বেহায়া, বেহিসাবী, হকদার, হুঁকাবরদার [আরবি-ফারসি শব্দে প্রায় সর্বত্রই ত, কচিৎ ৎ (ত)-লক্ষ্য করো।
  • তুর্কি:— কলকা, কাঁচি, কানাত, কাবু কুলি, কোর্মা, ক্রোক, খাঁ, চকমকি, চিক, তকমা, তোপ, দারোগা, বকশি, বাবুর্চি, বারুদ, বোঁচকা, কুঁচকি, বেগম, মুচলেকা।
  • শিক্ষা-সংস্কৃতি-ধর্ম, সভ্যতা-ব্যবসায়বাণিজ্য-শিল্পকলা, শাসনকার্য-রাজস্ব-আইন-আদালত প্রভৃতি বিবিধ বিষয়-সংক্রান্ত এইসব আরবি-ফারসি-তুর্কি শব্দ আমাদের জীবনের সঙ্গে কেমন ওতপ্রোতভাবে মিশে গেছে, লক্ষ্য করো।
  • ইংরেজি (মূল ইংরেজি শব্দ, এবং ইংরেজি নয় অথচ ইংরেজির সূত্রে আসা অন্য বিদেশী শব্দও): —অক্সিজেন, আপিস, আপেল, আরদালি (<orderly), আর্ট, আস্তাবল (stable), ইঞ্জিন, উল, এজেন্ট, কংগ্রেস, কনসার্ট, কনস্টেবল, কফি, কমা, করগেট, কর্ক, কাপ্তেন (<captain), কার্নিস, কার্পেট, কুইনিন, কুইন্টাল, কেক, কেটলি, কেরোসিন, কেস, কোকেন, কোম্পানি, কৌচ, কৌসিলী (<council), ক্যাম্বিস (<canvas), ক্যামেরা, খ্রিশ্চান (<Christian), ক্লাব, ক্লাস, গারদ (<guard), গার্জেন (<guardian), গেজেট, গেঞ্জি, গেট, গেলাস (<glass), চিমনি, চান্স, চেক, চেন, চেআর, জাঁদরেল (<general), জিরাফ, জুবিলি, জেব্রা, জেটি, জেল, জেলি, জ্যাকেট, টাইপ, টাইম, টিকিট, টিন, টিফিন, টেবিল (table), টেলিগ্রাম, টেলিফোন, ট্যাক্সি, ট্রাম, ট্রেন, ডক, ডজন, ডবল, ডাক্তার (<doctor), ডিপো (<depot), ডেপুটি, ড্রাম, ড্রেন, তোরঙ্গ (<trunk). থিয়েটার, নম্বর, নোটিস, পকেট, পাউডার, পানসি (<pinnace), পার্লামেন্ট, পার্সেল, পালিশ, পিয়ন, পিয়ানো, পুলিস, পেট্রল, পেন, পেনশন, পেনসিল, ফিট, ফোটোগ্রাফ, ফ্যাশন, ফ্রক, ফ্রেম, ফ্ল্যাট, বাক্স (<box), বারিক (<barrack), বার্লি, বিস্কুট, বুরুশ (<brush), বোনাস, মাইল, মার্কিন, মোটর, ম্যানেজার, রাবিশ, রিহার্সাল, রেস, লিলি, লেমোনেড, সনেট, সার্কাস, সার্জ, সার্জন, সিগন্যাল, সিল, সেমিকোলন, মো. প্লেট, স্নো, হাইকোর্ট, ছইল, হুক, হোমিওপ্যাথি।
  • পর্তুগিজ:— আচার, আতা, আনারস, নোনা (এনোনা), আয়া, আলকাতরা, আলপিন, আলমারি, ইস্তিরি, ইস্পাত, কপি, কামরা, কেদারা, খানা (ডোবা), গরাদ, গামলা (<gambella), গির্জা, গুদাম, চাবি, জানালা, টোকা (পাতার তৈরি ছাতা), তামাক, তোয়ালে, নিলাম, পাঁউরুটি, পাদরি, পিপা, পিস্তল, পেঁপে, পেয়ারা, পেরেক (<prego), ফরাসি, ফিতা, ফিরিঙ্গি, বয়া, বরগা (<verga), বালতি, বেহালা, বোমা (<bomba), মাইরি (<Maria), মার্কা, মাজুল (<mastro), মিস্ত্রি, যীশু, সান্তারা (<cintra-কমলালেবু), সাবান, সায়া।
অন্যান্য বিদেশী শব্দ-ফরাসি——
  • ওলন্দাজ:— কার্তুজ, কুপন, রেনেসাঁস, রেস্তরা। 
  • জার্মান: ওলকপি (ইতালীয় থেকে নেওয়া), নাৎসী (Nazi), কিন্ডারগার্টেন। 
  • স্পেনীয়:— ডেঙ্গু (dengue)। 
  • ওলন্দাজি: ইশকাপন, তুরুপ, রুইতন, হরতন। 
  • গ্রীক:  কেন্দ্র (<kentron শব্দটি গ্রীক থেকে সংস্কৃতে আসে), দাম (<drakhme), সুরঙ্গ (<syringx)। রাশিয়ান: ভডকা, বলশেভিক, স্পুটনিক। 
  • জাপানি: ইকেবানা, জুজুৎসু, টাইফুন, রিক্সা, হারাকিরি, হাসুনোহানা। 
  • চীনা:  চা, লিচু ,চিনি। 
  • মালয়ী: কাকাতুয়া। 
  • সিংহলি: বেরিবেরি।
  •  বর্মী:  লুঙ্গী। 
  • অস্ট্রেলেশীয় : ক্যাঙ্গারু।
NEXT PART COMMING SOON 


Monday

প্রবন্ধ রচনা | নির্মিতি

February 24, 2025 0


প্রবন্ধ রচনা


  • প্রবন্ধ রচনার কিছু কথা: 

এতদিন তোমরা অনুচ্ছেদ রচনার মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে তোমাদের মনের ভাব প্রকাশ করেছ। এবারে সেই বিষয়গুলিকে আরও বিস্ততভাবে প্রকাশ করার জন্য 'প্রবন্ধ' কথাটির সঙ্গে তোমাদের পরিচিত হতে হবে। প্রবন্ধ কথাটির অর্থ হল প্রকৃষ্টরূপে বন্ধনজাত কেনা। অতএব তোমার লেখার মধ্যে একটি সুন্দর পরম্পরা থাকবে, যাকে বলা হয় বন্ধন। প্রবন্ধ লিখতে হলে ভাবনার গভীরতা প্রয়োজন। তাই বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত লেখকদের লেখাগুলি পাঠ করবে।

  • প্রবন্ধ রচনার কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের দিকে লক্ষ রাখবে—

(ক) প্রবন্ধ রচনার আগে বিষয়টিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে নিয়ে লিখতে হয় একাধিক অনুচ্ছেদে। তাই প্রত্যেক ভাগকে প্রথমেই লিখে নেবে, যাকে বলা হয় সংকেত-সূত্র।

(খ) সংকেত-সূত্রগুলি পরপর রচিত হবে, যাতে বিষয়টি খাপছাড়া না হয়ে যায়।

(গ) ভূমিকা, বর্ণনা বা মূল বিষয়, উপসংহার প্রভৃতির মাধ্যমে বক্তব্য বিস্তৃত হবে।

(ঘ) প্রবন্ধের ভাষা হবে সাবলীল, চলিতভাষাতেই লেখা তোমাদের পক্ষে উপযোগী। সাধু ও চলিত যেন মিশে না যায়।

(ঙ) একই কথার পুনরাবৃত্তি ভাষাকে দুর্বল করে, তাই একই কথা দুবার ব্যবহার করবে না।

(চ) তোমার রচনার মধ্যে বিখ্যাত কোনও উদ্ধৃতি ব্যবহার করা যেতে পারে।

(ছ) যতদূর সম্ভব নিজের বক্তব্য প্রকাশ করবে।

.............................................................................

বাংলার উৎসব


ভূমিকা: উৎসব মানবজীবনের একান্ত অপরিহার্য অঙ্গ। কর্মব্যস্ত এই পৃথিবীতে নানা প্রকারের উৎসব মানুষের দুঃখ, ক্লান্তি, হতাশা দূর করে নতুন জীবন দান করে। আমরা বাঙালি। আমাদের এই বাংলার বুকেও অনুষ্ঠিত হয় বহু উৎসব। মানুষে মানুষের মিলনের সেতুরূপ ওই উৎসবগুলি আমাদের পরম কাঙ্ক্ষিত।


বিভিন্ন উৎসব: আমাদের উৎসবগুলি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এরমধ্যে কয়েকটি উৎসব সামাজিক উৎসবের আখ্যা লাভ করেছে। যেমন-নববর্ষ, নবান্ন প্রভৃতি। কয়েকটি উৎসব আবার ধর্মীয় কারণে অনুষ্ঠিত হয়। যেমন-দুর্গাপূজা, লক্ষ্মীপূজা, সরস্বতীপূজা, রথযাত্রা, ইদুজ্জোহা, মহরম, সবেবরাত, বড়োদিন প্রভৃতি। এ ছাড়াও কয়েকটি উৎসব জাতীয় উৎসবের মর্যদা লাভ করেছে, যেমন-স্বাধীনতা দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবস, নেতাজিজয়ন্তী, রবীন্দ্রজয়ন্তী প্রভৃতি।


উৎসবের সামাজিক দিক: সামাজিক, ধর্মীয় বা জাতীয় যে উৎসবই হোক না কেন তাকে কেন্দ্র করে আপামর বাঙালি বাঁধনহারা আনন্দে মেতে ওঠে। স্ত্রী-পুরুষ, নবীন-প্রবীণ সকলেই উৎসবের দিনে মানুষের শত্রুতা দূর করে মৈত্রী স্থাপনের সুযোগ করে দেয়। উৎসবকে দৈনন্দিন জীবনের গতানুগতিকতা থেকে মুক্তি লাভ করেন। উৎসব কেন্দ্র করে বহু মানুষের জীবিকানির্বাহ হয়। যেমন উৎসব উপলক্ষ্যে মেলায় মানুষের প্রয়োজনীয় জিনিস বিক্রি করে, মণ্ডপ নির্মাণ করে, আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করে বহু মানুষের অর্থাগম হয়। উৎসব আমাদের দেশের প্রাচীন সংস্কৃতি সম্পর্কে বর্তমান কালের মানুষদের শ্রদ্ধাশীল করে। ঐতিহ্যের প্রতি আকৃষ্ট করে। উৎসব মনের সংকীর্ণতা দূর করে মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ককে সুদৃঢ় করে।


উপসংহার: বাংলার উৎসব বাঙালি সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র। বাঙালির উচ্ছ্বাস, ভক্তি, ভালোবাসা, নানা ধরনের উৎসবের মধ্যে দিয়ে নব নব রূপে প্রবাহিত হয়ে চলেছে। উৎসব বাঙালির জীবনপ্রবাহকে আরও রুচিশীল ও সমৃদ্ধ করুক এটাই প্রার্থনা।


.................................................................................


ছাত্রজীবন


  • ভূমিকা: মানুষ যতদিন বাঁচে ততদিনই শেখে। তাই স সারাজীবনই সে শিক্ষার্থী। । কিন্তু ছাত্র কথাটির অর্থ গুরুর মাথায় ছত্র বা ছাতা ধরে যে। অর্থাৎ ছাত্রজীবন গুরুর কাছ থেকে শিক্ষাগ্রহণের একটি নির্ধারিত সময়। তাই সাধারণত ছাত্রজীবন বলতে শৈশব, কৈশোর এবং তরুণ বয়সকে বোঝানো হয়।
  • ছাত্রজীবনের উদ্দেশ্য : ছাত্রজীবন জীবনের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ছাত্রাবস্থায় মানুষ এই বিশ্বপ্রকৃতি বাসমাজের সঙ্গে পরিচিত হয়। জীবনের ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, শুভ-অশুভের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ ঘটে। প্রকৃতির অপার রহস্যের দুয়ার তার সামনে উন্মুক্ত হয়। তাই ছাত্রজীবনে পাঠাভ্যাসই হল প্রধান কর্তব্য। শরীরচর্চাও ছাত্রজীবনের অবশ্য পালনীয় কর্তব্য। পুরাকালে ছাত্ররা গুরুগৃহে বাস করে শিক্ষালাভ করত। সেখানেই বিভিন্ন বিষয়ে পঠনপাঠনের সঙ্গে তারা লাঠিখেলা, প্রাণায়াম প্রভৃতি অভ্যাস করত এবং গুরুর সেবা করত। এইভাবে একদিন শিক্ষা সমাপনান্তে তারা স্বাবলম্বী হত।

  • মানব জীবন ও ছাত্রজীবন: আজকের ছাত্র ভবিষ্যতের পূর্ণমানুষ। তাই ছাত্রজীবন থেকেই চরিত্র গঠনের প্রতি - মনোনিবেশ করা উচিত। বয়সোচিত কারণে ছাত্ররা অবুঝ ও অভিমানী হয়। বড়োদের ছাত্রজীবন ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। ছাত্ররা ছোটোবেলা থেকেই সদগুণ অভ্যাস করলে তাদের ভবিষ্যৎ জীবন সুখকর হয়। ছাত্রজীবন মানবজীবনেরই এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। ভবিষ্যতের সুনাগরিকের কর্তব্যবোধ ছাত্রবয়সেই অনুশীলন করা উচিত। এ বিষয়ে শিক্ষক ও অভিভাবকদের দায়িত্ব কম নয়। সমাজের প্রতি দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা প্রতিটি নাগরিকের অবশ্য কর্তব্য। ছাত্রবয়স শ্রেণিকক্ষের চারদেয়ালের মধ্যে শুধু নয় এই বিরাট সমাজ থেকে সেই কর্তব্য আহরণ করে।
  • বর্তমানে ছাত্রজীবনের সুখ-দুঃখ:  যুগ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থারও পরিবর্তন ঘটেছে। বর্তমান যুগে গুরুগৃহের স্থান নিয়েছে বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়। এখন ছাত্রজীবন অনেক বেশি পরীক্ষানির্ভর হয়ে উঠেছে। যদিও পাঠক্রমে খেলাধুলা বা শরীরচর্চাকে আজও গুরুত্ব দেওয়া হয়, তবু তাও সময়ে সময়ে হয়ে ওঠে 'নম্বর পাওয়ার উপায় মাত্র'। তবে সব জিনিসেরই ভালোমন্দ আছে। আজকে শিক্ষাব্যবস্থা অনেক বেশি বিজ্ঞানসম্মত বলে ছাত্রছাত্রীরা অল্প সময়ের মধ্যেই কোনও বিষয়ে অধিক অভিজ্ঞতা অর্জন করছে। আজকের দিনে ছাত্রছাত্রীরা মনোযোগী এবং পরিশ্রমী হলে তার জন্য উচ্চশিক্ষার সুযোগ অনেক বেশি। তাই ছাত্রজীবন আজ আর জীবনের একটা অধ্যায়মাত্র নয়, সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

  • উপসংহার : ছাত্রজীবনের স্মৃতি ভবিষ্যৎ জীবনের এক সম্পদ। মানুষ যত বয়োপ্রাপ্ত হয় ততই শৈশব ও কৈশোরের অর্থাৎ ছাত্রজীবনের সুখদুঃখ মিশ্রিত স্মৃতি তার মনে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।


NEXT COMING SOON.................


Saturday

ক্রিয়াপদ I KRIYAPAD I BENGALI VERB

January 04, 2025 0

 ক্রিয়াপদ


ধাতুর প্রয়োগগত রূপ হল ক্রিয়া অর্থাৎ ধাতুর সঙ্গে ক্রিয়াবিভক্তি যুক্ত হয়ে যে পদ গঠিত হয়, তাকে বলে ক্রিয়াপদ। ক্রিয়াপদের দ্বারা কোনো কাজ করা অথবা হওয়া বোঝায়।

ক্রিয়াপদের উদাহরণ-- খেল্ + ইবে=খেলিবে, কর্+ই =করি, উঠ + এ = উঠে, বিস + এ = বসে ইত্যাদি।

ক্রিয়াপদের শ্রেণিবিভাগ বা রূপবৈচিত্র্য

ক্রিয়ার গঠনগত, অবস্থানগত, অন্বয়গত ও ক্রিয়া-বিভক্তি অনুযায়ী ক্রিয়াপদের নানা রূপভেদ দেখা যায়।

  • ক্রিয়ার গঠনগত শ্রেণিবিভাগ


১। মৌলিক ক্রিয়া: মৌলিক ধাতুর সঙ্গে ক্রিয়া-বিভক্তি যুক্ত হয়ে যে ক্রিয়াপদ গঠিত হয়, তাকে মৌলিক ক্রিয়া বলে। যেমন-রাম বই পড়ে (পড়+ এ = পড়ে), করিম বাড়ি চলিল (চল্ + ইল = চলিল)।

২। সাধিত ক্রিয়া: সাধিত ধাতুর সঙ্গে ক্রিয়া-বিভক্তি যুক্ত হয়ে সাধিত ক্রিয়া গঠিত হয়। এই ক্রিয়া তিন প্রকার-প্রযোজক ক্রিয়া, নামধাতুজ ক্রিয়া এবং ধ্বন্যাত্মক ক্রিয়া।

(ক) প্রযোজক ক্রিয়া: প্রযোজক ধাতুর সঙ্গে ক্রিয়া বিভক্তি যুক্ত হয়ে প্রযোজক ক্রিয়া গঠিত হয়। যেমন-নাচায় পুতুল দক্ষ বাজিকরে (√নাচ্ + আ = নাচায় নাচায়), সে গোরুকে ঘাস খাওয়াইল (√খা + ওয়া খাওয়া ইল খাওয়াইল)।

(খ) নামধাতুজ ক্রিয়া: নামধাতুর সঙ্গে ক্রিয়া-বিভক্তি যোগে নামধাতুজ ক্রিয়া গঠিত হয়। যেমন-আমার ঘড়িটি কে হাতাইয়াছে? (√ হাতা + ইয়াছে = হাতাইয়াছে), কালো মেঘের বুকে বিদ্যুৎ চমকায় (√চমকায় চমকায়)।

(গ) ধ্বন্যাত্মক ক্রিয়া: ধ্বন্যাত্মক ধাতুর সঙ্গে ক্রিয়া-বিভক্তি যুক্ত হয়ে যে ক্রিয়াপদ গঠিত হয়, তাকে ধ্বন্যাত্মক ক্রিয়া বলে। যেমন-আসছে কারা হনহনিয়ে (হনহন ইয়ে হনহনিয়ে), ভনভনিয়ে ইত্যাদি।

৩। সংযোগমূলক ক্রিয়া: বিশেষ্য, বিশেষণ ও অব্যয়ের সঙ্গে মৌলিক ধাতুসহযোগে সংযোগমূলক ধাতু গঠিত হয়। আর সংযোগমূলক ধাতুর পরে ক্রিয়া-বিভক্তি যুক্ত হয়ে যে ক্রিয়াপদ গঠিত হয় সেই ক্রিয়া যদি একটিমাত্র অর্থ প্রকাশ করে, তবে তাকে সংযোগমূলক ক্রিয়া বলে। যেমন-বরখাস্ত করিলেন (কির ইলেন) শোনো, আমাকে বধ করো (কর্ + অ), হেঁটে চলো (হেঁটে চল্ ও হেঁটে চলো)।

সংযোগমূলক ক্রিয়া দু-প্রকার-(ক) যুক্ত ক্রিয়া (খ) যৌগিক ক্রিয়া।

(ক) যুক্ত ক্রিয়া: যুক্ত ধাতুর পরে ক্রিয়া-বিভক্তি যুক্ত হয়ে যে ক্রিয়া গঠিত হয়, তাকে যুক্ত ক্রিয়া বলে। যেমন-সেলাম করা (কর্ + আ = করা) ছাপ মারা (মার্ + আ = মারা), ছড়া কাটা (কাট্ আ= কাটা)।

(খ) যৌগিক ক্রিয়া: অসমাপিকা ক্রিয়ার সঙ্গে অন্য ধাতুনিষ্পন্ন সমাপিকা ক্রিয়া যুক্ত হয়ে বিশিষ্ট অর্থ প্রকাশক ক্রিয়াপদ গঠন করলে তাকে যৌগিক ক্রিয়া বা মিশ্র ক্রিয়া বলে। যেমন-ছেলেটি বই পড়িতে লাগিল, এতে 'পড়িতে (পড়ু ইতে) অসমাপিকা ক্রিয়া, 'লাগিল' (√লাগ্‌ + ইল) সমাপিকা ক্রিয়া। অনুরূপ-বসিয়া পড়িল, হাসিতে লাগিল, জাগিয়া রহিল, কাটিয়া ফেলিল, নামিয়া গিয়াছে ইত্যাদি।

  • অবস্থানগত শ্রেণিবিভাগ 

১। সমাপিকা ক্রিয়া: যে ক্রিয়া ব্যবহার করলে বাক্যের গঠন ও অর্থ পূর্ণতা লাভ করে। আর কিছু বলার আকাঙ্ক্ষা থাকে না, তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে। সমাপিকা ক্রিয়ার প্রধান দুটি বৈশিষ্ট্য আছে-

(ক) অর্থের বিচারে সমাপিকা ক্রিয়া বক্তব্যের সমাপ্তিসূচক।

(খ) গঠনগত দিক থেকে বিচার করলে দেখা যাবে সমাপিকা ক্রিয়া বাক্যের শেষে বসে।

ধাতুর সঙ্গে নানা প্রত্যয় ও বিভক্তি যুক্ত হয়ে সমাপিকা ক্রিয়া গঠিত হয়। যেমন-প্রকার বিভক্তি, কাল বিভক্তি, পুরুষ বিভক্তি ও ভাব বিভক্তি। যেমন-


* সমাপিকা ক্রিয়া বাক্যের বিধেয় অংশের ক্রিয়া, তাই একে বিধেয় ক্রিয়াও বলা হয়।

২। অসমাপিকা ক্রিয়া: যে ক্রিয়া ব্যবহার করলে বাক্যের গঠন ও অর্থ পূর্ণতা লাভ করে না, অর্থের পূর্ণতার জন্য সমাপিকা ক্রিয়ার প্রয়োজন অনুভূত হয়, তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে। বাংলায় ইয়া, ইলে, ইতে ইত্যাদি প্রত্যয় যোগে অসমাপিকা ক্রিয়ার রূপ গঠিত হয়।

নাবিকেরা দিক নিরূপণ করিতে না পাড়িয়া বহর হইতে দূরে পড়িয়াছিল।

'নিরূপণ করিতে' ও 'না পাড়িয়া' অসমাপিকা ক্রিয়া। এগুলি বাক্যের গঠন ও অর্থকে পূর্ণরূপ দান করতে পারে না। তাই 'পড়িয়াছিল' সমাপিকা ক্রিয়াপদ ব্যবহারের প্রয়োজন হয়েছে।

'ইয়া' যোগে অসমাপিকা ক্রিয়া-করিয়া, দেখিয়া, শুনিয়া ইত্যাদি।

'ইলে' যোগে অসমাপিকা ক্রিয়া-করিলে, দেখিলে, শুনিলে ইত্যাদি।

'ইতে' যোগে অসমাপিকা ক্রিয়া-করিতে, দেখিতে, শুনিতে ইত্যাদি।


...............................................🌸...................................................
 যদি কোনও সুযোগে  আমার পোস্টে ত্রুটি থাকে  তবে মন্তব্যে আমাকে জানাতে দ্বিধা করবেন না।






Thursday

ক্রিয়ার কাল | কাল | Bangla Tense | Kriyar Kal

January 02, 2025 0

'কাল' শব্দের অর্থ সময়। অস্তিত্ববান যা কিছু সবই এই সময়ের অধীন। অনাদি অতীত থেকে অনন্ত ভবিষ্যৎ - কাল নিরবধি। কোনও কিছুই সময়ের গ্রাসের বাইরে নয়। বস্তুত সময় সব কিছুকে 'কলন' বা গ্রাস করে বলেই সময়ের আরেক নাম কাল।

 

ক্রিয়ার কাল

যে সময়ে ক্রিয়াটি অনুষ্ঠিত হয়, তাকে ক্রিয়ার কাল বলে।

ক্রিয়ার কাল প্রধানত তিন প্রকার- বর্তমান, অতীত ভবিষ্যৎ।

বর্তমান কাল: যে ক্রিয়া চিরকালই ঘটে বা এখনও ঘটছে সেই ক্রিয়ার কালকে বর্তমান কাল বলা হয়। 

অতীত কাল: যে ক্রিয়ার কাজ পূর্বেই শেষ হয়েছে, তার কালকে অতীত কাল বলে।

ভবিষ্যৎ কাল: যে ক্রিয়া এখনও ঘটেনি, পরে ঘটবে, তার কালকে ভবিষ্যৎ কাল বলে।

 তিনটি কালের প্রতিটিকে কার্য সংঘটনের সূক্ষ্মতার বিচারে আবার কয়েকটি ভাগে ভাগ করা  যথা—

) বর্তমান কাল

যে ক্রিয়া চিরকালই ঘটে বা এখনও ঘটছে সেই ক্রিয়ার কালকে বর্তমান কাল বলা হয়।

উদাহরণ:

  •  তবে লিস্টি কর।
  • হেথায় মানুষ বসত করে।
  •  তোমাকে সেই সকাল থেকে তোমার মতো মনে পড়ছে।
  •  তাই এখন পথে এসে দাঁড়িয়েছে সড়কের মাঝখানে।

  বর্তমান কালের কার্য-সংঘটনের সূক্ষ্মতার বিচারে আবার চারটি ভাগে ভাগ করা যায় যথ—

১। সাধারণ বা নিত্য বর্তমান

২। ঘটমান বর্তমান

৩। পুরাঘটিত বর্তমান

৪। বর্তমান অনুজ্ঞা

 বর্তমান কালের বিভিন্ন ভাগ গুলোর  নিম্নে আলোচনা করা হলো --

১। সাধারণ বা নিত্য বর্তমান:  ক্রিয়ার কাজ সাধারণ ভাবে হয় বোঝালে, অভ্যাসগত ভাবে হয়, চিরকাল ধরে কিছু ঘটে, নিয়মিত বা অনিয়মিত ভাবে কিছু ঘটে, এমন বোঝালে সেই কালকে সাধারণ বর্তমান কাল বলা হয়। 

সাধারণ বা নিত্য বর্তমানে মূল ধাতুর সঙ্গে কোন কালবাচক প্রত্যয় যুক্ত হয় না। উত্তম, মাধ্যম প্রথম পুরুষে যথাক্রমে . এবং পুরুষবাচক বিভক্তি যুক্ত হয়। মধ্যম পুরুষের সম্ভ্রমার্থে এন এবং তুচ্ছার্থে নৈকট্য বোঝাতে ইস যুক্ত হয়ে থাকে। এইভাবে কর ধাতুর উত্তম পুরুষে কর+ করি, মধ্যম পুরুষে কর+= কর, কর+এন করেন, কর+ইস = করিস। প্রথম পুরুষে কর+ করে, কর+এন=করেনরূপ হয়।

যেমন:  মন্ত্রশক্তিতে তোমরা বিশ্বাস কর না, কারণ আজকাল কেউ করে না, কিন্তু আমি করি

সাধারণ বর্তমানের উদাহরণ:

  • আমি খাই।
  • রমা পড়ে।
  •  তুমি দেখো।
  • অঙ্কিতা দিদিমণি বিদ্যালয়ে পড়ান।
  • তুই সারাদিন খেলে বেড়াস। ইত্যাদি।
  • "কেহ কাঁদে, কেহ গাঁটে কড়ি বাঁধে ঘরে ফিরিবার বেলা।"
  • "ওরা চিরকাল টানে দাঁড়, ধরে থাকে হাল।"
  •  "দুঃখ সুখ দিবস রজনী মন্দ্রিত করিয়া তোলে জীবনের মহামন্ত্র ধ্বনি।"
  •   "ওই মহামানব আসে দিকে দিকে রোমাঞ্চ লাগে মর্তধূলির ঘাসে ঘাসে।"

সাধারণ বর্তমানের বিশিষ্ট প্রয়োগ ঐতিহাসিক বর্তমান (সাধারণ অতীত অর্থে):

  • ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধ হয়।
  • মহারাজ অশোক কলিঙ্গ জয় করেন।
  • বিশ্বভারতী তাঁকে দেশিকোত্তম (ডি.লিট) উপাধিদানে সম্মানিত করেন।

ভবিষ্যৎ অর্থে: আশীর্বাদ করুন, যেন পাশ করি।

ঘটমান বর্তমান অর্থে: তোমার মুখ দেখেই বোঝা যায় (অর্থাৎ যাচ্ছে) তুমি কষ্টে আছো।

২। ঘটমান বর্তমান: ক্রিয়ার কাজ বর্তমানে চলছে অর্থাৎ এখন চলছে বোঝালে ঘটমান বর্তমান কাল হয়।

ঘটমান বর্তমানে মূল ধাতুর সঙ্গে ইতে অসমাপিকা ক্রিয়া প্রত্যয়, আছ ধাতু এবং পুরুষবাচক ক্রিয়াবিভক্তি (, এবং ) যোগ করে ক্রিয়া রূপ গঠিত হয়।

উত্তম পুরুষে কর ধাতু+ইতে+আছ ধাতু = করিতেছি।

মধ্যম পুরুষের কর ধাতু ইতে আছ ধাতু+(এন,এস)= করিতেছ (করিতেছেন, করিতেছিস)

প্রথম পুরুষে কর ধাতু ইতে আছ ধাতু + (এন) =করিতেছে (করিতেছেন)

চলিত ভাষায় এদের রূপ হবে করছি, করছ (করছেন, করছিস), করছে (করছেন)

ঘটমান বর্তমানের উদাহরণ:

  • ভরিয়া পরান শুনিতেছি গান।
  • খেলিছ এ বিশ্ব লয়ে।
  • মানুষই ফাঁদ পাতছে।
  • তিনি কলকাতায় আসছেন সেতার বাজাতে।
  • দুলিতেছে বিদ্যুতের দুল।
  • পশ্চাতে রেখেছো যারে, সে তোমারে পশ্চাতে তারা টানছে।
  • ঘটে ঘটে ক্ষরিতেছে ক্ষীর।
  • আমার হিয়ায় চলছে রসের খেলা।
  • ঝরিছে মুকুল, কুজিছে কোকিল
  • ঠিক এই সময় আমি ভেসে চলেছি বিখ্যাত সেই ভূমধ্যসাগরের মধ্য দিয়ে।

৩। পুরাঘটিত বর্তমান: ক্রিয়ার কাজ শেষ হয়েছে কিন্তু তার ফল বর্তমান, এরূপ বোঝালে পুরাঘটিত বর্তমান কাল হয়।

পুরাঘটিত বর্তমানে মূল ধাতুর সঙ্গে ইয়া অসমাপিকা ক্রিয়া প্রত্যয়, আছ ধাতু এবং পুরুষবাচক ক্রিয়াবিভক্তি (ই,অ এবং এ) যুক্ত হয়ে ভিন্ন ভিন্ন ক্রিয়ারূপের গঠন হয়ে থাকে।

উত্তম পুরুষে কর ধাতু ইয়া+আছ+ই =করিয়াছি, পড়য়াছি =পড়+ইয়া+আছ+ইলিখিয়াছি = লিখ+ইয়া+আছ+ই

মধ্যম পুরুষে করিয়াছ (করিয়াছেন, করিয়াছিস)।

 প্রথম পুরুষে করিয়াছে (করিয়াছেন) চলিত ভাষায় এদের রূপ হবে যথাক্রমে করেছি, করেছ (করেছেন, করেছিস), করেছে (করেছেন)।

  • দেখতে দেখতে গুচ্ছে গুচ্ছে উথলে উঠেছে ফুল।
  • নৃপতির গর্ব নাশি করিয়াছ পথের ভিক্ষুক।
  •  কত রূপে সাজায়েছ এ ভুবন, কত রঙে রাঙায়েছ ফুলবন।
  • বিজয়রথের চাকা উড়ায়েছে ধূলিজাল।
  •  দেখেছি নিত্যের জ্যোতি দুর্যোগের মায়ার আড়ালে।
  • মহাপ্রাণ সহিয়াছে পলে পলে।
  • চাহিতে এসেছি শুধু একখানি মালা।

৪। বর্তমান অনুজ্ঞা:  ক্রিয়ার দ্বারা বর্তমান কালে কোনো আদেশ, অনুরোধ, প্রার্থনা, উপদেশ ইত্যাদি করা বোঝালে তাকে, বর্তমান অনুজ্ঞা কাল হিসেবে ধরা হয়।

এটি কেবলমাত্র মধ্যম পুরুষ প্রথম পুরুষের ক্রিয়ার ক্ষেত্রে প্রযুক্ত হয়ে থাকে। বর্তমান কালের অনুজ্ঞার সচরাচর মূল ধাতুর সঙ্গে উন, ইস, উক এই প্রত্যয়গুলি যুক্ত হয়ে ক্রিয়া রূপ গঠিত হয়ে থাকে।

উদাহরণ:

  • প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে মোরে আরো আরো দাও প্রাণ।
  • আপনি সত্বর প্রস্থান করুন।
  • মা, আমায় মানুষ করো।
  •  সীতা-সাবিত্রীর মতো আদর্শ হও মা।
  • এসো যুগান্তের কবি।
  •  দাঁড়াও ওই মানহারা মানবীর দ্বারে।
  • দেহখানি তুলে ধরো, তোমার ওই দেবালয়ের প্রদীপ করো।

) অতীত কাল:

যে ক্রিয়ার কাজ পূর্বেই শেষ হয়েছে, তার কালকে অতীত কাল বলে।

উদাহরণ: সকলেই অবাক হইয়া তাকাইত, তিনি ভ্রূক্ষেপ মাত্র করিতেন না।

অতীত  কালের কার্য-সংঘটনের সূক্ষ্মতার বিচারে আবার চারটি ভাগে ভাগ করা যায়  যথা:

অতীত কাল

১। সাধারণ বা নিত্য অতীত

২। ঘটমান অতীত

৩। পুরাঘটিত অতীত

৪। বর্তমান অনুজ্ঞা

 কালের বিভিন্ন ভাগ গুলোর  নিম্নে আলোচনা করা হলো ---

১। সাধারণ বা নিত্য অতীত:  যে ক্রিয়া অতীতে নিষ্পন্ন হয়ে গেছে এবং যার ফলও বর্তমান নেই তার কালকে সাধারন অতীত বা নিত্য অতীত বলা হয়। সাধারণ বা নিত্য অতীতে মূল ধাতুর সঙ্গে অতীত কাল-বাচক 'ইল' প্রত্যয় এবং পুরুষ অনুসারে ক্রিয়াবিভক্তি (আম, , ,এন,) যুক্ত হয়ে ক্রিয়া রূপের গঠন করে।

উত্তম পুরুষ: কর+ইল+আম = করিলাম মধ্যম পুরুষ: কর+ইল+ (এন) = করিলে (করিলেন) প্রথম পুরুষ: কর+ইল+(এন) করিল (করিলেন) চলিত ভাষায় এদের রূপ যথাক্রমে হবে করলাম, করলুম, করলেন, করলে, করলি করল এবং করলেন।

উদাহরণ:

  •  অপরিচিত ছিল তোমার মানব রূপ উপেক্ষার আবেগ দৃষ্টিতে।
  • করিলাম বাসা, মনে হল আশা। অশ্রুধারা আর্জিল মহীরে।
  • অভিশাপ-রাত্রির আয়ু হল ক্ষয় রে।
  • রিকশাগাড়ির সবটুকু খোলের মধ্যে এদের জায়গা হয়েছিল কি করে?
  • কেন ওরকম কথা বললি?
  • রবি কাকাকে বললুম, ছেড়ো না, আমরা শেষ পর্যন্ত লড়বো এজন্য।

২। ঘটমান অতীত: অতীতে কোনো এক সময় কোনো কাজ চলছিল বোঝালে ঘটমান অতীত কাল হয়। ঘটমান অতীতে মূল ধাতুর সঙ্গে ইতে প্রত্যয় আছ ধাতু অতীতকালবাচক ইল প্রত্যয় এবং পুরুষ অনুযায়ী ক্রিয়া বিভক্তি (আম, ,এন, ) যুক্ত ক্রিয়া রূপ গঠিত হয়।

উত্তম পুরুষ: কর+ইতে+আছ+ইল+আম=করিতেছিলাম।

মধ্যম পুরুষ: কর+ইতে+আছ+ইল+এ (এন,ই)= করিতেছিলে (করিতেছিলেন, করিতেছিলি)।

প্রথমপুরুষ: কর+ইতে+আছ+ইল+অ(এন) করিতেছিল (করিতেছিলেন)।

চলিত ভাষায় এই রূপগুলি হয় যথাক্রমে করছিলাম, করছিলুম, করছিলেন, করিতেছিলেন, করছিলে, করছিলি, করছিলিস, করছিল, করছিলেন।

যেমন:

  •  আমরা ক্রিকেট খেলিতেছিলাম।
  •  শিশুরা খেলছিল মায়ের কোলে।
  •  কবির সঙ্গীতে বেজে উঠছিল সুন্দরের আরাধনা।
  • আঁকিতে ছিল সে যত্নে সিঁদুর সীমান্তসীমা' পরে। বিদ্রূপ করছিলে ভীষণকে।
  • শঙ্কাকে চাচ্ছিলে হার মানাতে।
  • ওই চেঁচামেচির মধ্যেই দু-একজন দু-একটা কথা বলতে চেষ্টা করছিলেন।
  • একটা চাপা বেদনা ওকে ধীরে ধীরে আচ্ছন্ন করে ফেলছিল।
  • ওই পথ দিয়ে জরুরি দরকারে যাচ্ছিলাম ট্যাক্সি করে।

৩। পুরাঘটিত অতীত: অতীতকালে সংঘটিত হয়েছিল, এমন ক্রিয়ার কালকে পুরাঘটিত অতীত বলা হয়। পুরাঘটিত অতীতে মূল ধাতুর সঙ্গে 'ইয়া' প্রত্যয় যোগ করে আছ ধাতু এবং তার পরে 'ইল্' ও পুরুষবাচক ক্রিয়াবিভক্তি (আম, এ, অ, এন ইত্যাদি) যোগ করে সমাপিকা ক্রিয়া গঠন করা হয়। যেমন: কর+ইয়া+আছ+ইল+আম।

উদাহরণ:

  • তাঁহার মধ্যে নানা বৈপরীত্যের সমাবেশ ঘটিয়াছিল
  • লোকটাকে কেমন ঠেসে ধরেছিলুম
  • নোবেল প্রাইজ পেয়েছিলেন কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
  • মেঘলা দিনে দেখেছিলেম মাঠে।
  •  ওইরকম খেয়ে খেয়েই শরীর খানা ঠিক রেখেছিলেন ভদ্রলোক।

৪। বর্তমান অনুজ্ঞা:  অতীতে কোনো কাজ নিয়মিত হত বোঝাতে নিত্যবৃত্ত অতীত কাল হয়। নিত্যবৃত্ত অতীতের ক্রিয়ার গঠন সরল। ধাতুর উত্তর 'ইত' প্রত্যয় যোগ করে তার সাথে পুরুষ-বিভক্তি যোগ করলেই হয়। কর+ইত+আম = করিতাম , কর+ইত+এ (এন, ইস) করিতে (করিতেন, করিতিস) কর+ইত+অ(এন) = করিত (করিতেন)

যেমন:

  • আমি বিদ্যালয়ে যাইতাম (যেতাম)। যাইতাম=যা+ইত+আম। ('আম' পুরুষ বিভক্তি।)
  •   হাতের কাছে খাবার এলেই তলিয়ে দিতেম।
  •  লাফাইত, উড়িত, জানিত না কায়দা কানুন কাকে বলে।
  • বুড়োকে ভালো বলে জানতুম।
  • রাজবধূ রাজবালা আসিতেন ফুল সাজায়ে ডালায়। 

  

) ভবিষ্যৎ কাল

ভবিষ্যৎ কাল বলতে বোঝায় আগামী সময়। যে ক্রিয়া এখনও ঘটেনি, পরে ঘটবে, তার কালকে ভবিষ্যৎ কাল বলে। উদাহরণ: আমরা খেলব, তুমি আসবে, রাম পড়বে না, তোমরা খেলতে থাকবে, ইত্যাদি।

ভবিষ্যৎ  কালের কার্য-সংঘটনের সূক্ষ্মতার বিচারে আবার চারটি ভাগে ভাগ করা যায়  যথা:

১। সাধারণ বা নিত্য ভবিষ্যৎ

২। ঘটমান ভবিষ্যৎ

৩। পুরাঘটিত ভবিষ্যৎ

৪। ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞা

ভবিষ্যৎ কালের বিভিন্ন ভাগ গুলোর  নিম্নে আলোচনা করা হলো ---

১। সাধারণ বা নিত্য ভবিষ্যৎ:  সাধারণ ভাবে ভবিষ্যতে কিছু হবে বলা হলে সাধারণ ভবিষ্যৎ হয়।

সাধারণ ভবিষ্যতে ক্রিয়া গঠনের জন্য মূল ধাতুর সাথে কালবাচক ক্রিয়াচিহ্ন 'ইব' যোগ করে তার সঙ্গে পুরুষ অনুযায়ী ক্রিয়া বিভক্তি যোগ করতে হয়। যেমন: কর+ইব+ = করিব , দেখ+ইব+ = দেখিব

উদাহরণ:

  • দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে যাবে না ফিরে।
  • বরিব সত্যে, দূরিব মিথ্যা ভয়।
  • কোথায় ভাসাইয়া দেবে সাম্রাজ্যের দেশ বেড়াজাল।
  •  প্রণমি তোমারে চলিব নাথ সংসার কাজে।
  • মুক্ত হইব দেব ঋণে মোরা।
  • তব পদতলে বসিয়া বিরলে শিখিব তোমার শিক্ষা।
  • পথের ধারে বাজবে বেনু নদীর কূলে চরবে ধেনু।

২। ঘটমান ভবিষ্যৎ:  যে ক্রিয়াটি ভবিষ্যতে হতে থাকবে, তার কালকে ঘটমান ভবিষ্যৎ বলা হয়।

ঘটমান ভবিষ্যতে মূল ধাতুর সঙ্গে ইতে প্রত্যয় যুক্ত হয় এবং তারপর আছ ধাতুর সঙ্গে ভবিষ্যৎ কালবাচক প্রত্যয় এবং পুরুষ অনুসারে বিভক্তি যুক্ত হয়ে ক্রিয়া রূপ গঠন করে। আছ এখানে থাক আকার ধারণ করে। [প্রত্যয় বা বিভক্তিযোগে মূল ধাতুর রূপান্তরকে আদেশ বলে- আছ> থাক] 

যেমন: আমরা খেলব আর তুমি পড়তে থাকবে। (পড়িতে থাকিবে) পড়+ইতে থাক+ইব+ কর+ইতে থাক্+ইব = করিতে থাকিব

উদাহরণ:

  • সেই সুর কর্ণে মোর আমরণ ধ্বনিতে থাকিবে। 
  • আপনি গাহিতে থাকিবেন আমি বাজাইতে থাকিব তাহারা দেখিতে থাকিবে।
  • তুমি যখন পরীক্ষার পড়া পড়তে থাকবে তখন আমি পৃথিবীর পথে হাঁটতে থাকব।
  • সে তখনও নেচে নেচে গান গাইতে থাকবে।
  •  যতই বাধা থাক তুমি কি এগোতে থাকবে না?

৩। পুরাঘটিত ভবিষ্যৎ: ভবিষ্যৎ কালে কোন ক্রিয়া নিষ্পন্ন হয়ে থাকবে অর্থাৎ ভবিষ্যতে কোনো ক্রিয়া সম্ভবত সংঘটিত হতে থাকবে এই অর্থে ক্রিয়ার কালকে পুরাঘটিত ভবিষ্যৎ বলে। পুরাঘটিত ভবিষ্যতে ক্রিয়াটি অতীতের ভাব কিছুটা বহন করে এই জন্য একে সম্ভাব্য অতীত বা সন্দিগ্ধ অতীতও বলা হয়।

ক্রিয়ার গঠন: মূল ধাতু+ইয়া+থাক্+ইব্‌+পুরুষ-বিভক্তি। যেমন: দেখিয়া থাকিব= দেখ+ইয়া+থাক+ইব+অ।

উদাহরণ:

  • হয়তো আমিই কথাটা তোমাদের বলে থাকব।(বলিয়া থাকিব)
  • গেলাসটা মীরাই বোধহয় ভেঙে থাকবে। (ভাঙিয়া থাক)
  • হয়তো দেখে থাকব, মনে নেই। (দেখিয়া থাকিব)
  • সে হয়তো এতক্ষণে পৌঁছে গিয়ে থাকবে। (পৌঁছাইয়া গিয়া থাকিবে)

৪। ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞা: ভবিষ্যৎ কালে কাউকে কিছু করতে নির্দেশ দিলে, আদেশ, অনুরোধ বা পরামর্শ বোঝাতে ভবিষ্যৎ অনজ্ঞা হয়।  মূল ক্রিয়ার সঙ্গে ভবিষ্যৎ কালবাচক ইব প্রত্যয় এবং মধ্যম প্রথম পুরুষের অথবা ইও ক্রিয়া বিভক্তি যুক্ত হয়। উত্তম পুরুষের অনজ্ঞা হয় না। যেমন : কর+ইব+ = করিবে অথবা কর+ইও= করিও, কর+ইস্=করিস, কর+ইবেন = করিবেন

উদাহরণ:

  •  সৌভাগ্যগর্বে গর্বিত হইও না। 
  • দয়া করে একবারটি আসবেন
  • ওখানেই অপেক্ষা করিস
  • যেও না রজনি তুমি লয়ে তারাদলে। কখনো মিথ্যা কথা বলবে না।
  • পিতা-মাতাকে ভক্তি করিবে।


................................................🌸...................................................
 যদি কোনও সুযোগে  আমার পোস্টে ত্রুটি থাকে  তবে মন্তব্যে আমাকে জানাতে দ্বিধা করবেন না।





আরো পরুন —
মৌলিক ও যৌগিক কাল
ক্রিয়ার ভাব