বাক্য
সুচিপত্র---
- বাক্য কাকে বলে ? বাক্য কী ? উদাহরণ সহ আলোচনা
- বাক্য কত প্রকার ও কী কী ? বাক্যের প্রকারভেদ সহ আলোচনা।
- গঠন অনুসারে বাক্য কত প্রকার ও কী কী ?উদাহরণসহ আলোচনা।
- অর্থ অনুসারে বাক্য কত প্রকার ও কী কী ? উদাহরণ সহ আলোচনা।
- গুণ অনুসারে বাক্য কত প্রকার ও কী কী ? উদাহরণ সহ বিস্তারিত আলোচনা।
বাক্য
কয়েকটি শব্দ মিলিত হয়ে যখন একটি পূর্ণ মনের ভাব প্রকাশিত হয়, তখন তাকে বাক্য বলে। আবার বলা যায় এক বা একাধিক শব্দ নিয়ে গঠিত পূর্ণ অর্থবোধক ভাষিক একককে বাক্য বলে।
ব্যাকরণবিদদের মতে, বাক্য হলো এক বা একাধিক অর্থপূর্ণ শব্দের সমাহার যা সম্পূর্ণ ভাব প্রকাশ করে। অর্থাৎ যে সুবিন্যাসটি পদসমষ্টি দ্বারা কোন বিষয়ে বক্তার মনোভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ পায় তাকে বাক্য বলে। বাক্য সম্পর্কে বিভিন্ন ব্যক্তির মতামত নিম্নে দেওয়া হলো –
পাণিনি: “কর্ম ধাতু ইতি বাক্যম্” (অর্থ: কর্ম এবং ধাতু মিলে বাক্য গঠিত হয়।)
ডক্টর সুনীতি কুমার মুখোপাধ্যায়ের মতে, “পরস্পর অর্থসম্বন্ধবিশিষ্ট যে পথগুলো দ্বারা একটি সম্পূর্ণ ধারণা বা বক্তব্য বা ভাব প্রকাশ পায় সে পদ গুলোর সমষ্টিকে বাক্য বলে”।
ভর্তৃহরি: “শব্দাশ্রয়ঃ প্রকাশঃ” (অর্থ: শব্দের সমাহারে অর্থ প্রকাশ পায়।)
কৌটিল্য: “কর্ম-কারক-ভাবে-কৃতঃ শব্দঃ সর্বনাম-বিশেষণ-সমেতঃ বাক্যম্” (অর্থ: কর্ম, কারক, ভাব, শব্দ, সর্বনাম এবং বিশেষণের সমন্বয়ে বাক্য গঠিত হয়।)
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য: “অর্থপ্রকাশকঃ শব্দসমাহারঃ বাক্যম্” (অর্থ: অর্থ প্রকাশকারী শব্দের সমাহারকে বাক্য বলে।)
শঙ্করাচার্য: “যদর্থং বোধয়তি তৎ বাক্যম্” (অর্থ: যা অর্থ বোধায় তাকে বাক্য বলে।)
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর: “বাক্য হল মনের ভাব প্রকাশের একক।”
মাইকেল মধুসূদন দত্ত: “বাক্য হল ভাব প্রকাশের অস্ত্র।”
কাজী নজরুল ইসলাম: “বাক্য হল চিন্তার প্রতিচ্ছবি।
বাক্য কত প্রকার ও কী কী ? বাক্যের প্রকারভেদ সহ আলোচনা।
সাধারণত বাক্যের প্রধান অংশ তিনটি। যথা – কর্তা, কর্ম ও ক্রিয়া। বাক্যের ক্রিয়াকে যে চালায়, সে হলো কর্তা। যাকে অবলম্বন করে ক্রিয়া সম্পাদিত হয় তাকে কর্ম বলে। আর বাক্যের মধ্যে যে অংশ দিয়ে কোন কিছু করা, ঘটা বা হওয়া বোঝাই তাকে ক্রিয়া বলে। যেমন: শাওন ও স্মরণ বই পড়ে। এখানে শাওন ও স্মরণ হলো কর্তা, বই হলো কর্ম আর পড়ে হলো ক্রিয়া।
বাক্য কত প্রকার ও কী কী ?
উত্তর:—
প্রতিটি বাক্যের প্রধানত দুটি অংশ থাকে। যথা: –
ক) উদ্দেশ্য
খ) বিধেয়
নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো —
ক) উদ্দেশ্য:—
বাক্যের যে অংশে কাউকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলা হয়ে থাকে তাকে উদ্দেশ্য বলে। যেমন – রহিম বল খেলছে। সীমা বই পড়তেছে। এখানে বাক্য দুটির মাঝে ‘রহিম‘ এবং ‘সীমা‘ হলো উদ্দেশ্য।
খ) বিধেয়:—
উদ্দেশ্য সম্বন্ধে যা বলা হয় তাকে বিধেয় বলে। যেমন – করিম ক্রিকেট খেলছে। আসিফ বই পড়তেছে। বাক্য দুটির মাঝে ‘ক্রিকেট খেলছে‘ এবং ‘বই পড়তেছে‘ হলো বিধেয়।
গঠন অনুসারে বাক্য কত প্রকার ও কী কী ?উদাহরণসহ আলোচনা।
উত্তর:—
গঠন অনুসারে বাক্য
গঠন অনুসারে বাক্য তিন প্রকার। যথা —
ক) সরল বাক্য
খ) মিশ্র বা জটিল বাক্য
গ) যৌগিক বাক্য
নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো —
ক) সরল বাক্য
সরল বাক্য হল এমন বাক্য যেখানে একটি মাত্র কর্তা এবং একটি মাত্র সমাপিকা ক্রিয়া থাকে। এই বাক্যগুলো সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে এবং আরও কোনো বাক্যের উপর নির্ভরশীল হয় না।
উদাহরণ:
- ছেলেটি বই পড়ছে।
- মেয়েটি গান গাইছে।
- সূর্য উঠেছে।
- পাখি উড়ছে।
- ফুল ফুটেছে।
সরল বাক্যের বৈশিষ্ট্য:
- একটি কর্তা থাকে।
- একটি সমাপিকা ক্রিয়া থাকে।
- সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে।
- আরও কোনো বাক্যের উপর নির্ভরশীল হয় না।
সরল বাক্য চেনার সহজ উপায়
সরল বাক্যে একটিই সমাপিকা ক্রিয়া থাকে। একটি সরল বাক্যে একটি বা একাধিক অসমাপিকা ক্রিয়া থাকতে পারে। যেমন- কেহ কহিয়া না দিলেও (অসমাপিকা ক্রিয়া) তপোবন বলিয়া বোধ হইতেছে (সমাপিকা ক্রিয়া)।
সরল বাক্যে ক্রিয়াপদ উহ্য থাকতে পারে। যেমন- জ্ঞানী লোক সকলের শ্রদ্ধার পাত্র।
সরল বাক্যের ভেতরে কোন খণ্ডবাক্য বা একাধিক পূর্ণবাক্য থাকে না। যেমন- চেহারা নিষ্প্রভ হলেও তার মুখাবয়বে একটা পরিতৃপ্তির আভা ছিল।
খ) জটিল বা মিশ্র বাক্য
জটিল বা মিশ্র বাক্য হলো যে বাক্যে একটি স্বাধীন বাক্য এবং এক বা একাধিক অধীন বাক্য পরস্পর সাপেক্ষভাবে ব্যবহৃত হয়। অন্য কথায়, জটিল বাক্যে একাধিক বাক্য থাকে যেখানে একটি বাক্য অন্য বাক্যের উপর নির্ভর করে।
মিশ্র বা জটিল বাক্যের উদাহরণ:
যখন বৃষ্টি হবে, তখন আমরা ঘরে বসে গল্প করবো।
এই বাক্যটিতে দুটি বাক্য রয়েছে:
প্রধান বাক্য: “আমরা ঘরে বসে গল্প করবো।”
অধীন বাক্য: “যখন বৃষ্টি হবে।”
সংযোজক শব্দ “যখন” প্রধান বাক্য এবং অধীন বাক্যকে যুক্ত করেছে। অধীন বাক্যটি “আমরা ঘরে বসে গল্প করবো” এই প্রধান বাক্যের সময় নির্ধারণ করে।
আরও কিছু উদাহরণ:
- যে দেশের মানুষ শিক্ষিত, সেই দেশ উন্নত।
- যদি আমরা পরিশ্রম করি, তাহলে অবশ্যই সফল হব।
- যেহেতু বিকেল হয়ে গেছে, তাই আমরা বাড়ি ফিরি।
- যারা সত্যবাদী, তাদের সবাই সম্মান করে।
- যেখানে নিয়ম নেই, সেখানে অরাজকতা বিরাজ করে।
মিশ্র বা জটিল বাক্যের বৈশিষ্ট্য:
- জটিল বাক্যে একটি প্রধান বাক্য এবং এক বা একাধিক অধীন বাক্য থাকে।
- প্রধান বাক্য স্বাধীনভাবে সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে।
- অধীন বাক্য প্রধান বাক্যের উপর নির্ভর করে এবং এর অর্থ সম্পূর্ণ হয় না।
- সংযোজক শব্দ ব্যবহার করে প্রধান বাক্য এবং অধীন বাক্যকে যুক্ত করা হয়। যেমন: যখন, যদি, কারণ, যেখানে, যাতে, ইত্যাদি।
জটিল বা মিশ্র বাক্য চেনার সহজ উপায়:
জটিল বা মিশ্র বাকে একাধিক খণ্ডবাক্য থাকে। এদের মধ্যে একটি প্রধান খণ্ডবাক্য এবং অন্যগুলো সেই বাক্যের উপর নির্ভর করে। যেমনঃ যেহেতু তুমি বেশি নম্বর পেয়েছ, সুতরাং তুমি প্রথম হবে।
অধিকাংশ জটিল বাক্যে প্রতিটি খণ্ডবাক্য এর পর কমা (,) থাকে। যথা- যিনি পরের উপকার করেন, তাঁকে সবাই শ্রদ্ধা করে।
জটিল বাক্যের সাপেক্ষ সর্বনাম ও নিত্য সম্বন্ধীয় যোজক যোগ করতে হয়। যথা-
সাপেক্ষ সর্বনাম : যে….সে, যা….তা, যিনি….তিনি, যারা…. তারা। যেমনঃ যিনি বিদ্বান, তিনি সর্বত্র আদরণীয়।
নিত্য সম্বন্ধীয় যোজক: যখন…. তখন, যেমন…. তেমন, বরং…. তবু, যেইনা….অমনি, যেহেতু….সেহেতু/সেজন ̈। যেমনঃযখন বিপদ আসে, তখন দুঃখও আসে।
গ) যৌগিক বাক্য
যৌগিক বাক্য হল এমন বাক্য যেখানে দুটি বা ততোধিক স্বাধীন বাক্য সংযোজক শব্দ ব্যবহার করে যুক্ত থাকে। এই বাক্যগুলো সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে এবং একে অপরের উপর নির্ভরশীল নয়।
যৌগিক বাক্যের উদাহরণ:
১. আমি বাংলায় কথা বলতে পারি, কিন্তু ইংরেজিতে (কথা বলতে) তেমন পারি না।
এই বাক্যটিতেও দুটি স্বাধীন বাক্য রয়েছে:
প্রথম বাক্য: “আমি বাংলায় কথা বলতে পারি।”
দ্বিতীয় বাক্য: “ইংরেজিতে তেমন পারি না।”
সংযোজক শব্দ “কিন্তু” দুটি বাক্যকে যুক্ত করেছে। এই দুটি বাক্যই সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে এবং একে অপরের বিপরীত অর্থ বহন করে।
আরও কিছু উদাহরণ:
- রাস্তাঘাট ভিড় হয়েছে, তাই আমরা ট্রেনে যাব।
- সে গান গাইতে পারে, নাচতে পারে, আঁকতেও পারে।
- সত্যবাদী বলেই, তাকে সকলে বিশ্বাস করে।
- ছেলেটি গরিব কিন্তু সৎ।
যৌগিক বাক্যের বৈশিষ্ট্য:
- দুটি বা ততোধিক স্বাধীন বাক্য থাকে।
- সংযোজক শব্দ ব্যবহার করে বাক্যগুলো যুক্ত থাকে।
- প্রতিটি বাক্যই সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে।
- বাক্যগুলো একে অপরের উপর নির্ভরশীল নয়।
- তুলনা: যেমন, তার চেয়ে, ইত্যাদি।
যৌগিক বাক্য চেনার সহজ উপায়--
যৌগিক বাক্যের অন্তর্গত নিরপেক্ষ বাক্যগুলো আর, এবং, ও, বা, কিন্তু, অথবা, অথচ, কিংবা, বরং, তথাপি, তবে, তবে কি না, নতুবা, তবু, হয়..নয়, হয়.. না হয়, কেন..না, তত্রাচ, অপিচ প্রভৃতি অব্যয় যোগে সংযুক্ত বা সমন্বিত থাকে। তবে কোন অব্যয় ছাড়াও দুটি সরল বাক্য একসঙ্গে হয়ে যৌগিক বাক্য গঠন করতে পারে।
প্রশ্ন: অর্থ অনুসারে বাক্য কত প্রকার ও কী কী ? উদাহরণ দাও।
উত্তর:—
অর্থ অনুযায়ী বাক্য সাত প্রকার। যথা:
- নির্দেশক বাক্য
- প্রশ্নবোধক বাক্য
- অনুজ্ঞাসূচক বাক্য
- বিস্ময়সূচক বাক্য
- ইচ্ছাসূচক বাক্য
- কার্যকারণাত্মক বাক্য
- সন্দেহ সূচক বাক্য
১) নির্দেশক বাক্য- যে বাক্যে কোনো ঘটনা বা ভাবের বিবৃতি থাকে সেই বাক্যকে নির্দেশক বা নির্দেশাত্মক বাক্য বলে। এই প্রকার বাক্যকে বিবৃতিমূলক বাক্যও বলা হয়।
উদাহরণ:
- ছেলেটা একদম পড়াশোনা করে না।
- আমড়া গাছে আম হয় না।
- অদিতি পড়াশোনায় খুব ভালো।
- কোয়েল কাল কলকাতা যাবে।
বাক্যে যে ঘটনা বা ভাবের বিবৃতি থাকে তা ইতিবাচক নাকি নেতিবাচক- এই বিচারে নির্দেশক বাক্যকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
(ক) হ্যাঁ-বাচক বাক্য: যে বাক্যের দ্বারা কোনো কিছু স্বীকার করা হয় বা মেনে নেওয়া হয় তাকে হ্যাঁ-বাচক বাক্য বলে। এই প্রকার বাক্যের অপর নাম সদর্থক বাক্য বা অস্ত্যর্থক বাক্য বা হ্যাঁ-বোধক বাক্য বা ইতিবাচক বাক্য।
উদাহরণ:
- অমলেন্দুবাবু জীবনবিজ্ঞান পড়ান।
- আমাদের প্রধানশিক্ষক মহাশয় ভালো মানুষ।
- ট্রেন যথাসময়ে স্টেশনে পৌঁছালো।
(খ) না-বাচক বাক্য: যে বাক্যে কোনো কিছু অস্বীকার বা নিষেধ করা হয়, তাকে না-বাচক বাক্য বলা হয়। না-বাচক বাক্যকে নঞর্থক বাক্য বা নাস্ত্যার্থক বাক্য বা না-বোধক বাক্য বা নেতিবাচক বাক্য বলে।
উদাহরণ:
- আমাদের পথ নেই আর।
- এ কলমে লেখা যায়না।
- এখনো ছেলেটা বাড়ি ফেরেনি।
(২) প্রশ্নবোধক বাক্য (Interrogative Sentence):– যে বাক্যের দ্বারা কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করা হয় বা জানতে চাওয়া হয়, তাকে প্রশ্নবোধক বাক্য বা প্রশ্নাত্মক বাক্য বলে। প্রশ্নবোধক বাক্য হল এমন বাক্য যেখানে কোনো প্রশ্ন করা হয়। এই বাক্যগুলো সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে এবং কোনো অধীন বাক্যের উপর নির্ভরশীল হয় না। প্রশ্নবোধক বাক্যের শেষে প্রশ্নবোধক চিহ্ন (?) ব্যবহার করা হয়।
উদাহরণ:
- ছেলেটা কেমন পড়াশোনা করছে?
- আমড়া গাছে কি আম হয়?
- অদিতির গানের গলা কেমন?
- কোয়েল কাল কোথায় যাবে?
প্রশ্নবোধক বাক্যের বৈশিষ্ট্য:
- কোনো প্রশ্ন করা হয়।
- সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে।
- কোনো অধীন বাক্যের উপর নির্ভরশীল হয় না।
- শেষে প্রশ্নবোধক চিহ্ন (?) ব্যবহার করা হয়।
(৩) অনুজ্ঞাবাচক বাক্য (Imperative Sentence):– যে বাক্যের দ্বারা আদেশ, অনুরোধ, উপদেশ ইত্যাদি বোঝায় তাকে অনুজ্ঞাবাচক বাক্য বলে। অনুজ্ঞাসূচক বাক্য হল এমন বাক্য যেখানে কোনো আদেশ, অনুরোধ, নিষেধ, অনুমতি, উপদেশ, ইত্যাদি প্রকাশ করা হয়। এই বাক্যগুলো সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে এবং কোনো অধীন বাক্যের উপর নির্ভরশীল হয় না।
উদাহরণ:
- দরজা বন্ধ করো। (আদেশ)
- আমাকে একটু পানি দাও। (অনুরোধ)
- এখানে আসো না। (নিষেধ)
- তুমি যাও। (অনুমতি)
- পড়াশোনা ভালোভাবে করো। (উপদেশ)
অনুজ্ঞাসূচক বাক্যের বৈশিষ্ট্য:
- কোনো আদেশ, অনুরোধ, নিষেধ, অনুমতি, উপদেশ, ইত্যাদি প্রকাশ করে।
- সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে।
- কোনো অধীন বাক্যের উপর নির্ভরশীল হয় না।
- অনুজ্ঞাসূচক বাক্যের প্রকারভেদ:
- আদেশাত্মক বাক্য: যেখানে কোনো কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
- প্রার্থনামূলক বাক্য: যেখানে কোনো অনুরোধ করা হয়। উদাহরণ:
- নিষেধাত্মক বাক্য: যেখানে কোনো কাজ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়। উদাহরণ:
- অনুমতিমূলক বাক্য: যেখানে কোনো কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়। উদাহরণ:
- উপদেশাত্মক বাক্য: যেখানে কোনো কাজ করার পরামর্শ দেওয়া হয়। উদাহরণ:
(৪) প্রার্থনাসূচক বা ইচ্ছাসূচক বাক্য (Optative Sentence):– যে বাক্যের দ্বারা বক্তার মনের ইচ্ছা প্রকাশ পায় কিম্বা কোনো কিছু প্রার্থনা করা বোঝায়, তাকে প্রার্থনাসূচক বা ইচ্ছাসূচক বাক্য বলে। প্রার্থনা সূচক বাক্য হল এমন বাক্য যেখানে ঈশ্বরের কাছে কোনো আকাঙ্ক্ষা, অনুরোধ, প্রার্থনা, ইত্যাদি প্রকাশ করা হয়। এই বাক্যগুলো সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে এবং কোনো অধীন বাক্যের উপর নির্ভরশীল হয় না। প্রার্থনা সূচক বাক্যের শেষে বিস্ময়বোধক চিহ্ন (!) বা প্রশ্নবোধক চিহ্ন (?) ব্যবহার করা হয়।
উদাহরণ:
- ভগবান তোমার মঙ্গল করুন।
- মানুষটা যেন দৃষ্টি ফিরে পায়।
- আজ যেন বৃষ্টি না হয়।
প্রার্থনা সূচক বাক্যের বৈশিষ্ট্য:
- ঈশ্বরের কাছে কোনো আকাঙ্ক্ষা, অনুরোধ, প্রার্থনা, ইত্যাদি প্রকাশ করে।
- সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে।
- কোনো অধীন বাক্যের উপর নির্ভরশীল হয় না।
- শেষে বিস্ময়বোধক চিহ্ন (!) বা প্রশ্নবোধক চিহ্ন (?) ব্যবহার করা হয়।
প্রার্থনা সূচক বাক্যের প্রকারভেদ:
- নিবেদনমূলক বাক্য: যেখানে ঈশ্বরের প্রতি নিবেদন করা হয়।
- ক্ষমা প্রার্থনামূলক বাক্য: যেখানে ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়।
- সাহায্য প্রার্থনামূলক বাক্য: যেখানে ঈশ্বরের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা হয়।
- আকাঙ্ক্ষা প্রকাশক বাক্য: যেখানে ঈশ্বরের কাছে কোনো আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করা হয়।
(৫) বিস্ময়বোধক বা আবেগসূচক বাক্য(Exclamatory Sentence): যে বাক্যের দ্বারা মনের আনন্দ, দুঃখ, ভয়, ঘৃণা, ক্রোধ প্রভৃতি আবেগ প্রকাশ করা হয়, তাকে বিস্ময়বোধক বা আবেগসূচক বাক্য বলে। বিস্ময়সূচক বাক্য হল এমন বাক্য যেখানে কোনো আকস্মিক ঘটনা, বিস্ময়, আনন্দ, দুঃখ, ভয়, রাগ, ইত্যাদি প্রকাশ করা হয়। এই বাক্যগুলো সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে এবং কোনো অধীন বাক্যের উপর নির্ভরশীল হয় না। বিস্ময়সূচক বাক্যের শেষে বিস্ময়বোধক চিহ্ন (!) ব্যবহার করা হয়।
উদাহরণ:
- আহা! কী দেখিলাম!
- হায় রে পোড়া কপাল!
- বাব্বা! কত উন্নতি করেছ!
- হায় হায়! লোকটা অকালেই চলে গেল!
বিস্ময়সূচক বাক্যের বৈশিষ্ট্য:
- কোনো আকস্মিক ঘটনা, বিস্ময়, আনন্দ, দুঃখ, ভয়, রাগ, ইত্যাদি প্রকাশ করে।
- সম্পূর্ণ অর্থ প্রকাশ করে।
- কোনো অধীন বাক্যের উপর নির্ভরশীল হয় না।
- শেষে বিস্ময়বোধক চিহ্ন (!) ব্যবহার করা হয়।
(৬) কার্যকারণাত্মক বা শর্তসাপেক্ষ বাক্য(Conditional Sentence)- যে বাক্যের দ্বারা কোনো কারণ বা শর্ত প্রকাশ পায়, তাকে কার্যকারণাত্মক বা শর্তসাপেক্ষ বাক্য বলে।
উদাহরণ:
- যতক্ষন শ্বাস ততক্ষণ আশ।
- যদি ধোঁয়া দেখো বুঝবে আগুনও আছে।
- পড়তে হয়, নাহলে পিছিয়ে পড়তে হয়।
- যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা।
(৭) সন্দেহবাচক বাক্য বা সংশয়াত্মক বাক্য: যে বাক্যের দ্বারা বক্তার মনের সংশয় ও সন্দেহ প্রকাশিত হয় তাকে সন্দেহ বাচক বাক্য বা সংশয়াত্মক বাক্য বলে।
যেমন:—
- মরে গেছে হয়তো।
- এই বুঝি পা পিছলে পড়ে গেলাম।
- সময়ের কাটা যেন থেমে গেছে।
- বোধহয় ও পারবে।
নির্দেশক বাক্য / বিবৃতিমূলক বা বর্ণনামূলক বাক্য
যে বাক্যে কোন কিছুকে সাধারণ ভাবে বর্ণনা করা হয় , তাকে নির্দেশক বাক্য / বিবৃতিমূলক বাক্য বলে।
নির্দেশক বাক্য দুই প্রকারের- ক) ইতিবাচক/ হ্যাঁবাচক/অস্ত্যৰ্থক বাক্য খ) নেতিবাচক/না- বাচক/ নঞর্থক বাক্য
ক) ইতিবাচক/হ্যাঁ বাচক/অস্ত্যৰ্থক বাক্য: যে বাক্যে অর্থকে স্বীকৃতি দেওয়া হয় বা স্বীকার করা হয় তাকে ইতিবাচক বাক্য বলে। যেমন- আমি গান গাই।
খ) নেতিবাচক/না-বাচক/ নঞর্থক বাক্য: যে বাক্যে অর্থ 'না' অর্থে প্রকাশ করা হয় তাকে নেতিবাচক বাক্য বলে। যেমন- আমি গান গাই না।
গুণ অনুসারে বাক্য কত প্রকার ও কী কী ? উদাহরণ সহ বিস্তারিত আলোচনা।
উত্তর:—
গুণ অনুসারে বাক্য
একটি সার্থক বাক্যের তিনটি গুণ থাকা আবশ্যক। যথা:—
ক) আকাঙ্ক্ষা
খ) আসত্তি
গ) যোগ্যতা
নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো—
ক) আকাঙ্খা (Expectancy)
বাক্যের অর্থ পরিষ্কারভাবে বোঝার জন্য এক পদের পর অন্য পদ শলনার যে ইচ্ছা, তাই আকাঙ্ক্ষা। যেমন—
অশুদ্ধ বাক্য
সকালে বিছানা থেকে উঠেই ………। [বাক্যের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়েছে]
আমি তার বাড়ি ..…..।[বাক্যের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়েছে]
মিথ্যাবাদীকে কেউ .......।[বাক্যের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়েছে]
শুদ্ধ বাক্য
আমি তার বাড়ি যাবো।[বাক্যের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়েছে]
মিথ্যাবাদীকে কেউ বিশ্বাস করে না।[বাক্যের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়েছে]
সকালে বিছানা থেকে উঠেই আমি মুখ-হাত ধুই ।[বাক্যের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়েছে]
খ) আসত্তি/পদস্থাপন (Proximity)
বাক্যের অর্থসঙ্গতি রক্ষার জন্য সুশৃংখল পদবিন্যাসই আসত্তি।
অশুদ্ধ বাক্য —
আমরা বিদ্যালয়ে জন্য যাই শেখার লেখাপড়া ।[সঠিকভাবে বিন্যস্ত না হওয়ায় বক্তার মনোভাব স্পষ্ট বোঝা যায় না।]
শিক্ষক - শিক্ষিকাকে দরকার করা সম্মান। [বাক্য নয় — আসত্তি নেই]
স্কুলে আমি খেয়ে যাব ভাত। [বাক্য নয় — আসত্তি নেই]
শুদ্ধ বাক্য —
আমরা বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেখার জন্য যাই।[ বাক্যটিতে বক্তার মনোভাব সম্পন্নভাবে প্রকাশ পেয়েছে। সুতরাং বাক্যটি আসত্তি সম্পন্ন।
শিক্ষক -শিক্ষিকাকে সম্মান করা দরকার।[ বাক্যটিতে বক্তার মনোভাব সম্পন্নভাবে প্রকাশ পেয়েছে। সুতরাং বাক্যটি আসত্তি সম্পন্ন।
‘আমি ভাত খেয়ে স্কুলে যাব’ [ বাক্যটিতে বক্তার মনোভাব সম্পন্নভাবে প্রকাশ পেয়েছে। সুতরাং বাক্যটি আসত্তি সম্পন্ন।
গ) যোগ্যতা (Propriety)
বাক্যস্থিত পদসমূহের অন্তগত এবং ভাবগত মিলবন্ধনের নাম যোগ্যতা। যেমন –
অশুদ্ধ —
গোরুটি আকাশে উড়ছে। [বাক্য নয়, —গোরুর আকাশে ওড়ার যোগ্যতা নেই।]
বর্ষার রৌদ্র প্লাবনের সৃষ্টি করে। [ বাক্য নয় , —রোদ্র প্লাবনের সৃষ্টি করে না।]
ঝাঁট ঝাঁ রৌদ্রে আমরা ভিজে গেলাম। বাক্য নয়, — রৌদ্রে ভেজা যায় না।]
শুদ্ধ বাক্য —
পাখিটি আকাশে উড়ছে।[যোগ্যতা সম্পুর্ণ বাক্য]
ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে আমরা ভিজে গেলাম।[যোগ্যতা সম্পুর্ণ বাক্য]
ছোট্ট একটা দুলছে সন্ধ্যার বাতাসে।[যোগ্যতা সম্পুর্ণ বাক্য]
বাক্য রূপান্তর
বাক্যের অর্থ পরিবর্তন না করে বাক্যের প্রকাশভঙ্গি বা গঠনরীতিতে পরিবর্তন করাকেই বাক্য রূপান্তর বলা হয়।
সরল থেকে জটিল বাক্যে রূপান্তর
সরল বাক্যের কোন একটি অংশকে সম্প্রসারিত করে একটি খন্ডবাক্যে রূপান্তরিত
করতে হয় এবং তার খণ্ডবাক্যটির সঙ্গে মূল বাক্যের সংযোগ করতে উপরোক্ত সাপেক্ষ সর্বনাম বা সাপেক্ষ অব্যয়গুলোর কোনটি ব্যবহার করতে হয়। যেমনঃ
সরল বাক্য: ভাল ছেলেরা কম্পিউটারে বসেও ইন্টারনেটে পড়াশুনা করে।
জটিল বাক্য: যারা ভাল ছেলে, তারা কম্পিউটারে বসেও ইন্টারনেটে পড়াশুনা করে।
সরল বাক্য: ভিক্ষুককে ভিক্ষা দাও।
জটিল বাক্য: যে ভিক্ষা চায়, তাকে ভিক্ষা দাও।
সরল বাক্য: পড়া শোনা করলে চিন্তা কী?
জটিল বাক্য: যে পড়া শোনা করে, তার চিন্তা কী?
সরল বাক্য: অন্ধকে আলো দাও।
জটিল বাক্য যে অন্ধ, তাকে আলো দাও।
সরল বাক্য তোমার কথা আজীবন মনে থাকবে।
জটিল বাক্য যতদিন জীবিত থাকব, ততদিন তোমার কথা মনে থাকবে।
জটিল থেকে সরল বাক্যে রূপান্তর
জটিল বাক্যটির অপ্রধান/ আশ্রিত খণ্ডবাক্যটিকে একটি শব্দ বা শব্দাংশে পরিণত করে সরল বাক্যে রূপান্তর করতে হয়। যেমন:—
জটিল বাক্য: যত দিন বেঁচে থাকব, এ কথা মনে রাখব।
সরল বাক্য: আজীবন এ কথা মনে রাখব।
জটিল বাক্য: যদি দোষ স্বীকার কর তাহলে তোমাকে কোন শাস্তি দেব না।
দোষ স্বীকার করলে তোমাকে কোন শাস্তি দেব না।
যাদের বুদ্ধি নেই, তারাই এ কথা বিশ্বাস করবে।
সরল বাক্য: বুদ্ধিহীনরাই এ কথা বিশ্বাস করবে।
জটিল বাক্য: যদি কথা রাখেন, তাহলে আপনাকে বলতে পারি।
সরল বাক্য: কথা রাখলে আপনাকে বলতে পারি।
সরল থেকে যৌগিক বাক্যে রূপান্তর
সরল বাক্যের কোন অংশকে সম্প্রসারিত করে একটি পূর্ণ বাক্যে রূপান্তরিত করতে হয় এবং পূর্ণ বাক্যটির সঙ্গে মূল বাক্যের সংযোগ করতে উপরোক্ত অব্যয়গুলো ব্যবহার করতে হবে। যেমনঃ
সরল বাক্য: দোষ স্বীকার করলে তোমাকে কোন শাস্তি দেব না
যৌগিক বাক্য: দোষ স্বীকার কর, তাহলে তোমাকে কোন শাস্তি দেব না। (এক্ষেত্রে ‘তাহলে’ অব্যয়টি ব্যবহার না করলেও চলতো)
সরল বাক্য: আমি বহু কষ্টে শিক্ষা লাভ করেছি।
যৌগিক বাক্য: আমি বহু কষ্ট করেছি এবং/ ফলে শিক্ষা লাভ করেছি।
সরল বাক্য: পরিশ্রম করলে ফল পাবে।
যৌগিক বাক্য: পরিশ্রম করবে এবং ফল পাবে।
সরল বাক্য: মিথ্যা কথা বলে বিপদে পড়েছ।
যৌগিক বাক্য: মিথ্যা কথা বলেছ, তাই বিপদে পড়েছ।
যৌগিক থেকে সরল বাক্যে রূপান্তর
যৌগিক বাক্যে একাধিক সমাপিকা ক্রিয়া থাকে। অন্যদিকে সরল বাক্যে একটিই
সমাপিকা ক্রিয়া থাকে। তাই যৌগিক বাক্যের একটি সমাপিকা ক্রিয়াকে অপরিবর্তিত রেখে বাকিগুলোকে সমাপিকা ক্রিয়ায় পরিণত করতে হবে। যৌগিক বাক্যে একাধিক পূর্ণ বাক্য থাকে এবং তাদের সংযোগ করার জন্য একটি অব্যয় পদ থাকে। সেই অব্যয়টি বাদ দিতে হবে। যেমন:—
যৌগিক বাক্য: তার বয়স হয়েছে, কিন্তু বুদ্ধি হয়নি। (সমাপিকা ক্রিয়া হয়েছে, হয়নি)
সরল বাক্য: তার বয়স হলেও বুদ্ধি হয়নি। (‘ হয়েছে ’ সমাপিকা ক্রিয়াকে ‘ হলেও অসমাপিকা ক্রিয়ায় রূপান্তরিত করা হয়েছে)
যৌগিক বাক্য: মেঘ গর্জন করে, তবে ময়ূর নৃত্য করে। (সমাপিকা ক্রিয়া-করে ও করে)
সরল বাক্য: মেঘ গর্জন করলে ময়ূর নৃত্য করে। (‘ করে ’ সমাপিকা ক্রিয়াকে ‘ করলে ’ অসমাপিকা ক্রিয়ায় রূপান্তরিত করা হয়েছে)
যৌগিক বাক্য: সত্য কথা বলি নি, তাই বিপদে পড়েছি।
সরল বাক্য: সত্য কথা না বলে বিপদে পড়েছি।
যৌগিক বাক্য: তিনি ধনী ছিলেন কিন্তু সুখী ছিলেন না।
সরল বাক্য: তিনি ধনী হলেও সুখী ছিলেন না।
জটিল থেকে যৌগিক বাক্যে রূপান্তর
জটিল বাক্যকে যৌগিক বাক্যে রূপান্তর করতে হলে এই খণ্ডবাক্যগুলোর পরস্পর নির্ভরতা মুছে দিয়ে স্বাধীন করে দিতে হবে। এজন্য সাপেক্ষ সর্বনাম বা অব্যয়গুলো তুলে দিয়ে যৌগিক বাক্যে ব্যবহৃত অব্যয়গুলোর মধ্যে উপযুক্ত অব্যয়টি বসাতে হবে। পাশাপাশি ক্রিয়াপদের গঠনের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। যেমন
জটিল বাক্য: যদি সে কাল আসে, তাহলে আমি যাব।
যৌগিক বাক্য: সে কাল আসবে এবং আমি যাব।
জটিল বাক্য: যদিও তাঁর টাকা আছে, তবুও তিনি দান করেন না।
যৌগিক বাক্য: তাঁর টাকা আছে, কিন্তু তিনি দান করেন না।
জটিল বাক্য: যখন বিপদ আসে, তখন দুঃখও আসে।
যৌগিক বাক্য: বিপদ এবং দুঃখ এক সময়ে আসে।
জটিল বাক্য: সে যেমন কৃপণ তেমন চালাক।
যৌগিক বাক্য: সে কৃপণ ও চালাক।
যৌগিক থেকে জটিল বাক্যে রূপান্তর
যৌগিক বাক্যে দুইটি পূর্ণ বাক্য কোন অব্যয়ের দ্বারা যুক্ত থাকে। এই অব্যয়টি তুলে দিয়ে সাপেক্ষ সর্বনাম বা অব্যয়ের প্রথমটি প্রথম বাক্যের পূর্বে ও দ্বিতীয়টি দ্বিতীয় বাক্যের পূর্বে বসালেই জটিল বাক্যে রূপান্তরিত হবে। যেমনঃ
যৌগিক বাক্য: দোষ স্বীকার কর, তোমাকে কোন শাস্তি দেব না।
জটিল বাক্য: যদি দোষ স্বীকার কর, তাহলে তোমাকে কোন শাস্তি দেব না।
যৌগিক বাক্য: তিনি অত্যন্ত দরিদ্র কিন্তু তার হৃদয় অত্যন্ত মহৎ।
জটিল বাক্য: যদিও তিনি অত্যন্ত দরিদ্র, তবুও তার হৃদয় অত্যন্ত মহৎ।
যৌগিক বাক্য: এ গ্রামে একটি দরগাহ আছে, সেটি পাঠানযুগে নির্মিত।
জটিল বাক্য: এ গ্রামে যে দরগাহটি আছে, সেটি পাঠানযুগে নির্মিত।
যৌগিক বাক্য: তুমি বেশি নম্বর পেয়েছ সুতরাং তুমি প্রথম হবে।
জটিল বাক্য: যেহেতু তুমি বেশি নম্বর পেয়েছ সেহেতু তুমি প্রথম হবে।
যৌগিক বাক্য: শিশিরের বয়স যথাসময়ে ষোল হইল, কিন্তু সেটা স্বভাবের ষোলো।
জটিল বাক্য: যদিও শিশিরের বয়স ষোলো তথাপি সেটা স্বভাবের ষোল।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ বাক্য রূপান্তর:—
সরল বাক্য: তার বয়স বাড়লেও বুদ্ধি বাড়েনি।
জটিল বাক্য: যদিও তার বয়স বেড়েছে, তথাপি বুদ্ধি বাড়েনি ৷
যৌগিক বাক্য: তার বয়স বেড়েছে কিন্তু বুদ্ধি বাড়েনি।
সরল বাক্য: দরিদ্র হলেও তাঁর অন্তঃকরণ অতিশয় উচ্চ।
জটিল বাক্য: যদিও তিনি অত্যন্ত দরিদ্র, তথাপি তাঁর অন্তঃকরণ অতিশয় উচ্চ।
যৌগিক বাক্য: তিনি অত্যন্ত দরিদ্র, কিন্তু তাঁর অন্তঃকরণ অতিশয় উচ্চ।
সরল বাক্য: দোষ স্বীকার করলে তোমাকে কোনো শাস্তি দেব না।
জটিল বাক্য: যদি দোষ স্বীকার কর, তাহলে তোমাকে কোনো শাস্তি দেব না।
যৌগিক বাক্য: দোষ স্বীকার কর, তবে তোমাকে কোনো শাস্তি দেব না।
সরল বাক্য: কাল সে আসলে আমি যাব।
জটিল বাক্য: যদি সে কাল আসে, তাহলে আমি যাব।
যৌগিক বাক্য: সে কাল আসবে এবং আমি যাব।
সরল বাক্য: মেঘ গর্জন করলে ময়ূর নৃত্য করে।
জটিল বাক্য: যদি মেঘ গর্জন করে, তাহলে ময়ূর নৃত্য করে।
যৌগিক বাক্য; মেঘ গর্জন করে, তবে ময়ূর নৃত্য করে।
সরল বাক্য: মিথ্য কথা বলার জন্য তোমার পাপ হবে।
জটিল বাক্য: যেহেতু তুমি মিথ্যা বলেছ, সেহেতু তোমার পাপ হবে।
যৌগিক বাক্য: তুমি মিথ্যা বলেছ, সুতরাং তোমার পাপ হবে।
সরল বাক্য: সত্য কথা না বলে বিপদে পড়েছি।
জটিল বাক্য: যেহেতু আমি সত্য কথা বলিনি, সেহেতু আমি বিপদে পড়েছি।
যৌগিক বাক্য: সত্য কথা বলিনি, তাই বিপদে পড়েছি।
সরল বাক্য: সে পরিশ্রমী হলেও নির্বোধ।
জটিল বাক্য: যদিও সে পরিশ্রমী তথাপি নির্বোধ।
যৌগিক বাক্য: সে পরিশ্রমী বটে, কিন্তু নির্বোধ।
সরল বাক্য: পড়াশুনা করলে জীবনে উন্নতি করতে পারবে।
জটিল বাক্য: যদি পড়াশুনা কর, তাহলে জীবনে উন্নতি করতে পারবে।