প্রবন্ধ রচনা
- প্রবন্ধ রচনার কিছু কথা: —
এতদিন তোমরা অনুচ্ছেদ রচনার মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে তোমাদের মনের ভাব প্রকাশ করেছ। এবারে সেই বিষয়গুলিকে আরও বিস্ততভাবে প্রকাশ করার জন্য 'প্রবন্ধ' কথাটির সঙ্গে তোমাদের পরিচিত হতে হবে। প্রবন্ধ কথাটির অর্থ হল প্রকৃষ্টরূপে বন্ধনজাত কেনা। অতএব তোমার লেখার মধ্যে একটি সুন্দর পরম্পরা থাকবে, যাকে বলা হয় বন্ধন। প্রবন্ধ লিখতে হলে ভাবনার গভীরতা প্রয়োজন। তাই বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত লেখকদের লেখাগুলি পাঠ করবে।
- প্রবন্ধ রচনার কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের দিকে লক্ষ রাখবে—
(ক) প্রবন্ধ রচনার আগে বিষয়টিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে নিয়ে লিখতে হয় একাধিক অনুচ্ছেদে। তাই প্রত্যেক ভাগকে প্রথমেই লিখে নেবে, যাকে বলা হয় সংকেত-সূত্র।
(খ) সংকেত-সূত্রগুলি পরপর রচিত হবে, যাতে বিষয়টি খাপছাড়া না হয়ে যায়।
(গ) ভূমিকা, বর্ণনা বা মূল বিষয়, উপসংহার প্রভৃতির মাধ্যমে বক্তব্য বিস্তৃত হবে।
(ঘ) প্রবন্ধের ভাষা হবে সাবলীল, চলিতভাষাতেই লেখা তোমাদের পক্ষে উপযোগী। সাধু ও চলিত যেন মিশে না যায়।
(ঙ) একই কথার পুনরাবৃত্তি ভাষাকে দুর্বল করে, তাই একই কথা দুবার ব্যবহার করবে না।
(চ) তোমার রচনার মধ্যে বিখ্যাত কোনও উদ্ধৃতি ব্যবহার করা যেতে পারে।
(ছ) যতদূর সম্ভব নিজের বক্তব্য প্রকাশ করবে।
.............................................................................
বাংলার উৎসব
ভূমিকা: উৎসব মানবজীবনের একান্ত অপরিহার্য অঙ্গ। কর্মব্যস্ত এই পৃথিবীতে নানা প্রকারের উৎসব মানুষের দুঃখ, ক্লান্তি, হতাশা দূর করে নতুন জীবন দান করে। আমরা বাঙালি। আমাদের এই বাংলার বুকেও অনুষ্ঠিত হয় বহু উৎসব। মানুষে মানুষের মিলনের সেতুরূপ ওই উৎসবগুলি আমাদের পরম কাঙ্ক্ষিত।
বিভিন্ন উৎসব: আমাদের উৎসবগুলি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এরমধ্যে কয়েকটি উৎসব সামাজিক উৎসবের আখ্যা লাভ করেছে। যেমন-নববর্ষ, নবান্ন প্রভৃতি। কয়েকটি উৎসব আবার ধর্মীয় কারণে অনুষ্ঠিত হয়। যেমন-দুর্গাপূজা, লক্ষ্মীপূজা, সরস্বতীপূজা, রথযাত্রা, ইদুজ্জোহা, মহরম, সবেবরাত, বড়োদিন প্রভৃতি। এ ছাড়াও কয়েকটি উৎসব জাতীয় উৎসবের মর্যদা লাভ করেছে, যেমন-স্বাধীনতা দিবস, প্রজাতন্ত্র দিবস, নেতাজিজয়ন্তী, রবীন্দ্রজয়ন্তী প্রভৃতি।
উৎসবের সামাজিক দিক: সামাজিক, ধর্মীয় বা জাতীয় যে উৎসবই হোক না কেন তাকে কেন্দ্র করে আপামর বাঙালি বাঁধনহারা আনন্দে মেতে ওঠে। স্ত্রী-পুরুষ, নবীন-প্রবীণ সকলেই উৎসবের দিনে মানুষের শত্রুতা দূর করে মৈত্রী স্থাপনের সুযোগ করে দেয়। উৎসবকে দৈনন্দিন জীবনের গতানুগতিকতা থেকে মুক্তি লাভ করেন। উৎসব কেন্দ্র করে বহু মানুষের জীবিকানির্বাহ হয়। যেমন উৎসব উপলক্ষ্যে মেলায় মানুষের প্রয়োজনীয় জিনিস বিক্রি করে, মণ্ডপ নির্মাণ করে, আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করে বহু মানুষের অর্থাগম হয়। উৎসব আমাদের দেশের প্রাচীন সংস্কৃতি সম্পর্কে বর্তমান কালের মানুষদের শ্রদ্ধাশীল করে। ঐতিহ্যের প্রতি আকৃষ্ট করে। উৎসব মনের সংকীর্ণতা দূর করে মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ককে সুদৃঢ় করে।
উপসংহার: বাংলার উৎসব বাঙালি সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র। বাঙালির উচ্ছ্বাস, ভক্তি, ভালোবাসা, নানা ধরনের উৎসবের মধ্যে দিয়ে নব নব রূপে প্রবাহিত হয়ে চলেছে। উৎসব বাঙালির জীবনপ্রবাহকে আরও রুচিশীল ও সমৃদ্ধ করুক এটাই প্রার্থনা।
.................................................................................
ছাত্রজীবন
- ভূমিকা: মানুষ যতদিন বাঁচে ততদিনই শেখে। তাই স সারাজীবনই সে শিক্ষার্থী। । কিন্তু ছাত্র কথাটির অর্থ গুরুর মাথায় ছত্র বা ছাতা ধরে যে। অর্থাৎ ছাত্রজীবন গুরুর কাছ থেকে শিক্ষাগ্রহণের একটি নির্ধারিত সময়। তাই সাধারণত ছাত্রজীবন বলতে শৈশব, কৈশোর এবং তরুণ বয়সকে বোঝানো হয়।
- ছাত্রজীবনের উদ্দেশ্য : ছাত্রজীবন জীবনের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ছাত্রাবস্থায় মানুষ এই বিশ্বপ্রকৃতি বাসমাজের সঙ্গে পরিচিত হয়। জীবনের ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়, শুভ-অশুভের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ ঘটে। প্রকৃতির অপার রহস্যের দুয়ার তার সামনে উন্মুক্ত হয়। তাই ছাত্রজীবনে পাঠাভ্যাসই হল প্রধান কর্তব্য। শরীরচর্চাও ছাত্রজীবনের অবশ্য পালনীয় কর্তব্য। পুরাকালে ছাত্ররা গুরুগৃহে বাস করে শিক্ষালাভ করত। সেখানেই বিভিন্ন বিষয়ে পঠনপাঠনের সঙ্গে তারা লাঠিখেলা, প্রাণায়াম প্রভৃতি অভ্যাস করত এবং গুরুর সেবা করত। এইভাবে একদিন শিক্ষা সমাপনান্তে তারা স্বাবলম্বী হত।
- মানব জীবন ও ছাত্রজীবন: আজকের ছাত্র ভবিষ্যতের পূর্ণমানুষ। তাই ছাত্রজীবন থেকেই চরিত্র গঠনের প্রতি - মনোনিবেশ করা উচিত। বয়সোচিত কারণে ছাত্ররা অবুঝ ও অভিমানী হয়। বড়োদের ছাত্রজীবন ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। ছাত্ররা ছোটোবেলা থেকেই সদগুণ অভ্যাস করলে তাদের ভবিষ্যৎ জীবন সুখকর হয়। ছাত্রজীবন মানবজীবনেরই এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। ভবিষ্যতের সুনাগরিকের কর্তব্যবোধ ছাত্রবয়সেই অনুশীলন করা উচিত। এ বিষয়ে শিক্ষক ও অভিভাবকদের দায়িত্ব কম নয়। সমাজের প্রতি দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা প্রতিটি নাগরিকের অবশ্য কর্তব্য। ছাত্রবয়স শ্রেণিকক্ষের চারদেয়ালের মধ্যে শুধু নয় এই বিরাট সমাজ থেকে সেই কর্তব্য আহরণ করে।
- বর্তমানে ছাত্রজীবনের সুখ-দুঃখ: যুগ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থারও পরিবর্তন ঘটেছে। বর্তমান যুগে গুরুগৃহের স্থান নিয়েছে বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়। এখন ছাত্রজীবন অনেক বেশি পরীক্ষানির্ভর হয়ে উঠেছে। যদিও পাঠক্রমে খেলাধুলা বা শরীরচর্চাকে আজও গুরুত্ব দেওয়া হয়, তবু তাও সময়ে সময়ে হয়ে ওঠে 'নম্বর পাওয়ার উপায় মাত্র'। তবে সব জিনিসেরই ভালোমন্দ আছে। আজকে শিক্ষাব্যবস্থা অনেক বেশি বিজ্ঞানসম্মত বলে ছাত্রছাত্রীরা অল্প সময়ের মধ্যেই কোনও বিষয়ে অধিক অভিজ্ঞতা অর্জন করছে। আজকের দিনে ছাত্রছাত্রীরা মনোযোগী এবং পরিশ্রমী হলে তার জন্য উচ্চশিক্ষার সুযোগ অনেক বেশি। তাই ছাত্রজীবন আজ আর জীবনের একটা অধ্যায়মাত্র নয়, সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
- উপসংহার : ছাত্রজীবনের স্মৃতি ভবিষ্যৎ জীবনের এক সম্পদ। মানুষ যত বয়োপ্রাপ্ত হয় ততই শৈশব ও কৈশোরের অর্থাৎ ছাত্রজীবনের সুখদুঃখ মিশ্রিত স্মৃতি তার মনে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
No comments:
Post a Comment