Saturday

ক্রিয়াপদ I KRIYAPAD I BENGALI VERB

 ক্রিয়াপদ


ধাতুর প্রয়োগগত রূপ হল ক্রিয়া অর্থাৎ ধাতুর সঙ্গে ক্রিয়াবিভক্তি যুক্ত হয়ে যে পদ গঠিত হয়, তাকে বলে ক্রিয়াপদ। ক্রিয়াপদের দ্বারা কোনো কাজ করা অথবা হওয়া বোঝায়।

ক্রিয়াপদের উদাহরণ-- খেল্ + ইবে=খেলিবে, কর্+ই =করি, উঠ + এ = উঠে, বিস + এ = বসে ইত্যাদি।

ক্রিয়াপদের শ্রেণিবিভাগ বা রূপবৈচিত্র্য

ক্রিয়ার গঠনগত, অবস্থানগত, অন্বয়গত ও ক্রিয়া-বিভক্তি অনুযায়ী ক্রিয়াপদের নানা রূপভেদ দেখা যায়।

  • ক্রিয়ার গঠনগত শ্রেণিবিভাগ


১। মৌলিক ক্রিয়া: মৌলিক ধাতুর সঙ্গে ক্রিয়া-বিভক্তি যুক্ত হয়ে যে ক্রিয়াপদ গঠিত হয়, তাকে মৌলিক ক্রিয়া বলে। যেমন-রাম বই পড়ে (পড়+ এ = পড়ে), করিম বাড়ি চলিল (চল্ + ইল = চলিল)।

২। সাধিত ক্রিয়া: সাধিত ধাতুর সঙ্গে ক্রিয়া-বিভক্তি যুক্ত হয়ে সাধিত ক্রিয়া গঠিত হয়। এই ক্রিয়া তিন প্রকার-প্রযোজক ক্রিয়া, নামধাতুজ ক্রিয়া এবং ধ্বন্যাত্মক ক্রিয়া।

(ক) প্রযোজক ক্রিয়া: প্রযোজক ধাতুর সঙ্গে ক্রিয়া বিভক্তি যুক্ত হয়ে প্রযোজক ক্রিয়া গঠিত হয়। যেমন-নাচায় পুতুল দক্ষ বাজিকরে (√নাচ্ + আ = নাচায় নাচায়), সে গোরুকে ঘাস খাওয়াইল (√খা + ওয়া খাওয়া ইল খাওয়াইল)।

(খ) নামধাতুজ ক্রিয়া: নামধাতুর সঙ্গে ক্রিয়া-বিভক্তি যোগে নামধাতুজ ক্রিয়া গঠিত হয়। যেমন-আমার ঘড়িটি কে হাতাইয়াছে? (√ হাতা + ইয়াছে = হাতাইয়াছে), কালো মেঘের বুকে বিদ্যুৎ চমকায় (√চমকায় চমকায়)।

(গ) ধ্বন্যাত্মক ক্রিয়া: ধ্বন্যাত্মক ধাতুর সঙ্গে ক্রিয়া-বিভক্তি যুক্ত হয়ে যে ক্রিয়াপদ গঠিত হয়, তাকে ধ্বন্যাত্মক ক্রিয়া বলে। যেমন-আসছে কারা হনহনিয়ে (হনহন ইয়ে হনহনিয়ে), ভনভনিয়ে ইত্যাদি।

৩। সংযোগমূলক ক্রিয়া: বিশেষ্য, বিশেষণ ও অব্যয়ের সঙ্গে মৌলিক ধাতুসহযোগে সংযোগমূলক ধাতু গঠিত হয়। আর সংযোগমূলক ধাতুর পরে ক্রিয়া-বিভক্তি যুক্ত হয়ে যে ক্রিয়াপদ গঠিত হয় সেই ক্রিয়া যদি একটিমাত্র অর্থ প্রকাশ করে, তবে তাকে সংযোগমূলক ক্রিয়া বলে। যেমন-বরখাস্ত করিলেন (কির ইলেন) শোনো, আমাকে বধ করো (কর্ + অ), হেঁটে চলো (হেঁটে চল্ ও হেঁটে চলো)।

সংযোগমূলক ক্রিয়া দু-প্রকার-(ক) যুক্ত ক্রিয়া (খ) যৌগিক ক্রিয়া।

(ক) যুক্ত ক্রিয়া: যুক্ত ধাতুর পরে ক্রিয়া-বিভক্তি যুক্ত হয়ে যে ক্রিয়া গঠিত হয়, তাকে যুক্ত ক্রিয়া বলে। যেমন-সেলাম করা (কর্ + আ = করা) ছাপ মারা (মার্ + আ = মারা), ছড়া কাটা (কাট্ আ= কাটা)।

(খ) যৌগিক ক্রিয়া: অসমাপিকা ক্রিয়ার সঙ্গে অন্য ধাতুনিষ্পন্ন সমাপিকা ক্রিয়া যুক্ত হয়ে বিশিষ্ট অর্থ প্রকাশক ক্রিয়াপদ গঠন করলে তাকে যৌগিক ক্রিয়া বা মিশ্র ক্রিয়া বলে। যেমন-ছেলেটি বই পড়িতে লাগিল, এতে 'পড়িতে (পড়ু ইতে) অসমাপিকা ক্রিয়া, 'লাগিল' (√লাগ্‌ + ইল) সমাপিকা ক্রিয়া। অনুরূপ-বসিয়া পড়িল, হাসিতে লাগিল, জাগিয়া রহিল, কাটিয়া ফেলিল, নামিয়া গিয়াছে ইত্যাদি।

  • অবস্থানগত শ্রেণিবিভাগ 

১। সমাপিকা ক্রিয়া: যে ক্রিয়া ব্যবহার করলে বাক্যের গঠন ও অর্থ পূর্ণতা লাভ করে। আর কিছু বলার আকাঙ্ক্ষা থাকে না, তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে। সমাপিকা ক্রিয়ার প্রধান দুটি বৈশিষ্ট্য আছে-

(ক) অর্থের বিচারে সমাপিকা ক্রিয়া বক্তব্যের সমাপ্তিসূচক।

(খ) গঠনগত দিক থেকে বিচার করলে দেখা যাবে সমাপিকা ক্রিয়া বাক্যের শেষে বসে।

ধাতুর সঙ্গে নানা প্রত্যয় ও বিভক্তি যুক্ত হয়ে সমাপিকা ক্রিয়া গঠিত হয়। যেমন-প্রকার বিভক্তি, কাল বিভক্তি, পুরুষ বিভক্তি ও ভাব বিভক্তি। যেমন-


* সমাপিকা ক্রিয়া বাক্যের বিধেয় অংশের ক্রিয়া, তাই একে বিধেয় ক্রিয়াও বলা হয়।

২। অসমাপিকা ক্রিয়া: যে ক্রিয়া ব্যবহার করলে বাক্যের গঠন ও অর্থ পূর্ণতা লাভ করে না, অর্থের পূর্ণতার জন্য সমাপিকা ক্রিয়ার প্রয়োজন অনুভূত হয়, তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে। বাংলায় ইয়া, ইলে, ইতে ইত্যাদি প্রত্যয় যোগে অসমাপিকা ক্রিয়ার রূপ গঠিত হয়।

নাবিকেরা দিক নিরূপণ করিতে না পাড়িয়া বহর হইতে দূরে পড়িয়াছিল।

'নিরূপণ করিতে' ও 'না পাড়িয়া' অসমাপিকা ক্রিয়া। এগুলি বাক্যের গঠন ও অর্থকে পূর্ণরূপ দান করতে পারে না। তাই 'পড়িয়াছিল' সমাপিকা ক্রিয়াপদ ব্যবহারের প্রয়োজন হয়েছে।

'ইয়া' যোগে অসমাপিকা ক্রিয়া-করিয়া, দেখিয়া, শুনিয়া ইত্যাদি।

'ইলে' যোগে অসমাপিকা ক্রিয়া-করিলে, দেখিলে, শুনিলে ইত্যাদি।

'ইতে' যোগে অসমাপিকা ক্রিয়া-করিতে, দেখিতে, শুনিতে ইত্যাদি।


...............................................🌸...................................................
 যদি কোনও সুযোগে  আমার পোস্টে ত্রুটি থাকে  তবে মন্তব্যে আমাকে জানাতে দ্বিধা করবেন না।






No comments:

Post a Comment