'কাল' শব্দের অর্থ সময়। অস্তিত্ববান যা কিছু সবই এই সময়ের অধীন। অনাদি অতীত থেকে অনন্ত ভবিষ্যৎ - কাল নিরবধি। কোনও কিছুই সময়ের গ্রাসের বাইরে নয়। বস্তুত সময় সব কিছুকে 'কলন' বা গ্রাস করে বলেই সময়ের আরেক নাম কাল।
ক্রিয়ার কাল
যে সময়ে ক্রিয়াটি অনুষ্ঠিত হয়, তাকে ক্রিয়ার কাল বলে।
ক্রিয়ার কাল প্রধানত তিন প্রকার- বর্তমান, অতীত ও ভবিষ্যৎ।
বর্তমান কাল: যে ক্রিয়া চিরকালই ঘটে বা এখনও ঘটছে সেই ক্রিয়ার কালকে বর্তমান কাল বলা হয়।
অতীত কাল: যে ক্রিয়ার কাজ পূর্বেই শেষ হয়েছে, তার কালকে অতীত কাল বলে।
ভবিষ্যৎ কাল: যে ক্রিয়া এখনও ঘটেনি, পরে ঘটবে, তার কালকে ভবিষ্যৎ কাল বলে।
ক) বর্তমান কাল
যে ক্রিয়া চিরকালই ঘটে বা এখনও
ঘটছে সেই ক্রিয়ার কালকে
বর্তমান কাল বলা হয়।
উদাহরণ:
- তবে লিস্টি কর।
- হেথায় মানুষ বসত করে।
- তোমাকে সেই সকাল থেকে তোমার মতো মনে পড়ছে।
- তাই এখন পথে এসে দাঁড়িয়েছে সড়কের মাঝখানে।
১। সাধারণ বা নিত্য বর্তমান
২। ঘটমান বর্তমান
৩। পুরাঘটিত বর্তমান
৪। বর্তমান অনুজ্ঞা
বর্তমান কালের বিভিন্ন ভাগ গুলোর নিম্নে আলোচনা করা হলো --
১। সাধারণ বা নিত্য বর্তমান: ক্রিয়ার কাজ সাধারণ ভাবে হয় বোঝালে, অভ্যাসগত ভাবে হয়, চিরকাল ধরে কিছু ঘটে, নিয়মিত বা অনিয়মিত ভাবে কিছু ঘটে, এমন বোঝালে সেই কালকে সাধারণ বর্তমান কাল বলা হয়।
সাধারণ বা নিত্য বর্তমানে মূল ধাতুর সঙ্গে কোন কালবাচক প্রত্যয় যুক্ত হয় না। উত্তম, মাধ্যম ও প্রথম পুরুষে যথাক্রমে ই.অ এবং এ পুরুষবাচক বিভক্তি যুক্ত হয়। মধ্যম পুরুষের সম্ভ্রমার্থে এন এবং তুচ্ছার্থে নৈকট্য বোঝাতে ইস যুক্ত হয়ে থাকে। এইভাবে কর ধাতুর উত্তম পুরুষে কর+ই করি, মধ্যম পুরুষে কর+অ= কর, কর+এন করেন, কর+ইস = করিস। প্রথম পুরুষে কর+এ করে, কর+এন=করেনরূপ হয়।
যেমন: মন্ত্রশক্তিতে তোমরা বিশ্বাস কর না, কারণ আজকাল কেউ করে না, কিন্তু আমি করি।
সাধারণ বর্তমানের উদাহরণ:
- আমি খাই।
- রমা পড়ে।
- তুমি দেখো।
- অঙ্কিতা দিদিমণি বিদ্যালয়ে পড়ান।
- তুই সারাদিন খেলে বেড়াস। ইত্যাদি।
- "কেহ কাঁদে, কেহ গাঁটে কড়ি বাঁধে ঘরে ফিরিবার বেলা।"
- "ওরা চিরকাল টানে দাঁড়, ধরে থাকে হাল।"
- "দুঃখ সুখ দিবস রজনী মন্দ্রিত করিয়া তোলে জীবনের মহামন্ত্র ধ্বনি।"
- "ওই মহামানব আসে দিকে দিকে রোমাঞ্চ লাগে মর্তধূলির ঘাসে ঘাসে।"
সাধারণ বর্তমানের বিশিষ্ট প্রয়োগ ঐতিহাসিক বর্তমান (সাধারণ অতীত অর্থে):
- ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধ হয়।
- মহারাজ অশোক কলিঙ্গ জয় করেন।
- বিশ্বভারতী তাঁকে দেশিকোত্তম (ডি.লিট) উপাধিদানে সম্মানিত করেন।
ভবিষ্যৎ অর্থে: আশীর্বাদ করুন, যেন পাশ করি।
ঘটমান বর্তমান অর্থে: তোমার মুখ দেখেই বোঝা যায় (অর্থাৎ যাচ্ছে) তুমি কষ্টে আছো।
২। ঘটমান বর্তমান: ক্রিয়ার কাজ বর্তমানে চলছে অর্থাৎ এখন চলছে বোঝালে ঘটমান বর্তমান কাল হয়।
ঘটমান বর্তমানে মূল ধাতুর সঙ্গে ইতে অসমাপিকা ক্রিয়া প্রত্যয়, আছ ধাতু এবং পুরুষবাচক ক্রিয়াবিভক্তি (ই, অ এবং এ) যোগ করে ক্রিয়া রূপ গঠিত হয়।
উত্তম পুরুষে কর ধাতু+ইতে+আছ ধাতু ই= করিতেছি।
মধ্যম পুরুষের কর ধাতু ইতে আছ ধাতু+অ(এন,এস)= করিতেছ (করিতেছেন, করিতেছিস)
প্রথম পুরুষে কর ধাতু ইতে আছ ধাতু + এ (এন) =করিতেছে (করিতেছেন)
চলিত ভাষায় এদের রূপ হবে করছি, করছ (করছেন, করছিস), করছে (করছেন)।
ঘটমান
বর্তমানের উদাহরণ:
- ভরিয়া পরান শুনিতেছি গান।
- খেলিছ এ বিশ্ব লয়ে।
- মানুষই ফাঁদ পাতছে।
- তিনি কলকাতায় আসছেন সেতার বাজাতে।
- দুলিতেছে বিদ্যুতের দুল।
- পশ্চাতে রেখেছো যারে, সে তোমারে পশ্চাতে তারা টানছে।
- ঘটে ঘটে ক্ষরিতেছে ক্ষীর।
- আমার হিয়ায় চলছে রসের খেলা।
- ঝরিছে মুকুল, কুজিছে কোকিল
- ঠিক এই সময় আমি ভেসে চলেছি বিখ্যাত সেই ভূমধ্যসাগরের মধ্য দিয়ে।
৩। পুরাঘটিত বর্তমান: ক্রিয়ার কাজ শেষ হয়েছে কিন্তু তার ফল বর্তমান, এরূপ বোঝালে পুরাঘটিত বর্তমান কাল হয়।
পুরাঘটিত বর্তমানে মূল ধাতুর সঙ্গে ইয়া অসমাপিকা ক্রিয়া প্রত্যয়,
আছ ধাতু এবং পুরুষবাচক ক্রিয়াবিভক্তি (ই,অ এবং এ) যুক্ত হয়ে ভিন্ন ভিন্ন ক্রিয়ারূপের
গঠন হয়ে থাকে।
উত্তম পুরুষে কর ধাতু ইয়া+আছ+ই =করিয়াছি,
পড়য়াছি =√পড়+ইয়া+√আছ+ইলিখিয়াছি
= √লিখ+ইয়া+আছ+ই
মধ্যম পুরুষে করিয়াছ (করিয়াছেন, করিয়াছিস)।
প্রথম পুরুষে করিয়াছে (করিয়াছেন) চলিত ভাষায় এদের রূপ হবে যথাক্রমে করেছি, করেছ (করেছেন, করেছিস), করেছে (করেছেন)।
- দেখতে দেখতে গুচ্ছে গুচ্ছে উথলে উঠেছে ফুল।
- নৃপতির গর্ব নাশি করিয়াছ পথের ভিক্ষুক।
- কত রূপে সাজায়েছ এ ভুবন, কত রঙে রাঙায়েছ ফুলবন।
- বিজয়রথের চাকা উড়ায়েছে ধূলিজাল।
- দেখেছি নিত্যের জ্যোতি দুর্যোগের মায়ার আড়ালে।
- মহাপ্রাণ সহিয়াছে পলে পলে।
- চাহিতে এসেছি শুধু একখানি মালা।
৪। বর্তমান অনুজ্ঞা: ক্রিয়ার দ্বারা বর্তমান কালে কোনো আদেশ, অনুরোধ, প্রার্থনা, উপদেশ ইত্যাদি করা বোঝালে তাকে, বর্তমান অনুজ্ঞা কাল হিসেবে ধরা হয়।
এটি কেবলমাত্র মধ্যম পুরুষ ও প্রথম পুরুষের ক্রিয়ার ক্ষেত্রে প্রযুক্ত হয়ে থাকে। বর্তমান কালের অনুজ্ঞার সচরাচর মূল ধাতুর সঙ্গে উন, ইস, উক এই প্রত্যয়গুলি যুক্ত হয়ে ক্রিয়া রূপ গঠিত হয়ে থাকে।
উদাহরণ:
- প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে মোরে আরো আরো দাও প্রাণ।
- আপনি সত্বর প্রস্থান করুন।
- মা, আমায় মানুষ করো।
- সীতা-সাবিত্রীর মতো আদর্শ হও মা।
- এসো যুগান্তের কবি।
- দাঁড়াও ওই মানহারা মানবীর দ্বারে।
- দেহখানি তুলে ধরো, তোমার ওই দেবালয়ের প্রদীপ করো।
খ) অতীত কাল:
যে ক্রিয়ার কাজ পূর্বেই শেষ হয়েছে, তার কালকে অতীত কাল বলে।
উদাহরণ: সকলেই অবাক হইয়া তাকাইত, তিনি ভ্রূক্ষেপ মাত্র করিতেন না।
অতীত কালের কার্য-সংঘটনের সূক্ষ্মতার বিচারে আবার চারটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
অতীত কাল
১। সাধারণ বা নিত্য অতীত
২। ঘটমান অতীত
৩। পুরাঘটিত অতীত
৪। বর্তমান অনুজ্ঞা
কালের বিভিন্ন ভাগ গুলোর নিম্নে আলোচনা করা হলো ---
১। সাধারণ বা নিত্য অতীত: যে ক্রিয়া অতীতে নিষ্পন্ন হয়ে গেছে এবং যার ফলও বর্তমান নেই তার কালকে সাধারন অতীত বা নিত্য অতীত বলা হয়। সাধারণ বা নিত্য অতীতে মূল ধাতুর সঙ্গে অতীত কাল-বাচক 'ইল' প্রত্যয় এবং পুরুষ অনুসারে ক্রিয়াবিভক্তি (আম, এ, অ,এন,ই) যুক্ত হয়ে ক্রিয়া রূপের গঠন করে।
উত্তম পুরুষ: কর+ইল+আম = করিলাম মধ্যম পুরুষ: কর+ইল+এ (এন) = করিলে (করিলেন) প্রথম পুরুষ: কর+ইল+অ(এন) করিল (করিলেন) চলিত ভাষায় এদের রূপ যথাক্রমে হবে করলাম, করলুম, করলেন, করলে, করলি করল এবং করলেন।
উদাহরণ:
- অপরিচিত ছিল তোমার মানব রূপ উপেক্ষার আবেগ দৃষ্টিতে।
- করিলাম বাসা, মনে হল আশা। অশ্রুধারা আর্জিল মহীরে।
- অভিশাপ-রাত্রির আয়ু হল ক্ষয় রে।
- রিকশাগাড়ির সবটুকু খোলের মধ্যে এদের জায়গা হয়েছিল কি করে?
- কেন ওরকম কথা বললি?
- রবি কাকাকে বললুম, ছেড়ো না, আমরা শেষ পর্যন্ত লড়বো এজন্য।
২। ঘটমান অতীত: অতীতে কোনো এক সময় কোনো কাজ চলছিল বোঝালে ঘটমান অতীত কাল হয়। ঘটমান অতীতে মূল ধাতুর সঙ্গে ইতে প্রত্যয় আছ ধাতু অতীতকালবাচক ইল প্রত্যয় এবং পুরুষ অনুযায়ী ক্রিয়া বিভক্তি (আম, এ,এন, ই) যুক্ত ক্রিয়া রূপ গঠিত হয়।
উত্তম পুরুষ: কর+ইতে+আছ+ইল+আম=করিতেছিলাম।
মধ্যম পুরুষ: কর+ইতে+আছ+ইল+এ (এন,ই)= করিতেছিলে (করিতেছিলেন, করিতেছিলি)।
প্রথমপুরুষ: কর+ইতে+আছ+ইল+অ(এন) করিতেছিল (করিতেছিলেন)।
চলিত ভাষায় এই রূপগুলি হয় যথাক্রমে করছিলাম, করছিলুম, করছিলেন,
করিতেছিলেন, করছিলে, করছিলি, করছিলিস, করছিল, করছিলেন।
যেমন:
- আমরা ক্রিকেট খেলিতেছিলাম।
- শিশুরা খেলছিল মায়ের কোলে।
- কবির সঙ্গীতে বেজে উঠছিল সুন্দরের আরাধনা।
- আঁকিতে ছিল সে যত্নে সিঁদুর সীমান্তসীমা' পরে।
বিদ্রূপ করছিলে ভীষণকে।
- শঙ্কাকে চাচ্ছিলে হার মানাতে।
- ওই চেঁচামেচির মধ্যেই দু-একজন দু-একটা কথা বলতে
চেষ্টা করছিলেন।
- একটা চাপা বেদনা ওকে ধীরে ধীরে আচ্ছন্ন করে ফেলছিল।
- ওই পথ দিয়ে জরুরি দরকারে যাচ্ছিলাম ট্যাক্সি
করে।
৩। পুরাঘটিত অতীত: অতীতকালে সংঘটিত হয়েছিল, এমন ক্রিয়ার কালকে পুরাঘটিত অতীত বলা হয়। পুরাঘটিত অতীতে মূল ধাতুর সঙ্গে 'ইয়া' প্রত্যয় যোগ করে আছ ধাতু এবং তার পরে 'ইল্' ও পুরুষবাচক ক্রিয়াবিভক্তি (আম, এ, অ, এন ইত্যাদি) যোগ করে সমাপিকা ক্রিয়া গঠন করা হয়। যেমন: কর+ইয়া+আছ+ইল+আম।
উদাহরণ:
- তাঁহার মধ্যে নানা বৈপরীত্যের সমাবেশ ঘটিয়াছিল।
- লোকটাকে কেমন ঠেসে ধরেছিলুম।
- নোবেল প্রাইজ পেয়েছিলেন কবি রবীন্দ্রনাথ
ঠাকুর।
- মেঘলা দিনে দেখেছিলেম মাঠে।
- ওইরকম খেয়ে খেয়েই শরীর খানা ঠিক রেখেছিলেন
ভদ্রলোক।
৪। বর্তমান অনুজ্ঞা: অতীতে কোনো কাজ নিয়মিত হত বোঝাতে নিত্যবৃত্ত অতীত কাল হয়। নিত্যবৃত্ত অতীতের ক্রিয়ার গঠন সরল। ধাতুর উত্তর 'ইত' প্রত্যয় যোগ করে তার সাথে পুরুষ-বিভক্তি যোগ করলেই হয়। কর+ইত+আম = করিতাম , কর+ইত+এ (এন, ইস) করিতে (করিতেন, করিতিস) কর+ইত+অ(এন) = করিত (করিতেন)
যেমন:
- আমি বিদ্যালয়ে যাইতাম (যেতাম)। যাইতাম=√যা+ইত+আম। ('আম' পুরুষ বিভক্তি।)
- হাতের কাছে খাবার এলেই তলিয়ে দিতেম।
- লাফাইত, উড়িত, জানিত না কায়দা কানুন কাকে বলে।
- বুড়োকে ভালো বলে জানতুম।
- রাজবধূ রাজবালা আসিতেন ফুল সাজায়ে ডালায়।
গ) ভবিষ্যৎ কাল
ভবিষ্যৎ কাল বলতে বোঝায় আগামী সময়। যে ক্রিয়া এখনও ঘটেনি, পরে ঘটবে, তার কালকে ভবিষ্যৎ কাল বলে। উদাহরণ: আমরা খেলব, তুমি আসবে, রাম পড়বে না, তোমরা খেলতে থাকবে, ইত্যাদি।
ভবিষ্যৎ কালের কার্য-সংঘটনের সূক্ষ্মতার বিচারে আবার চারটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
১। সাধারণ বা নিত্য ভবিষ্যৎ
২। ঘটমান ভবিষ্যৎ
৩। পুরাঘটিত ভবিষ্যৎ
৪। ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞা
ভবিষ্যৎ কালের বিভিন্ন ভাগ গুলোর নিম্নে আলোচনা করা হলো ---
১। সাধারণ বা নিত্য ভবিষ্যৎ: সাধারণ ভাবে ভবিষ্যতে কিছু হবে বলা হলে সাধারণ ভবিষ্যৎ হয়।
সাধারণ ভবিষ্যতে ক্রিয়া গঠনের জন্য মূল ধাতুর সাথে কালবাচক ক্রিয়াচিহ্ন 'ইব' যোগ করে তার সঙ্গে পুরুষ অনুযায়ী ক্রিয়া বিভক্তি যোগ করতে হয়। যেমন: কর+ইব+অ = করিব , দেখ+ইব+অ = দেখিব
উদাহরণ:
- দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে যাবে না ফিরে।
- বরিব সত্যে, দূরিব মিথ্যা ভয়।
- কোথায় ভাসাইয়া দেবে সাম্রাজ্যের দেশ বেড়াজাল।
- প্রণমি তোমারে চলিব নাথ সংসার কাজে।
- মুক্ত হইব দেব ঋণে মোরা।
- তব পদতলে বসিয়া বিরলে শিখিব তোমার শিক্ষা।
- পথের ধারে বাজবে বেনু নদীর কূলে চরবে ধেনু।
২। ঘটমান ভবিষ্যৎ: যে ক্রিয়াটি ভবিষ্যতে হতে থাকবে, তার কালকে ঘটমান ভবিষ্যৎ বলা হয়।
ঘটমান ভবিষ্যতে মূল ধাতুর সঙ্গে ইতে প্রত্যয় যুক্ত হয় এবং তারপর আছ ধাতুর সঙ্গে ভবিষ্যৎ কালবাচক প্রত্যয় এবং পুরুষ অনুসারে বিভক্তি যুক্ত হয়ে ক্রিয়া রূপ গঠন করে। আছ এখানে থাক আকার ধারণ করে। [প্রত্যয় বা বিভক্তিযোগে মূল ধাতুর রূপান্তরকে আদেশ বলে- আছ> থাক]
যেমন: আমরা খেলব আর তুমি পড়তে থাকবে। (পড়িতে থাকিবে)। পড়+ইতে থাক+ইব+এ কর+ইতে থাক্+ইব = করিতে থাকিব
উদাহরণ:
- সেই সুর কর্ণে মোর আমরণ ধ্বনিতে থাকিবে।
- আপনি গাহিতে থাকিবেন আমি বাজাইতে থাকিব তাহারা দেখিতে থাকিবে।
- তুমি যখন পরীক্ষার পড়া পড়তে থাকবে তখন আমি পৃথিবীর পথে হাঁটতে থাকব।
- সে তখনও নেচে নেচে গান গাইতে থাকবে।
- যতই বাধা থাক তুমি কি এগোতে থাকবে না?
৩। পুরাঘটিত ভবিষ্যৎ: ভবিষ্যৎ কালে কোন ক্রিয়া নিষ্পন্ন হয়ে থাকবে অর্থাৎ ভবিষ্যতে কোনো ক্রিয়া সম্ভবত সংঘটিত হতে থাকবে এই অর্থে ক্রিয়ার কালকে পুরাঘটিত ভবিষ্যৎ বলে। পুরাঘটিত ভবিষ্যতে ক্রিয়াটি অতীতের ভাব ও কিছুটা বহন করে এই জন্য একে সম্ভাব্য অতীত বা সন্দিগ্ধ অতীতও বলা হয়।
ক্রিয়ার গঠন: মূল ধাতু+ইয়া+থাক্+ইব্+পুরুষ-বিভক্তি। যেমন: দেখিয়া থাকিব= ✓দেখ+ইয়া+থাক+ইব+অ।
উদাহরণ:
- হয়তো আমিই কথাটা তোমাদের বলে থাকব।(বলিয়া থাকিব)
- গেলাসটা মীরাই বোধহয় ভেঙে থাকবে। (ভাঙিয়া থাক)
- হয়তো দেখে থাকব, মনে নেই। (দেখিয়া থাকিব)
- সে হয়তো এতক্ষণে পৌঁছে গিয়ে থাকবে। (পৌঁছাইয়া গিয়া থাকিবে)
৪। ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞা: ভবিষ্যৎ কালে কাউকে কিছু করতে নির্দেশ দিলে, আদেশ, অনুরোধ বা পরামর্শ বোঝাতে ভবিষ্যৎ অনজ্ঞা হয়। মূল ক্রিয়ার সঙ্গে ভবিষ্যৎ কালবাচক ইব প্রত্যয় এবং মধ্যম ও প্রথম পুরুষের এ অথবা ইও ক্রিয়া বিভক্তি যুক্ত হয়। উত্তম পুরুষের অনজ্ঞা হয় না। যেমন : কর+ইব+এ = করিবে অথবা কর+ইও= করিও, কর+ইস্=করিস, কর+ইবেন = করিবেন
উদাহরণ:
- সৌভাগ্যগর্বে গর্বিত হইও না।
- দয়া করে একবারটি আসবেন।
- ওখানেই অপেক্ষা করিস
- যেও না রজনি তুমি লয়ে তারাদলে। কখনো মিথ্যা কথা বলবে না।
- পিতা-মাতাকে ভক্তি করিবে।
No comments:
Post a Comment