Header Ads Widget

সন্ধি | বাংলা ব্যাকরণে সন্ধি কাকে বলে | সন্ধির শ্রেণীবিভাগ | স্বরসন্ধি ও ব্যঞ্জনসন্ধির পার্থক্য

 

সন্ধি | বাংলা ব্যাকরণে সন্ধি কাকে বলে | সন্ধির শ্রেণীবিভাগ | স্বরসন্ধি

    আজ আমরা পড়ব বাংলা ব্যাকরণ  এর সন্ধি এর বিষয়ে। আমরা জানব বাংলা ভাষায় সন্ধি কাকে বলে, সন্ধি কত রকমের হয় ও কি কি, অর্থাৎ সন্ধির শ্রেণীবিভাগ, ইত্যাদি বিষয়ে।

    আমরা আপনাদের সাহায্যার্থে সন্ধি এর পুরো বিষয়টিকে খুব সহজ ভাবে আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চেয়েছি যাতে খুব সহজেয় এই বিষয় টি আপনাদের বোধগম্য হয়। এবং আজকের এই প্রয়াশ পঞ্চম শ্রেনি থেকে দশম শ্রেনি পর্যন্ত ছাত্র ছাত্রিদের কাজে লাগবে বলে আমরা আশা করি।

আসুন শিখি ও জানি ------------

সূচি তালিকা : 

১.সন্ধি কাকে বলে

২.সন্ধি কয় প্রকারের ও কি কি

৩.স্বরসন্ধি কাকে বলে

৪.স্বরসন্ধির কয়েকটি সূত্র ও উদাহরণ

৫.ব্যঞ্জনসন্ধি কাকে বলে

৬.ব্যঞ্জনসন্ধির শ্রেণিবিভাগ

৭.ব্যঞ্জনসন্ধির কয়েকটি সূত্র ও উদাহরণ

৮.নিপাতনে সিদ্ধ স্বরসন্ধি কাকে বলে

৯.নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধির উদাহরণ

১০.খাটি বাংলা সন্ধি কাকে বলে

১১.খাঁটি বাংলা সন্ধির উদাহরণ


প্রশ্ন : সন্ধি কাকে বলে ?

পরস্পর নিকটবর্তী দুই বর্ণের ধ্যানী গত মিলনের নাম সন্ধি। পূর্বপদের শেষের বর্ণের সঙ্গে পরপদের প্রথম বর্ণের মিলন ঘটে।  স্বরবর্ণের সঙ্গে স্বরবর্ণের ধ্বনিগত মিলন ঘটলে , তাকে স্বরসন্ধি বলে ।

প্রশ্ন :  সন্ধি কয় প্রকার ও কী কী ? 

সন্ধিতে বর্ণের সঙ্গে বর্ণের মিলন তিনভাবে ঘটে, সে অনুসারে সন্ধি তিন রকম : ১) স্বরসন্ধি  ২) ব্যঞ্জনসন্ধি  ৩) বিসর্গ সন্ধি 

স্বরসন্ধির কয়েকটি সূত্র ও উদাহরণ

 ১) অ-কার কিংবা আ-কারের পর অ-কার কিংবা আ-কার থাকলে উভয়ে মিলে আ-কার হয়; আ-কার পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়।

(ক) অ + অ = আ: চরণ+অমৃত =চরণামৃত।  শশ+অঙ্ক= শশাঙ্ক। স্ব+অধীন =স্বাধীন। নর + অধম = নরাধম। নব + অন্ন = নবান্ন। অদ্য+অপি = অদ্যাপি।

(খ) অ + আ = আ: হিম +আলয়= হিমালয় । সিংহ+ আসন = সিংহাসন। গ্রন্থ+ আগার =গ্রন্থাগার । রত্ন+ আকর= রত্নাকর। ক্ষুদ্র +আকৃতি =ক্ষুদ্রাকৃতি। প্র + আপ্তি = প্রাপ্তি।

(গ) আ + অ = আ: আশা+অতীত =আশাতীত। মহা+ অর্থ= মহার্ঘ। তথা + অপি = তথাপি। আজ্ঞা + অধীন = আজ্ঞাধীন।

(ঘ) আ + আ = আ: মহা +আশয় =মহাশয়। মহা স+ আকাশ = মহাকাশ। কারা +আগার = কারাগার। সদা + আনন্দ = সদানন্দ।

২) ই-কার কিংবা ঈ-কারের পর ই-কার কিংবা ঈ-কার থাকলে উভয়ে মিলে ঈ-কার হয়; ঈ-কার পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়।

(ক) ই + ই = ই: রবি + ইন্দ্র = রবীন্দ্র। অভি+ইষ্ট = অভীষ্ট। অতি + ইত= অতীত। মুনি + ইন্দ্র = মুনিন্দ্র। 

(খ) ই +ঈ = ঈ: ক্ষিতি+ঈশ =ক্ষিতীশ। প্রতি +ঈক্ষা= প্রতীক্ষা। নীতি + ঈশ = নীতিশ। গিরি + ঈশ = গিরীশ। অধি+ ঈশ্বর = অধীশ্বর। পরি+ ঈক্ষা = পরীক্ষা।

(গ) ই + ই = ঈ : সুধী + ইন্দ্র = সুধীন্দ্র। শচী + ইন্দ্র = শচীন্দ্র। যতী + ইন্দ্র = যতীন্দ্র। সতী + ইন্দ্র = সতীন্দ্র। (ঘ) ঈঈঈ পৃথ্বী ঈশ পৃথ্বীশ। মহী+ ঈশ্বর = মহীশ্বর। দিল্লি + ঈশ্বর = দিল্লীশ্বর। সতী ঈশ সতীশ।

৩) উ-কার কিংবা উ-কারের পর উ-কার কিংবা উ-কার থাকলে উভয়ে মিল উ-কার হয়; উ-কার পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়।

 (ক) উ+ উ = উ: মরু + উদ্যান =মরূদ্যান। কটু+ + উত্তি = কটূক্তি। সু+ উক্ত= সূক্ত। গুরু+ উপদেশ = গুরুপদেশ।

(খ) উ+ উ = উ: লঘু +উর্মি =লঘূর্মি। তবু+ ঊর্ধ্ব = তবুর্ধ্ব।

(গ) উ+ উ = উ: বহু+উক্তি =বহুস্তি। বহু +উৎসব = বধূৎসব।

(ঘ) উ+ উ = উ: ভূ + ঊর্ধ্ব =ভূর্ধ্ব। সরযূ +ঊর্মি = সরযূর্মি।

৪) অ-কার কিংবা আ-কারের পরে যুক্ত হয়। ই-কার কিংবা ঈ-কার থাকলে উভয়ে মিলে এ-কার হয়; এ-কার পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়।

(ক) অ + ই = এ : দেব+ইন্দ্র =দেবেন্দ্র। পূর্ণ +ইন্দু = পূর্ণেন্দু।

(খ) অ + ঈ = এ: গণ+ ঈশ= গণেশ। দেব+ ঈশ = দেবেশ।

(গ) আ + ই = এ: মহা+ ইন্দ্র =মহেন্দ্র। যথা + ইন্ট = যথেষ্ট।

(ঘ) আ + ঈ =এ: রমা +ঈশ =রমেশ। মহা+ঈশ্বর = মহেশ্বর।

৫) অ-কার কিংবা আ-কারের পর উ-কার কিংবা উ-কার থাকলে উভয়ে মিলে ও-কার হয়। ও-কার পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়।

(ক) অ+উ=ও: চন্দ্র+ উদয় =চন্দ্রোদয়। পর+ উপকার= পরোপকার।

(খ) অ + উ = ও: নব+উঢ়া =নবোড়া। এক +উনবিংশতি= একোনবিংশতি।

(গ) আ + উ = ও: কথা + উপকথন =কথোপকথন। দুর্গা+ উৎসব= দুর্গোৎসব।

(ঘ) আ + উ = ও: গঙ্গা+ উর্মি = গঙ্গোর্মি। মহা +উর্মি= মহোর্মি।

৬) অ-কার কিংবা আ-কারের পর ঋ থাকলে উভয়ে মিলে অর্ হয়; অর্-এর 'অ' পূর্ববর্ণে যুক্ত হয় এবং 'র' রেফ হয়ে পরবর্ণের মস্তকে যায়।

অ + ঋ = অর্: দেব+ ঋষি =দেবর্ষি। উত্তম + ঋণ = উত্তমর্ণ।

আ + ঋ = অর্: রাজা +ঋষি =রাজর্ষি। মহা + ঋষি = মহর্ষি।

[ব্যতিক্রম: অ-কার বা আ-কারের পর 'ঋত' (= কাতর) পদ থাকলে এক্ষেত্রে সন্ধিতে যে, + ঋ=আর্ : 'আর'-এর আ পূর্ববর্ণে যুক্ত হয় এবং র যথারীতি রেফ রূপে পরবর্ণের মস্তকে যায়; যেমন: শীত +ঋত= শীতার্ত (শীতর্ত নয়), ক্ষুধা + ঋত = ক্ষুধার্ত (ক্ষুর্ধর্ত নয়)]

৭) অ-কার কিংবা আ-কারের পর এ-কার কিংবা ঐ-কার থাকলে উভয়ে মিলে ঐ-কার হয়, ঐ-কার পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়।

(ক) অ + এ =ঐ: জন + এক = জনৈক। হিত +এষী = হিতৈষী।

(খ) আ + ঐ= ঐ: মত + ঐক্য মতৈক্য। পরম ঐশ্বর্য = পরমৈশ্বর্য।

(গ) আ + এ : তথা + এবচ= তথৈবচ। কৃষ্ণা +একাদশী = কৃষ্ণৈকাদশী।

(ঘ) আ + ঐ: মহা+ ঐশ্বর্য = মহৈশ্বর্য।

৮) অ-কার কিংবা আ-কারের পর ও-কার কিংবা উ-কার থাকলে উভয়ে মিলে ঔ-কার হয়, ঔ-করে পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়।

অ+ও: বন+ওষধি =বনৌষধি। জল +ওকা =জলৌকা।

অ+উ: পরম+ঔষধ =পরমৌষধ। চিত্ত+ঔদার্য= চিত্তৌদার্য।

আ+ও: মহা+ ওষধি মহৌষধি।

আ+:  মহা+ঔষধ  =মহৌষধ। মহা ঔৎসুক্য = মহৌৎসুক্য।

৯) ই-কার বা ঈ-কারের পরে ই বাঈ ভিন্ন অন্য স্বর থাকলে সন্ধিতে ই-ঈ-র স্থানে য (য-ফলা) হয়, এই 'ঘ' পূর্ববর্তী ব্যঞ্জনের সলো যুক্ত হয় এবং পরের স্বর সেই বর্ণে যুক্ত হয়।

ই+অ :অতি + অন্ত =অত্যন্ত। যদি +অপি= যদ্যপি।

ই+আ: অতি + আচার = অত্যাচার। পরি+ আলোচনা= পর্যালোচনা।

ই+উ: প্রতি + উপকার= প্রত্যুপকার। অভি+ উত্থান= অভ্যুত্থান।

ই+উ: প্রতি+ ঊষ= প্রত্যুষ।

ই+এ: প্রতি + এক = প্রত্যেক।

ই+ঐ: অতি + ঐশ্বর্য = অত্যৈশ্বর্য

১০)  উ-কার কিংবা উ-কারের পর উ বা উ ভিন অন্য স্বর থাকলে উ-কার বা উ-কারের স্থানে ব (ব-ফলা) হয়। ব পূর্ববর্ণে যুক্ত হয় এবং পরের স্বর সেই বর্ণে যুক্ত হয়।

উ+ অ: সু + অচ্ছ = স্বচ্ছ। সু +অল্প =স্বল্প। অনু + অয়= অন্বয়। পশু + অধম =পশ্চধম।

উ+ আ: সু + আগত স্বাগত। পশু আচার = পশ্বাচার।

উ+এ: অনু + এষণ = অন্বেষণ।

১১)  ঋ-কারের পর ঋ ছাড়া অন্য স্বর থাকলে খ-কারের স্থানে র (র-ফলা) হয়, র-পূর্ববর্ণে যুক্ত হয় এবং স্বর র-কারে যুক্ত হয়।

ঋ + অ : পিতৃ + অনুমতি = পিত্রনুমতি।

ঋ + আ: পিতৃ + আলয় = পিত্রালয়।

১২) এ-কার, ঐ-কার, ও-কার, ঔ-কারের পর স্বরবর্ণ থাকলে সন্ধিতে এ-কার স্থানে অয়, ঐ-কার সস্থানে আয়, ও-কার স্থানে অব, ঔ-কার স্থানে আৰু হয়। পরের স্বর এই আয়, আয়, অব্, আব্-এর সঙ্গে যুক্ত হয়।

এ+ অ: নে + অন = নয়ন। শে+ অন = শয়ন।

ঐ +অ: নৈ + অক= নায়ক। গৈ + অক = গায়ক।

ও + অ: পো + অন = পবন। ভো+ অন = ভবন।

ও + আ: গো + আদি গবাদি। গো আলয় = গবালয়। ও + এ : গো + এষণা = গবেষণা।

ঔ+ অ = পৌ + অক = পাবক।

ঔ+ ই: নৌ+ ইক = নাবিক।

ঔ+ উ: ভৌ + উক = ভাবুক।


নিপাতনে স্বরসন্ধি

কতকগুলি ক্ষেত্রে স্বরসন্ধির সাধারণ নিয়ম খাটে না। এইসব সন্ধিকে নিপাতনে সিদ্ধ বলা হয়। যেমন: মার্ত + অণ্ড = মার্তণ্ড ('মার্তাণ্ড' নয়)। গো + অক্ষ গবাক্ষ ('গবক্ষ' নয়)। অক্ষ+ উহিনী = অক্ষৌহিণী। সার + অঙ্গ = সারঙ্গ ('সারাঙ্গ' নয়)। শুদ্ধ ওদন = শুদ্ধোধন। সীমন্ + অন্ত = সীমন্ত (সিথি)। প্র + উচু = প্রৌঢ়।

আরো পড়ুন.........

নিপাতনে সিদ্ধ ব্যঞ্জনসন্ধি


Thanks 👍


NEXT PART COMMING SOON 

Post a Comment

0 Comments