- চর্যাপদ আবিষ্কার : "চর্যাচর্যবিনিশ্চয়" এর অর্থ- কোনটি আচরণীয় আর কোনোটি নয়। চর্যাপদ মূলত সহজিয়া বৌদ্ধদের ধর্মাবলম্বীদের সাহিত্য । মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ১৯০৭ সালে তৃতীয় বার লেপালে যাওয়ার পর তিনি নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থাগার থেকে চর্যাপদ আবিষ্কার করেন।
- চর্যাপদের প্রকাশ : মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে (১৩২৩ বঙ্গাব্দে) কলকাতার বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে "হাজার বছরের পুরাণ বাংলা ভাষার বৌদ্ধগান ও দোহা" নামে প্রকাশ করেন।
- চর্যাপদের সংখ্যা : চর্যাপদের মোট সংখ্যা ৫১ টি । উদ্ধারকৃত পদের সংখ্যা সাড়ে ৪৬ টি। খন্ডিত আকারে পাওয়া যায় ২৩ নম্বর পদটি। ২৪,২৫ ও ৪৮ নম্বর পদগুলি পাওয়া যায়নি । প্রাপ্তির তালিকা এগোনো হয়নি ১১নং পদটি (কারণ টীকা ভাষ্য নেই)।
- চর্যাপদের কবি সংখ্যা : আবিষ্কৃত পুঁথিটিতে ৫০টি চর্যায় মোট ২৩ জন ( মতান্তরে ২৪ জন) সিদ্ধাচার্যের নাম পাওয়া যায়।সহীদুল্লাহ সম্পর্কিত Buddhist Mystic(১৯৬০)গ্রন্থে ২৩জন কবির নাম উল্লেখ করেছেন। কিন্তু সুকুমার সেনের "বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস" (প্রথম খণ্ডে) ২৪ জন কবির নাম উল্লেখ করেছেন। এরা হলেন: লুই, কুক্কুরী, বিরুআ, গুণ্ডরী, চাটিল, ভুসুকু, কাহ্ন, কাম্বলাম্বর, ডোম্বী, শান্তি, মহিত্তা, বীণা, সরহ, শবর, আজদেব, ঢেণ্ঢণ, দারিক, ভাদে, তাড়ক, কঙ্কণ, জঅনন্দি, ধাম, তান্তী পা, লাড়ীডোম্বী। এঁদের মধ্যে লাড়ীডোম্বীর পদটি পাওয়া যায়নি। ২৪, ২৫ ও ৪৮ সংখ্যক পদগুলি হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আবিষ্কৃত পুঁথিতে না থাকলেও ডক্টর প্রবোধচন্দ্র বাগচী আবিষ্কৃত তিব্বতি অনুবাদে এগুলির রচয়িতার নাম উল্লিখিত হয়েছে যথাক্রমে কাহ্ন, তান্তী পা ও কুক্কুরী। এই নামগুলির অধিকাংশই তাঁদের ছদ্মনাম এবং ভনিতার শেষে তাঁরা নামের সঙ্গে 'পা' (<পদ) শব্দটি সম্ভ্রমবাচক অর্থে ব্যবহার করতেন।
- কবি পরিচয় :
" কাআ তরুবর পাঞ্চ বি ডাল।
চঞ্চল চীও পইঠা কাল।।"
২) কাহ্নপাদ:- চর্যার পুঁথিতে সর্বাধিক সংখ্যক পদের রচয়িতা কাহ্ন বা কাহ্নপাদ। ওড়িশার এক ব্রাহ্মণ বংশে জন্মগ্রহণ করেন বলে জানা যায়। শৌরসেনী অপভ্রংশ ও মাগধী অপভ্রংশজাত বাংলায় তিনি পদ রচনা করতেন। তিনি কৃষ্ণাচার্য, কৃষ্ণপাদ ও কৃষ্ণবজ্র নামেও পরিচিত। পুঁথিতে তাঁর মোট ১৩ টি পদ (পদ – ৭, ৯, ১১, ১২, ১৮, ১৯, ২৪, ৩৬, ৪০, ৪২ ও ৪৫) পাওয়া যায় কিন্তু তাঁর লিখিত ২৪ নং পদটি পাওয়া যায়নি।
৩) ভুসুকুপাদ:- ভুসুকুপা চর্যাপদের পদ রচয়িতার দিক থেকে দ্বিতীয় । তিনি পদ রচনা করেন ৮ টি (পদ – ৬, ২১, ২৩, ২৭, ৩০, ৪১, ৪৩, ৪৯)। তিনি নিজেকে বাঙালি বলে দাবি করেন। যে উক্তিটির মাধ্যমে নিজেকে বাঙালি বলে দাবি করেন সেটি হল:- "আজি ভুসুকু বাঙালি ভইলি"।
৪) সরহপাদ:- চারটি (পদ – ২২, ৩২, ৩৮, ৩৯),
৫) কুক্কুরীপাদ:- কুক্কুরীপাকে মহিলা কবি মনে করা হয়। তিনি তিনটি (পদ – ২, ২০, ৪৮) রচনা করেন।
৬) শান্তিপাদ:- দুটি (পদ – ১৫ ও ২৬) রচনা করেন।
৭) শবরপাদ:- চর্যাপদের শ্রেষ্ঠ কবি। ড. শহীদুল্লাহর মতে তিনি চর্যাপদের প্রাচীন কবি। তিনি দুইটি পদ (পদ – ২৮ ও ৫০) রচনা করেন।
একটি করে পদ রচনা করেন—
৮) বিরুআ (পদ ৩),
৯) গুণ্ডরী (পদ ৪),
১০) চাটিল (পদ ৫),
১১) কম্বলাম্বরপাদ (পদ ৮),
১২) ডোম্বীপাদ (পদ ১৪),
১৩) মহিণ্ডা (পদ ১৬),
১৪) বীণাপাদ (পদ ১৭),
১৫) আজদেব (পদ ৩১),
১৬) ঢেণ্ঢণ (পদ ৩৩),
১৭) দারিক (পদ ৩৪),
১৮) ভদ্রপাদ (পদ ৩৫),
১৯) তাড়ক (পদ ৩৭),
২০) কঙ্কণ (পদ ৪৪),
২১) জঅনন্দি (পদ ৪৬),
২২) ধাম (পদ ৪৭) ও
২৩) তান্তী পা (পদ ২৫, মূল বিলুপ্ত)।
২৪) নাড়ীডোম্বীপাদের পদটি পাওয়া যায়নি।
চঞ্চল চীও পইঠা কাল।।"
২) কাহ্নপাদ:- চর্যার পুঁথিতে সর্বাধিক সংখ্যক পদের রচয়িতা কাহ্ন বা কাহ্নপাদ। ওড়িশার এক ব্রাহ্মণ বংশে জন্মগ্রহণ করেন বলে জানা যায়। শৌরসেনী অপভ্রংশ ও মাগধী অপভ্রংশজাত বাংলায় তিনি পদ রচনা করতেন। তিনি কৃষ্ণাচার্য, কৃষ্ণপাদ ও কৃষ্ণবজ্র নামেও পরিচিত। পুঁথিতে তাঁর মোট ১৩ টি পদ (পদ – ৭, ৯, ১১, ১২, ১৮, ১৯, ২৪, ৩৬, ৪০, ৪২ ও ৪৫) পাওয়া যায় কিন্তু তাঁর লিখিত ২৪ নং পদটি পাওয়া যায়নি।
৩) ভুসুকুপাদ:- ভুসুকুপা চর্যাপদের পদ রচয়িতার দিক থেকে দ্বিতীয় । তিনি পদ রচনা করেন ৮ টি (পদ – ৬, ২১, ২৩, ২৭, ৩০, ৪১, ৪৩, ৪৯)। তিনি নিজেকে বাঙালি বলে দাবি করেন। যে উক্তিটির মাধ্যমে নিজেকে বাঙালি বলে দাবি করেন সেটি হল:- "আজি ভুসুকু বাঙালি ভইলি"।
৪) সরহপাদ:- চারটি (পদ – ২২, ৩২, ৩৮, ৩৯),
৫) কুক্কুরীপাদ:- কুক্কুরীপাকে মহিলা কবি মনে করা হয়। তিনি তিনটি (পদ – ২, ২০, ৪৮) রচনা করেন।
৬) শান্তিপাদ:- দুটি (পদ – ১৫ ও ২৬) রচনা করেন।
৭) শবরপাদ:- চর্যাপদের শ্রেষ্ঠ কবি। ড. শহীদুল্লাহর মতে তিনি চর্যাপদের প্রাচীন কবি। তিনি দুইটি পদ (পদ – ২৮ ও ৫০) রচনা করেন।
একটি করে পদ রচনা করেন—
৮) বিরুআ (পদ ৩),
৯) গুণ্ডরী (পদ ৪),
১০) চাটিল (পদ ৫),
১১) কম্বলাম্বরপাদ (পদ ৮),
১২) ডোম্বীপাদ (পদ ১৪),
১৩) মহিণ্ডা (পদ ১৬),
১৪) বীণাপাদ (পদ ১৭),
১৫) আজদেব (পদ ৩১),
১৬) ঢেণ্ঢণ (পদ ৩৩),
১৭) দারিক (পদ ৩৪),
১৮) ভদ্রপাদ (পদ ৩৫),
১৯) তাড়ক (পদ ৩৭),
২০) কঙ্কণ (পদ ৪৪),
২১) জঅনন্দি (পদ ৪৬),
২২) ধাম (পদ ৪৭) ও
২৩) তান্তী পা (পদ ২৫, মূল বিলুপ্ত)।
২৪) নাড়ীডোম্বীপাদের পদটি পাওয়া যায়নি।
- চর্যাপদের রচনাকাল : চর্যাপদের রচনাকাল সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতকে । চর্যাপদ রচনা শুরু হয় পাল বংশের আমলে ।কিন্তু চর্যাপদের রচনাকাল নিয়ে বিভিন্ন ভাষা তাত্ত্বিকদের মধ্যে বিভিন্ন মত পার্থক্য দেখা যায় । যেমন- ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে চট্টোপাধ্যায়ের মতে ৯৫০ খ্রিস্টাব্দ থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে। ড. শহীদুল্লাহর মতে ৬৫০ থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে। রাহুল সাংকৃত্যায়নের মতে অষ্টম থেকে একাদশ শতাব্দীর মধ্যে চর্যাপদ গুলি রচিত হয়।
- চর্যাপদের ভাষা : চর্যাপদ রচিত হয় মাত্রাবৃত্ত ছন্দে । এর ভাষা নিয়ে প্রথম আলোচনা করেন বিজয়চন্দ্র মজুমদার ১৯২০ সালে। চর্যাপদের প্রথম ভাষাতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করেন ডঃ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে। চর্যাপদ রচিত ভাষা --"সান্ধ্য বা আলো-আঁধারির ভাষা"। ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর মতে চর্যাপদের ভাষা --'বঙ্গ কামরূপী'।চর্যাপদে পাঁচটি ভাষার সংমিশ্রন রয়েছে। সেই ভাষা গুলি হল :- 'বাংলা', 'হিন্দি' ,'মৈথিলী', 'অসমীয়া' ও 'উড়িয়া'।
- চর্যাপদ অন্যান্য ভাষায় প্রকাশ প্রকাশ : চর্যাপদ তিব্বতি ভাষায় অনুবাদ করেন কীর্তিচন্দ্র । চর্যাপদের তিব্বতি ভাষায় অনুবাদ প্রকাশ করেন ডঃ. প্রবোধচন্দ্র বাগচী, ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে। চর্যাপদ মূলত- গানের সংকলন।
- চর্যাপদ ব্যাবহারিত প্রবাদ : চর্যাপদের প্রবাদ বাক্য পাওয়া গেছে ছটি। দুটি বিখ্যাত প্রবাদ বাক্য হল:-
২) দুহিলা দুধ কি বেন্টে সামায়।
সমাপ্ত
আরো পড়ুন —
শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য