বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডার
শব্দভাণ্ডার: পৃথিবীর যেকোনো ভাষার মূল সম্পদ হলো তার শব্দ ভান্ডার। ব্যক্তি ভাষার শব্দ ভান্ডার বলতে সেই ভাষায় লিখিত অলিখিত সমস্ত শব্দকেই বোঝায়। যে ভাষার শব্দভাণ্ডার যত বেশি সমৃদ্ধ সেই ভাষা তত বেশি ঐতিহ্যময় এবং বৈচিত্র্যময়।
যেকোনো ভাষার শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে প্রধানত তিনটি উপায়ে—
(ক) উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত, প্রাচীন শব্দের সাহায্যে
(খ) অন্য ভাষা থেকে গৃহীত, কৃতঋণ শব্দের সাহায্যে
(গ) নতুন ভাবে সৃষ্ট শব্দের সাহায্যে।
বাংলা শব্দভান্ডারের শ্রেণী : বাংলা শব্দভান্ডারের যতগুলো শব্দ রয়েছে সেগুলি কে আমরা তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত করতে পারি। যেমন—
১. মৌলিক শব্দ—(ক) তদ্ভব (খ) তৎসম (গ) অর্ধতৎসম।
২. আগন্তুক শব্দ—(ক) দেশি শব্দ (খ) বিদেশি শব্দ (গ) প্রাদেশিক শব্দ।
৩. নব্য গঠিত শব্দ—(ক) অবিমিশ্র (খ) মিশ্র।
(১) মৌলিক শব্দ: ‘মূল’ শব্দ থেকে মৌলিক শব্দের উৎপত্তি। এখানে মৌলিক শব্দ বলতে ভাষার মূল বুনিয়াদ বা ভিত গড়ে যে সকল শব্দ। অর্থাৎ প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষা থেকে যে সমস্ত শব্দ অবিকৃতভাবে বাংলায় এসেছে অথবা প্রাকৃতের মধ্য দিয়ে কিছুটা রূপান্তরিত হয়ে এসেছে সেগুলোকে বলা হয় মৌলিক শব্দ।
মৌলিক শব্দকে গুলোকে সাধারণত তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে। যেমন— (ক) তৎসম শব্দ (খ) তদ্ভব শব্দ (গ) অর্ধতৎসম।
(ক) তৎসম শব্দ: ‘তৎ’ মানে তার এবং ‘সম’ মানে সমান অর্থাৎ সংস্কৃত সমান।বাংলা শব্দ ভান্ডারে যে সকল শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে অপরিবর্তিত বা অবিকৃত রূপে সরাসরি বাংলা ভাষায় এসেছে বা এখনও আসছে, তাদের বলা হয় তৎসম শব্দ। যেমন— পুস্তক, অন্ন, মূর্খ, আকাশ, বন্ধু, শ্রদ্ধা, ভক্তি, পিতা, মাতা, পুত্র, কন্যা, অন্ন, পাপ, পুণ্য ইত্যাদি।
© তৎসম শব্দ চেনার উপায়:
১। সাধু ভাষায় ৮৫% শব্দই তৎসম শব্দ।
২ কোন শব্দের সাথে 'ণ কিংবা ষ' যুক্ত থাকলে এটি অবশ্যই তৎসম শব্দ। (যেমন : চাণক্য, মাণিক্য, তৃণ, পাষাণ, মানুষ)
৩। 'ক্ষ' যুক্ত শব্দ তৎসম শব্দ। (নক্ষত্র, চক্ষু, বক্ষ, শিক্ষা)
৪। '' যুক্ত শব্দ তৎসম শব্দ। (যক্ষ্মা)
৫। তৎসম উপসর্গ যুক্ত শব্দ তৎসম শব্দ। (প্রভাব, পরাজয়, অপমান)
৬। তৎসম সন্ধি সমূহ তৎসম শব্দ। (মনে রাখবে বিসর্গ সন্ধি সমূহের সবগুলোই তৎসম)
৭। তৎসম প্রত্যয় সমূহ তৎসম শব্দ ।(কারক, শ্রবণ, সাহিত্য, হৈমন্তিক)
৮। ভূ-মণ্ডল সম্পর্কিত শব্দগুলোর বেশির ভাগই তৎসম শব্দ। (চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্র)
৯। যে সকল শব্দে রেফ (') থাকবে এ সব শব্দ তৎসম শব্দ। (স্বতঃস্ফূর্ত, মূর্ধন্য, বিসর্গ, বর্ণ, বর্ষা)
১০ ফলা (যেমন- ফলা, র ফলা, য ফলা ইত্যাদি) শব্দ তৎসম শব্দ । (স্বজন, ব্যবহার, বিদ্যা, বিশ্বাস)
১১। তৎসম উপসর্গ (২০) টি। যেমন প্র, পরা, অপ ইত্যাদি যুক্ত শব্দ তৎসম শব্দ এবং তৎসম উপসর্গ (২০) টি যুক্ত শব্দ, তৎসম প্রত্যয়, তৎসম সন্ধি অবশ্যই তৎসম শব্দ।
© তৎসম শব্দ চেনার উপায়:
১। সাধু ভাষায় ৮৫% শব্দই তৎসম শব্দ।
২ কোন শব্দের সাথে 'ণ কিংবা ষ' যুক্ত থাকলে এটি অবশ্যই তৎসম শব্দ। (যেমন : চাণক্য, মাণিক্য, তৃণ, পাষাণ, মানুষ)
৩। 'ক্ষ' যুক্ত শব্দ তৎসম শব্দ। (নক্ষত্র, চক্ষু, বক্ষ, শিক্ষা)
৪। '' যুক্ত শব্দ তৎসম শব্দ। (যক্ষ্মা)
৫। তৎসম উপসর্গ যুক্ত শব্দ তৎসম শব্দ। (প্রভাব, পরাজয়, অপমান)
৬। তৎসম সন্ধি সমূহ তৎসম শব্দ। (মনে রাখবে বিসর্গ সন্ধি সমূহের সবগুলোই তৎসম)
৭। তৎসম প্রত্যয় সমূহ তৎসম শব্দ ।(কারক, শ্রবণ, সাহিত্য, হৈমন্তিক)
৮। ভূ-মণ্ডল সম্পর্কিত শব্দগুলোর বেশির ভাগই তৎসম শব্দ। (চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্র)
৯। যে সকল শব্দে রেফ (') থাকবে এ সব শব্দ তৎসম শব্দ। (স্বতঃস্ফূর্ত, মূর্ধন্য, বিসর্গ, বর্ণ, বর্ষা)
১০ ফলা (যেমন- ফলা, র ফলা, য ফলা ইত্যাদি) শব্দ তৎসম শব্দ । (স্বজন, ব্যবহার, বিদ্যা, বিশ্বাস)
১১। তৎসম উপসর্গ (২০) টি। যেমন প্র, পরা, অপ ইত্যাদি যুক্ত শব্দ তৎসম শব্দ এবং তৎসম উপসর্গ (২০) টি যুক্ত শব্দ, তৎসম প্রত্যয়, তৎসম সন্ধি অবশ্যই তৎসম শব্দ।
(খ) তদ্ভব শব্দ : ‘তৎ’ মানে তার আর ‘ভব’ মানে জাত বা জন্ম। অর্থাৎ যে সকল সংস্কৃত শব্দ প্রাকৃত বা অপভ্রংশের মধ্য দিয়ে পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষার শব্দভাণ্ডারে এসেছে, তাদের বলা হয় তদ্ভব শব্দ। যেমন— ভক্ত (সংস্কৃত) > ভত্ত (প্রাকৃত) > ভাত (বাংলা), উপাধ্যায় (সং) > উপাজঝাও (প্রা) > ওঝা (বাংলা), কৃষ্ণ(সং) > কন্হ > কান,কানাই, কর্ণ (সং) > কন্হ (প্রা) > কান, মৎস্য > মচ্ছ > মাছ, চন্দ্র > চন্দ > চাঁদ, মাতৃকা > মাইয়া > মেয়ে, ঘটিকা > ঘড়িই > ঘড়ি, খাদ্য > খজ্জ > খাজা, দীপশলাকা > দীবসল্লঈ > দিয়াশলাই > দেশলাই, স্বর্ণ > সোন্ন > সোনা, তিক্ত > চিত > তেতো, পাষাণ > পাহাড় >পাহাড়, অদ্য > অজ্জ > আজ, সন্ধ্যার > সংন্তার > সাঁতার, জ্যোৎস্না > জোণ্হা > জোনা, চন্দ্র (সং) > চন্দ (প্রা) > চান্দ (অপভ্রংশ) > চাঁদ (বাংলা) ইত্যাদি
(গ) অর্ধতৎসম শব্দ: নব্য ভারতীয় আর্য ভাষার গৃহীত বহু তৎসম শব্দ লোকের মুখে বিকৃতভাবে উচ্চারিত হয়, সেগুলিকে বলা হয় অর্ধ-তৎসম শব্দ।যেমন—গ্রাম >গেরাম,শ্রী> ছিরী, ভক্তি > ভকতি, রত্ন > রতন, শক্তি > শকতি, ক্ষুধা > ক্ষিদে, পুত্র > পুত্তুর, রাত্রি > রাত্তির,প্রণাম>পেন্নাম ইত্যাদি।
(২) আগন্তুক শব্দ : '‘আগন্তুক’ শব্দের অর্থ হল অতিথি বা বিদেশ থেকে এসেছে এমন’। অর্থাৎ অস্ট্রিক, দ্রাবিড়, মোঙ্গল প্রভৃতি গোষ্ঠীর ভাষা থেকে এবং ইন্দো-ইউরোপীয় গোষ্ঠীর অন্যান্য শাখার বিভিন্ন ভাষা থেকে আগত শব্দ গুলিকে বলা হয় আগন্তুক শব্দ।
আগন্তুক শব্দের শ্রেণীবিভাগ:
(ক) দেশি শব্দ
(খ) বিদেশি শব্দ
(গ) প্রাদেশিক শব্দ।
(ক) দেশি শব্দ: আর্যরা এ দেশে আসার পূর্বে যে সমস্ত প্রাচীন ভাষা প্রচলিত ছিল সেইসব ভাষার বহু শব্দ কখনো সরাসরি আবার কখনো প্রাকৃতের মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষায় প্রবেশ করেছে সেগুলো দেশি শব্দ। যেমন—
- দ্রাবিড় গোষ্ঠীর শব্দ—উলু, ঘড়া, খাল, মেটে, অকাল ইত্যাদি।
- অস্ট্রিক গোষ্ঠীর শব্দ—কম্বল, উচ্ছে, ঝিঙে, খোকা, পুরি, ঢেঁকি ইত্যাদি।
- মোঙ্গল গোষ্ঠীর শব্দ—ঠাকুর, চরুট ইত্যাদি।
(খ) বিদেশি শব্দ: বহু প্রাচীনকাল থেকেই (বানিজ্যিক, রাষ্ট্রীয় ও সাংস্কৃতিক কারণে) বহু বিদেশি জাতি এ দেশে বিভিন্ন কারণে এসেছে। তাদের ভাষা থেকে বাংলা ভাষায় গৃহীত শব্দ সমষ্টি কে বিদেশি ভাষা বলে। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকের পূর্বে গ্রীকদের সংস্পর্শে বেশকিছু গ্রিক শব্দ বাংলায় এসেছে। যেমন—
- আরবি : অকু (অবাঞ্ছিত ঘটনা), অকুফ, অছি, অছিলা, আকছার, আক্কেল, আখের, আজব, আজান, আতর, আদব, আদাব, আদম, আদায়, আদালত, আফিম, আমলা, আমানত, আমিন, আমির, আয়েশ, আরক, আরজি, আরশ, আলবত, আলাদা, আলেকুম, আলোয়ান, আল্লা, আসবাব, আসর, আসল, আসামি, আস্তাবল, আহম্মক, ইজারা, ইজ্জত, ইনাম, ইমান, ইমাম, ইমারত, ইল্লত, ইশারা, ইসলাম, ইস্তফা, ইস্তাহার, ইহুদি, ইদ, উকিল, উজির, উসুল, এখতিয়ার, এজমালি, এজলাস, এজাহার, এলাকা, এলেম (বিদ্যা), ওকালতি, ওজন, ওজর, ওমরাহ, ওয়াকিফ, ওয়ারিশ, ওয়াসিল, ওরফে, কড়ার, কতল, কদম, কদর, কবজা, কবর, কবালা, কবুল, কর্জ, কলপ, কলম, কসরত, কসাই, কসুর, কাওয়ালি, কাজিয়া, কাজি, কাতার, কানুন, কাফের, কাবাব, কাবিল, কামিজ, কায়দা, কায়েম, কালিয়া, কাহিল, কিসমত, কিস্তি, কুর্সি, কুলুপ, কুল্লে, কেচ্ছা, কেতা (কায়দা), কেরামত, কেল্লা, কৈফিয়ত, খত, খতম, খবর, খয়রাত, খসড়া, খাজনা, খাতির, খারাপ, খারিজ, খালাস, খালাসি, খালি, খাস, খাসা, খাসি, খুন, খেতাব, খেয়াল, খেলাত, খেলাপ, খেসারত খোলসা, গজল, গরজ, গরমিল, গরিব, গলদ, গাজি, গাপ, গাফিলতি, গায়েব, গোলাম, গোসল, গোসা, ছবি, জবাই, জবাব, জব্দ, জমা, জামানত, জমায়েত, জরিপ, জরুর, জলদি, জলসা, জলুস, জল্লাদ, জহর, জহরত, জাফরান, জাফরি, জাবেদা, জামিন, জারি, জালিয়াতি, জাহাজ, জাহির, জিনিস, জিম্মা, জুম্মা, জুলুম, জেরা, জেলা, তছরুপ, তদারক, তপশিল, তফাত, তবক, তবলা, তবিয়ত, তরজমা, তরফ, তবল, তল্লাশ, তসবির, তাগাদা, তাগিদ, তাজ, তাজিয়া, তাজ্জব, তামাশা, তারিখ, তারিফ, তালাক, তালিকা, তালিম, তালুক, তাস, তুফান, তুলকালাম, তেজারত, তেরিজ, তোফা, তোয়াক্কা, তোয়াজ, দখল, দফতর, দফা, দলিল, দাখিল, দাখিলা, দায়রা, দিক (বিরক্ত), দীন (ধর্ম), দুনিয়া, দেমাক, দোয়া, দোয়াত, দৌলত, নকশা, নকিব, নওবত, নগদ, নবাব, নবি, নসিব, নাগাত, নাজিম, নাজির, নাজেহাল, নায়েব, নূর, নেশা, ফকির, ফজর, ফতুয়া, ফতুর, ফতে, ফতোয়া, ফয়সালা, ফরাশ, ফসকা, ফসল, ফাজিল, ফানুস, ফায়দা, ফারাক, ফালাও, ফি, ফিকির, ফিরিস্তি, ফুরসত, ফেরার, ফেসাদ, ফৈজত, ফোয়ারা, ফৌজ, বকেয়া, বদর, বদল, বরকৎ (শ্রীবৃদ্ধি), বহর, বহাল, বাকি, বাজে, বাতিল, বাদ, বাবত, বায়না, বিদায়, বিলকুল, বিলাত > বিলায়ৎ, বিসমিল্লা, বুরুজ, বোরকা, মোকদ্দমা, মকুব, মক্কেল, মক্তব, মখমল, মজবুত, মজলিশ, মজুত, মঞ্জুর, মনিব, মফস্সল, মবলগ, মলম, মশগুল, মসজিদ, মসনদ, মসলন্দ, মসলা, মহকুমা, মহরম, মহল, মহল্লা, মাতব্বর, মানে, মাফ, মারফত, মালিক, মালুম,মাল্লা, মাশুল, মিছরি, মিছিল, মিয়াদ, মিসর, মুনশি, মুনাফা, মুরব্বি, মুলুক, মুশকিল, মুসলিম, মুসাফির, মুহুরি, মেজাজ, মেরাপ, দশি মেরামত, মোকাবিলা, মোকাম, মোক্তার, মোক্ষম, মোতাবেক, মোতায়েন, মোলাকাত, মোলায়েম, মৌরুসি, মৌসুম, রকম, রদী, রক্ষা, রাজি, রায়, রায়ত, রুজু, রেওয়াজ, রেকাব, রেয়াত, লাখেরাজ, শখ, শরবত, শরাব, শরিফ, শরিয়ত, শর্ত, শহিদ, শামা, শামিল, শুরু, শোহরত (ঢোল), শৌখিন, সওয়াল, সদর, সন, সনদ, সপ (লম্বা মাদুর), সফর, সরবতি, সলা, সহিস, সাজ (কুকর্মে সহযোগ), সাফ, সাবুদ, সাবেক, সালিশ, সাহেব, সুফি, সুবা, সেরকশ, সেরেফ, সেলাম, সোরাই, হক, হাকিম, হজম, হজরত, হদিস, হদ্দ, হদ্দমুদ্দ (বড়ো জোর), হয়রান, হরফ, হলকা, হলফ, হাউই, হাওয়া, হাওলা, হাওলাত, হাকিম, হাজত, হাজির, হাজি, হাবশি, হাবেলি, হামলা, হামাম, হারাম, হাল, হালুইকর, হালুয়া, হাসিল, হিম্মত, হিসাব, হিস্সা, হুজ্জত, হুঁকা, হুকুম, হুজুর, হেপাজত।ইত্যাদি।
- ফারসি: অন্দর, আইন, আন্দাজ, চশমা, চাকরি, কোমর, বেচারা, রাস্তা, কলম, কালি, দোয়াত, ময়দান, খুন, লাল, দোয়াত, সবজি, সাদা, ময়দা, দোকান, মোজা, মরশুম, কারিগর, কারখানা, দরখাস্ত রাস্তা, শিশি, সিন্দুক, রুমাল, রওনা, বিলেত প্রভৃতি।
ফারসি শব্দ চেনার উপায়:* আইন সংক্রান্ত সকল শব্দই আরবি কিন্তু ‘আইন’নিজেই ফারসি শব্দ।(যেমন: আদালত, এজলাস, হাকিম, মুহুরি, ইশতেহার, ইত্যাদি আইন বিষয়ক শব্দ তাই এগুলো আরবি শব্দ। শুধুমাত্র ‘আইন’ নিজেই ফারসি শব্দ।
* শব্দের শেষে 'কর/'গর' থাকলে তা ফারসি শব্দ। (সওদাগর, কারিগর, যাদুকর, বাজিকর, আয়কর)
* শব্দের শেষে 'বাজ' থাকলে ফারসি শব্দ। (চালবাজ, ধান্ধাবাজ, বোমাবাজ, রংবাজ, ধোঁকাবাজ, কলমবাজ)
* শব্দের শেষে 'বন্দি' থাকলে তা ফারসি শব্দ। (জবানবন্দি, সারিবন্দি, নজরবন্দি, গৃহবন্দি কারাবন্দি)
* ৬ টি প্রত্যয় (দার, বাজ, বন্দি, সই, চী, নবীশ) এই শব্দগুলো যদি শব্দের শেষে থাকে তবে সেই শব্দগুলো ফারসি শব্দ।(যেমন : দুর্নীতিবাজ, ঝাড়ুদার, চৌকিদার, অংশীদার, চাপাবাজ, ধোকাবাজ, রাজবন্দি, গৃহবন্দি, নজরবন্দি, কারাবন্দি, টেকসই, জুতসই, মানানসই, চলনসই, উদীচী, শিক্ষানবিশ ইত্যাদি।) বিঃ দ্রঃ মনে রাখা ভালো 'টিপসই' ও 'নামসই' শব্দ দুটোর 'সই' প্রত্যয় নয়। তাই 'টিপসই’ ও ‘নামসই' ফারসি শব্দ নয়।
- ফরাসি: রেনেসাঁ, রেস্তোরাঁ,মেনু, মাদাম, আঁতাত, কাফে, রেস্তোরাঁ, কার্তুজ, কূপন ইত্যাদি।
- পোর্তুগিজ: আতা, আনারস, আলমারি, আলপিন, পিস্তল, পেয়ারা, পেরেক, আলকাতরা, পেঁপে, কামরা, কামিজ, সাবান, তোয়ালে, গামলা, বালতি, জানালা, চাবি, বোতল, ইত্যাদি।
- ওলন্দাজ : ইস্কাবন, রুইতন, হরতন, তাস, তুরুপের, ইস্ক্রুপ ইত্যাদি।
- গ্রীক: সুরঙ্গ, কেন্দ্র, দাম ইত্যাদি।
- জার্মানি: নাৎসি, কিন্ডারগার্ডেন, নাজি ইত্যাদি।
- চিনা: চা, চিনি, চামচ, লুচি, লিচু ইত্যাদি।
- জাপানি : রিকশা, হারিকেন, হারিকিরি সুনামি, হাসনুহানা, টাইফুন ইত্যাদি।
- বর্মি : লুঙ্গি, ঘুঘনি ইত্যাদি।
- তুর্কি : আলখাল্লা, খাতুন, বেগম, উর্দু, উজবুক, কুলি, কাঁচি, চাকু, দারেগা, বাবা, বন্দুক, বারুদ, বোম, বিবি, বাহাদুর ইত্যাদি।
- রুশ : বলশেভিক, সোভিয়েত, স্পুটনিক, ভদকা ইত্যাদি।
- অস্ট্রেলিয়া: ক্যাঙ্গারু, বুমেরাং ইত্যাদি।
- মিশরীয় : ফ্যারাও, মিছরি ইত্যাদি।
- পেরু: কুইনিন ইত্যাদি।
- ইতালীয়: ম্যাজেন্টা ইত্যাদি।
- স্পেনীয়: তামাক, ডেঙ্গু ইত্যাদি।
- ইংরাজি: ভারতবর্ষ ইংরেজদের অধীনে আসার পর বাংলা ভাষায় প্রবেশ করল বহু ইংরেজি শব্দ। যেমন—পেন, পেনসিল, চক, ডাস্টার, স্টেশন, ট্রেন, বাস, ট্রাম, প্লেন, মোটর, রেল, অফিস,স্কুল, কলেজ, লাইব্রেরি, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, মাষ্টার, সিনেমা, থিয়েটার, অফিস, ব্যাঙ্ক ইত্যাদি।
(গ) প্রাদেশিক শব্দ: ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে বিভিন্ন ভাষার ব্যবহার হয়। সেইসব ভাষা থেকে অনেক শব্দ বাংলা ভাষার শব্দ ভান্ডরে প্রবেশ করে বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করেছে। এগুলিকে প্রতিবেশী বা প্রাদেশিক শব্দও বলা যায়। যেমন—
- গুজরাটি : হরতাল, তকলি, গরবা, খাদি, চরকা, বাঈ ইত্যাদি।
- মারাঠি : চৌথ, বর্গি, পেশোয়া, চামচা ইত্যাদি।
- তামিল : চুবুট, চেট্টি, পিলে, খড়া, মোট
- তেলেগু : প্যান্ডেল, পিলে।
- পাঞ্জাবি : শিখ, ভাঙড়া চাহিদা।
- হিন্দি : খানা, খাট, তাগড়া, কচুরি, কাহিনি, কোরা, হুন্ডি, বানি, চিকনাই, পায়দল, দাঙ্গা, ফালতু, বাত, বিমা, বেলচা, লোটা, খাট্টা, চামেলি, চালু, চাহিদা, লাগাতার, বাতাবরণ, চৌকশ, টিন, ঝাড়ু, ঝাঙা, ডেরা, তাম্বু, উতরাই, চড়াই, ইস্তক, আলাল, ওয়ালা, কেয়াবাত, কিসান, জওয়ান খান, বিমা, মজদুর, মোকাবেলা, জাহাজ, হাওয়া, হাওয়াই, লোটা, বর্ষাতি, গুণ্ডা, জঞ্জাল, কাহারবা, খাট্টা, গুলতি, ঘাটতি, জনার, জাড়, জিলিপি, দাদি, নয়া, পানি, বাজরা, বর্তন, বোঁচকা, সুলতান, বন্ধ, দেউড়ি, লোটা, চাপকান, চাপাটি, বহুৎ, তাগড়া, সাচ্চা, ফুটা, পুরি, লোটা, চৌকস।
(৩) নবগঠিত শব্দ: বাংলা শব্দভান্ডারে এমন কিছু শব্দ আছে সেগুলো আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নিজেরাই সৃষ্টি করে নিয়েছি।যেমন—
মিশ্র শব্দ : এক শ্রেণির শব্দের সঙ্গে (তৎসম, তদ্ভব, দেশি, বিদেশি) অপর শ্রেণির শব্দ বা প্রত্যয় ইত্যাদির যোগে তৈরি শব্দগুলোকে বলা হয় সংকর বা মিশ্র শব্দ। যেমন—
- তৎসম + তদ্ভব—আকাশ + গাঙ=আকাশগাঙ (গঙ্গা)
- তদ্ভব + তৎসম —কাজল (< কজল) লতা = কাজললতা
- তদ্ভব + তদ্ভব —বনচাড়াল, পদ্মফুল, আকাশগাঙ।
- তৎসম+ বিদেশি— হেডপণ্ডিত, কাগজপত্র, ভোটদাতা ইত্যাদি।
- তদ্ভব + বিদেশি—হাটবাজার, জামাইবাবু, শাকসবজি, কাজকারবার।
- তদ্ভব + তৎসম—পাহাড়পর্বত, কাজললতা, মাঝরাত্রি।
- বিদেশি + তদ্ভব—মাষ্টারমশাই, ডাক্তার-বদ্যি, অফিস পাড়া, রেলগাড়ি, হাফছুটি ইত্যাদি। বিদেশি + বিদেশি—উকিল-ব্যারিস্টার, হেডমিস্ত্রি, হেডমৌলবি, পুলিশসাহেব, জজসাহেব।
- বিদেশি প্রত্যয়যুক্ত মিশ্র শব্দ—পণ্ডিতগিরি, বাড়িওয়ালা, দারোয়ান, বাবুয়ানা, চালবাজ, বাজিগর, আত্মদান,ফুলদানি, ঘুষখোর, ডাক্তারখানা ইত্যাদি।
- বিদেশি উপসর্গযুক্ত মিশ্র শব্দ —বেহদ্দ, বেহাত, গরমিল ইত্যাদি।