Header Ads Widget

বাংলা উপভাষা | বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি


                         বাংলা উপভাষা                                 

বাংলা ভাষার উপভাষাসমূহ ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা- পরিবারের পূর্বাঞ্চলীয় ইন্দো-আর্য ভাষা দলের অংশ।রাঢ়ী ( নদীয়া ,বর্ধমান সহ দক্ষিণবঙ্গ), বরেন্দ্রী ( মালদহ ,মুর্শিদাবাদ সহ উত্তর-পশ্চিমবাংলা),রাজবংশী ( বাঁকুড়া , মেদিনীপুর সহ ঝাড়খন্ডের কিছু অংশ ), বরিশালি ( বরিশাল অঞ্চল ), নোয়াখালী ( নোয়াখালী অঞ্চল ), রংপুরি ( রংপুর অঞ্চল), খুলনা ( খুলনা অঞ্চল ), ময়মনসিংহ ( ময়মনসিংহ অঞ্চল), সিলেটি(সিলেট অঞ্চল) এবং চাঁটগাঁইয়া(চট্টগ্রাম অঞ্চল) পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের প্রধান কথ্য উপভাষা। যদিও এই ভাষাসমূহ বাংলা প্রতিবেশী উপভাষার সঙ্গে পারস্পরিক ভাবে বোধগম্য। বাংলা ভাষায় অঞ্চলভেদে ভিন্ন উচ্চারণ হয়ে থাকে, যেমন: পূর্ববঙ্গের ভাষায় বলা হয়, 'আমি অহন ভাত খামু না' যা পশ্চিমবঙ্গে বলা হয়, 'আমি এখন ভাত খাব না।'
ভাষাবিদ সুকুমার সেন বাংলা উপভাষার শ্রেণীবিন্যাস করেছেন। পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বাংলা ভাষা উচ্চারণ ভিত্তিতে আলাদা।

 বাংলা উপভাষা পাঁচ প্রকার: 
 ১) রাঢ়ী
 ২) বরেন্দ্রী
 ৩) কামরূপী / রাজবংশী
 ৪) বঙ্গালি  এবং
 ৫) ঝাড়খন্ডী।
নিম্নে পাঁচ টি উপভাষা সম্পর্কে আলোচনা করা হল :----
রাঢ়ী উপভাষা
ভৌগোলিক সীমা:- পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান , বাঁকুড়া (পূর্ব), হুগলী , হাওড়া, কলকাতা , উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা, নদীয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলায় এই উপভাষার প্রচলন লক্ষ্য করা যায়।
বৈশিষ্ট্য:-

  •  শব্দের যএ কোন স্থলে ব্যবহৃত 'অ'-এর 'ও' রূপে উচ্চারণ প্রবণতা।যেমন- অতুল >ওতুল, পাগল > পাগোল, মত > মতো।
  •  কর্তৃকারকের বহুবচনে 'গুলি', 'গুলো' এবং অন্য কারকের বহুবচনে 'দের' বিভক্তির  প্রয়োগ।

বঙ্গালি উপভাষা
ভৌগোলিক সীমা:- এটি অধুনা বাংলাদেশের প্রধান উপভাষা। ঢাকা, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, যশোর, খুলনা, ফরিদপুর , বরিশাল, নোয়াখালি র বিস্তির্ণ অঞ্চল জুড়ে আছে এই উপভাষা।
বৈশিষ্ট্য:-

  •   এ >এয্আ (কেন > ক্যান ) , উ >ও (মুলা > মোলা), ও >উ (দোষ >দুষ) ধ্বনিতে পরিবর্তন ঘটে।
  •  গৌণকর্মে 'রে' বিভক্তি প্রযুক্ত হয়।যেমন- আমারে মারে ক্যান। 

বরেন্দ্রী উপভাষা
ভৌগোলিক সীমা:- উত্তরবঙ্গের মালদহ, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর , বাংলাদেশের পাবনা, বগুড়া ও রাজশাহী জেলার লোকমুখের ভাষা হল এটি।
বৈশিষ্ট্য:-

  •  অপ্রত্যাশিত স্থানে 'র' আগম বা লোপ।যেমন- আম >রাম, রস >অস।
  •  গৌণকর্মে 'কে', 'ক' বিভক্তি দেখা যায়। যেমন- হামাক দাও।


ঝাড়খন্ডী উপভাষা
ভৌগোলিক সীমা:- পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, দক্ষিণ-পশ্চিম বাঁকুড়া ও সিংভূম অঞ্চলে এই উপভাষা প্রচলিত।
বৈশিষ্ট্য:-

  •  প্রায় সর্বত্র 'ও'-কার লুপ্ত হয়ে 'অ'-কারে পরিণত হয়েছে।যেমন- লোক > লক, মোটা>মটা।
  •  ক্রিয়াপদে স্বার্থিক 'ক' প্রত্যয়ের প্রচুর প্রয়োগ।যেমন- যাবেক, খাবেক, করবেক।

কামরূপী উপভাষা
ভৌগোলিক সীমা:- পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি , কোচবিহার ; অসমের কাছাড় ; ত্রিপুরা রাজ্য; ও বাংলাদেশের সিলেট , রংপুর অঞ্চলে এটি প্রচলিত। বরেন্দ্রী ও বঙ্গালি উপভাষার মিশ্রণে এই ভাষা গড়ে উঠেছে।
বৈশিষ্ট্য:-

  •  র এবং ড় ও ন এবং ল-এর বিপর্যয় লক্ষ করা যায়। যেমন- বাড়ি > বারি, জননী > জলনী।
  •  যৌগিক ক্রিয়াপদে 'খোয়া' ধাতুর ব্যবহার আছে। যেমন- রাগ করা >আগ খোয়া।

Featured post

অমৃতা প্রীতম | Amrita Pritam | অনুবাদ অনুষঙ্গ