অপিনিহিতি (Epenthesis)
শব্দের মধ্যে বা অন্তে 'ই' বা 'উ' থাকলে সেই 'ই' বা 'উ'-কে স্বস্থানের আগেই উচ্চারণ করে ফেলার রীতিকে অপিনিহিতি বলে।
আজি > আইজ (আ + জ্ + ই > আ + ই + জ)। এখানে 'জ'-এর পরস্থিত ‘ই' পূর্বে উচ্চারিত হয়ে 'আইজ' হয়েছে। ধ্বনি পরিবর্তনের এরকম রীতিকে বলা হয় 'অপিনিহিতি'।
['অপি' মানে পূর্বে, ‘নিহিতি' মানে স্থাপন। Epen = পূর্ব, Thesis = স্থাপন। অবশ্য সংস্কৃত 'অপি' শব্দটির দু-রকম অর্থ—(১) 'অপি = পূর্বে, যেমন 'কদাপি' (কদা + অপি) = পূর্বে কখনও; (২) ‘অপি' = উপরন্তু। যেমন— 'পুনরপি' (পুনঃ + অপি) = উপরন্তু ]
সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় প্রদত্ত 'অপিনিহিতি' শব্দের অর্থ হল, আগে এসে বসা। পূর্ববঙ্গের অধুনা বাংলাদেশের কথ্যভাষায় এই রীতির বহুল প্রচলন দেখা যায়।
১. "অপি' = পূর্বে অর্থে
- ই-কারের অপিনিহিতি : আজি > আইজ; রাতি > রাইত; কালি > কাইল।
- ‘উ’-কারের অপিনিহিতি : আশু > আউশ; সাধু > সাউধ; মাছুয়া > মাউছুয়া > মাউছা ।
২. 'অপি' = উপরস্তু অর্থে
কখনো কখনো সংশ্লিষ্ট স্বরধ্বনিটি স্বস্থানে থেকেও উপরন্তু ('অপি') আগে এসে উচ্চারিত হয়।
- ‘ই’-কারের অপিনিহিতি — করিয়া (ক্ + র্ + ই + আ) > কইর্যা [(ক্ + ই + র্ + অ্যা) (ই + আ > অ্যা)], রাখিয়া (র্ + আ + খ্ + ই + আ) > রাইখ্যা [(র্ + আ + ই + খৃ + অ্যা) (ই + আ > অ্যা)]।
- ‘য’-ফলার ই’-অংশের অপিনিহিতি — শব্দের মধ্যে যদি ব্যঞ্জনে য-ফলা থাকে, তাহলেও তার ক্ষেত্রে শুধু ই-অপিনিহিতি হয়। যেমন— সভ্য > সইভ্য; মান্য > মাইন্য; কাব্য > কাইব্য; কন্যা > কইন্যা।
- ক্ষ এবং জ্ঞ-এর ই-অপিনিহিতি — ক্ষ এবং জ্ঞ-এর উচ্চারণে ইঅ-র আভাস থাকে বলে এ দুটি যুক্ত ব্যঞ্জনের ক্ষেত্রেও ই-অপিনিহিতি হয়। যেমন- বক্ষ > বইক্ষ; যজ্ঞ > যইঞ্জ; আজ্ঞা > আইজ্ঞা।
0 Comments
Post a Comment