কালিদাস
সংস্কৃত ধ্রুপদী ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ কবি ও নাট্যকার মহাকবি কালিদাস । ধ্রুপদী সাহিত্যের তিনি সর্বকালের শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে বন্দিত। কবির আবির্ভাবকাল নিয়ে নানা সংশয় আছে। কারো মতে তিনি গুপ্ত যুগের কবি। আবার কারো মতে শুঙ্গ শাসনকালে তাঁর যাবতীয় রচনাগুলি সৃষ্টি করেছেন। কেউ বলেন, খ্রিস্টপূর্ব ১৮৫-৪৮ অব্দে তিনি আবির্ভূত হন। কেউ আবার বলেন, খ্রিস্টীয় চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ শতকই তাঁর আবির্ভাবকাল। তবে যাইহোক, গুপ্ত সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের সভাকবি হিসেবে তাঁর পরিচিতি সমধিক। সপ্তম শতাব্দীতে বাণভট্টের ‘হর্ষচরিত' গ্রন্থে কালিদাসের উল্লেখ আছে। শুধু তাঁর আবির্ভাবকাল নিয়ে নয়, সংশয় আছে তাঁর জন্মক্ষেত্র নিয়েও। মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ও ডক্টর স্মিথের মতানুসারে তিনি মালবের দশপুরে জন্মগ্রহণ করেন। এবং সেখান থেকেই তাঁর সঙ্গে উজ্জয়িনীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আবার কারো মতে তাঁর বাসস্থান ছিল উজ্জয়িনী। কেউ কলিঙ্গের কথাও বলেছেন। কথিত আছে সিংহলে রাজা কুমারদাসের রাজত্বকালে তাঁকে নাকি হত্যা করা হয়।
সাহিত্যকীর্তি
মহাকবি কালিদাসের সাহিত্যেকীর্তি নিম্নে আলোচনা করা হলো —
● কাব্য:——
১. ‘মেঘদূতম’—কাব্যটি গীতিধর্মী। কাব্যটি দুই খণ্ডে বিভক্ত—‘পূর্বমেঘ' ও ‘উত্তরমেঘ'।
২. 'কুমারসম্ভম্'—কাব্যটির সর্গ সংখ্যা ১৭টি। পর্বতশ্রেষ্ঠ হিমালয়ের বর্ণনা দিয়ে কাব্যের সূচনা।
৩. ‘রঘুবংশম' কাব্যের সর্গ সংখ্যা ১৯টি।
৪. ‘ঋতুসংহার'— ৬টি সর্গে বিভক্ত এই কাব্যে শ্লোক সংখ্যা ১৫৩টি।
এছাড়া ‘শৃঙ্গারসাষ্টক' ও 'পুষ্পবাণবিলাস' তাঁর লেখা দুটি কাব্য।
● আখ্যানকাব্য:— 'নলোদয়', 'দ্বাদশ পুত্তলিকা'
● নাটক:—
১. ‘মালবিকাগ্নিমিত্রম্' নাটকের অঙ্ক সংখ্যা ৫টি।
২. 'অভিজ্ঞানশকুন্তলম্'—৭ অঙ্ক বিশিষ্ট এই নাটকের কাহিনি নেওয়া হয়েছে মহাভারত থেকে।
৩. ‘বিক্রমোবর্শীয়ম' নাটকের অঙ্ক সংখ্যা ৫টি।
● কালিদাসের রচনার বাংলা অনুবাদ:—
মহাকবি কালিদাসের সমগ্র রচনার অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছিল জ্যোতিভূষণ চাকীর সম্পাদনায়। নবপত্র প্রকাশন থেকে এই গ্রন্থ ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে প্রথম প্রকাশিত হয়। প্রকাশক ছিলেন প্রসূন বসু। গ্রন্থটির প্রচ্ছদ তৈরি করেছিলেন গৌতম রায়। এরপর ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে গ্রন্থটির দ্বিতীয় প্রকাশ হয়েছিল।
নীচে কালিদাসের কোন্ রচনা বাংলায় কে অনুবাদ করেছিলেন তার তালিকা দেওয়া হল—
- মেঘদূতম্—ড. মুরারিমোহন সেন, বুদ্ধদেব বসু,
- কুমারসম্ভ্রম—ড. মুরারিমোহন সেন,
- রঘুবংশম্—জ্যোতিভূষণ চাকী ও রত্না বসু,
- অভিজ্ঞানশকুন্তলম্—জ্যোতিভূষণ চাকী,
- মালবিকাগ্নিমিত্রম্—রত্না বসু,
- বিক্রমোবর্শীয়ম্ —জ্যোতিভূষণ চাকী,
- নলোদয়—বেচারাম ঘোষ,
- শ্ৰুতবোধ—ড. শ্যামাপ্রসাদ ভট্টাচার্য,
- ঋতুসংহার—সুবুদ্ধিচরণ গোস্বামী,
- শৃঙ্গারসাষ্টক—জ্যোতিভূষণ চাকী,
- শৃঙ্গারতিলক—জ্যোতিভূষণ চাকী,
- পুষ্পবাণবিলাস—জ্যোতিভূষণ চাকী,
- দ্বাদশ পুত্তলিকা—সুরেন্দ্রনাথ দেব
● অন্যান্য ভাষায় অনুবাদ ও চলচ্চিত্র নির্মাণ— কালিদাসের রচনা ইংরেজি ভাষায় একাধিকবার অনূদিত হয়েছে। জার্মান ভাষাতেও কালিদাসের বেশ কিছু রচনার অনুবাদ হয়েছে। তাঁর কাব্য নাটক ও জীবন অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে একাধিক চলচ্চিত্র। ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে তেলেগু ভাষায় নির্মিত হয় ‘মহাকবি কালিদাস'। তাঁর ‘অভিজ্ঞানশকুন্তলম্' নিয়ে নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্র। ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত এই চলচ্চিত্রের পরিচালক ছিলেন ভি. শান্তারাম। পরবর্তীকালে ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে আর আর চন্দ্রের পরিচালনায় কালিদাসের জীবন নিয়ে নির্মিত হয়েছে তামিল চলচ্চিত্র ‘মহাকবি কালিদাস'। ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে কন্নড় ভাষায় নির্মিত হয় 'কবিরত্ন কালিদাস'।
0 Comments
Post a Comment