বাক্য নির্মাণের শর্ত
বাক্যগঠনের নিয়মনীতিকে বাংলা ব্যাকরণে বলা হয় অন্বয়, যাকে ইংরেজিতে বলে Syntax । শব্দগুলি পাশাপাশি থাকলেই বাক্য হয় না, শব্দগুলি পাশাপাশি সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে বসলে বাক্য হয়। এজন্য বাক্য নির্মাণের তিনটি শর্ত; যেমন—
1, যোগ্যতা ( propriety)
2, আকাঙ্ক্ষা (expectancy)
3, আসত্তি/পদস্থাপন রীতি (Proximity)
যোগ্যতা ( propriety)
পদসমষ্টির অর্থের দিক থেকে সংগতিপূর্ণ ভাবপ্রকাশের ক্ষমতাকে বলা হয় বাক্যের যোগ্যতা। এই ‘যোগ্যতা' না থাকলে বাক্য অশুদ্ধ হয়।
অশুদ্ধ বাক্য—
- হাতিটি আকাশে উড়ছে। [বাক্য নয়— হাতির আকাশে ওড়ার যোগ্যতা নেই।]
- ঝাঁ ঝাঁ রৌদ্রে আমরা ভিজে গেলাম। [বাক্য নয়— রৌদ্রে ভেজা যায় না।]
- ছেলেটি বাড়ির উঠোনে সাঁতার কাটছে। [বাক্য নয়—উঠোনে সাঁতার কাটা যায় না।]
এরকম যোগ্যতা (propriety) না-থাকা অশুদ্ধ বাক্যকে যোগ্যতাযুক্ত বাক্যে রূপান্তর করা যায়।
শুদ্ধ বাক্য—
- পাখিটি আকাশে উড়ছে। [যোগ্যতাযুক্ত বাক্য]
- ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে আমরা ভিজে গেলাম। [যোগ্যতাযুক্ত বাক্য]
- ছেলেটি বাড়ির পুকুরে সাঁতার কাটছে। [যোগ্যতাযুক্ত বাক্য]
আকাঙ্ক্ষা (Expectancy)
বাক্যে অর্থসম্পূর্ণতার জন্য যা জানার বাসনা হয়, তাকে বলে 'আকাঙ্খা'। এই 'আকাঙ্খা' পূরণ না হলে বাক্য অশুদ্ধ হয়।
অশুদ্ধ বাক্য—
- আমি তার বাড়ি .......। [বাক্য নয়—আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি।]
- সকালে বিছানা থেকে উঠেই বাক্য নয়—আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি।
- মিথ্যাবাদীকে কেউ ......।
এরকম কথায় কোনো বাক্য তৈরি হচ্ছে না। আর তার কারণ হল ভাবপ্রকাশের আকাঙ্ক্ষা (expectancy) মিটছে না। বাক্য হতে গেলে তাতে অর্থের পূর্ণতা থাকতে হবে।
এখন ভাবপ্রকাশের আকাঙ্ক্ষা (expectancy) পূর্ণ করে সঠিক বাক্যগঠন করা যাক।
শুদ্ধ বাক্য—
- আমি তার বাড়ি যাব। [বাক্যের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়েছে
- সকালে বিছানা থেকে উঠেই আমি মুখ-হাত ধুই। [বাক্যের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়েছে।
- মিথ্যাবাদীকে কেউ বিশ্বাস করে না। [বাক্যের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়েছে।
এইভাবে বাক্যের কিছুটা অংশ বলার পর বা শোনার পর বাক্যের অর্থ স্পষ্ট করার জন্য যে আগ্রহ তৈরি হয়, তাকে বলে বাক্যের আকাঙ্ক্ষা।
আসত্তি/পদস্থাপন রীতি (Proximity)
বাক্যের অর্থকে পরিস্ফুট করার জন্য বাক্যের অন্তর্গত পদগুলিকে ঠিকভাবে সাজানো বা পদবিন্যাস রীতিকে বলা হয় আসত্তি। এই 'আসত্তি' না থাকলে বাক্য অশুদ্ধ হয়।
অশুদ্ধ বাক্য—
- আমরা বিদ্যালয়ে জন্য যাই শেখার লেখাপড়া। [বাক্য নয় – আসত্তি নেই]
- শিক্ষক - শিক্ষিকাকে দরকার করা সম্মান। [বাক্য নয়—আসত্তি নেই
- পিতা-মাতারা যেন আমরা চান হই মানুষ। [বাক্য নয় – আসত্তি নেই]
এখন আসত্তি (proximity) বা পদসংস্থাপন রীতি ঠিক করে এগুলিকে বাক্য করা যাক।
শুদ্ধ বাক্য—
- আমরা বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেখার জন্য যাই। [আসত্তি আছে]
- শিক্ষক-শিক্ষিকাকে সম্মান করা দরকার। [আসত্তি আছে]
- পিতা-মাতারা চান আমরা যেন মানুষ হই। [আসত্তি আছে]
ধন্যবাদ।
ভালো লাগলে Share করুন।
0 Comments