কারক
‘কারক’ শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত রূপ: √কৃ + অক , যার অর্থ : যিনি করেন, যিনি নির্মাণ করেন, যিনি সৃষ্টি করেন ইত্যাদি।
ব্যাকরণে প্রয়োগগত অর্থ : বাক্যের অন্যান্য পদের সঙ্গে ক্রিয়ার সম্পর্ক হল ‘কারক’।
ব্যাকরণে প্রয়োগগত অর্থের মতো একই কথা বলেছেন সংস্কৃত বৈয়াকরণেরা। ‘ক্রিয়ান্বয়ী কারকম্’। বাক্যের অন্যান্য পদের সঙ্গে ক্রিয়ার সম্পর্ক হল কারক। কিন্তু বাক্যের কোনো পদের সঙ্গে ক্রিয়ার সম্পর্ক না থাকলে কী হবে? তা কারক হবে না। তা অ-কারক। যেমন--
(১) বাবা রাত্রিতে কবিতা লেখেন। বাক্যের ক্রিয়া হল ‘লেখেন'। 'লেখেন' ক্রিয়ার সঙ্গে বাক্যের অন্যান্য পদের কী সম্পর্ক আছে জানতে হলে ‘কে’, ‘কী’, ‘কখন’ দিয়ে ‘লেখেন’ ক্রিয়াকে প্রশ্ন করলে • 'কী' লেখেন-কবিতা সম্পর্ক জানা যাবে। পাশের বক্সে দেখা গেল প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরে ক্রিয়ার সঙ্গে বাক্যের বাকি পদের সম্পর্ক স্পষ্ট। এই সম্পর্ক কারক-সম্পর্ক।
• 'কে' লেখেন : বাবা
• ‘কখন' লেখেন : রাত্রিতে
এই আলোচনা থেকে স্পষ্ট সিদ্ধান্ত হল:
কারক: বাক্যের ক্রিয়ার সঙ্গে ওই বাক্যের যে পদ বা যে যে পদের সম্পর্ক থাকে, তা কারক (Case)।
অ-কারক: বাক্যের ক্রিয়ার সঙ্গে ওই বাক্যের কোনো পদের সম্পর্ক না থাকলে, তা অ-কারক।
লক্ষণীয় : বাংলা কারকে ক্রিয়ার সঙ্গে বাক্যস্থ পদের সম্পর্কই শুধু কারক নয়, অর্থগত সম্পর্কও গুরুত্বপূর্ণ। ওপরের প্রথম বাক্যে ‘বাবা’ কবিতা লেখার কাজ করেন। 'লেখা' ক্রিয়া সম্পাদনের অর্থপ্রকাশক হিসেবে ‘বাবা’ হলেন কর্তা বা কর্তৃকারক। ‘লেখা’ ক্রিয়ার দ্বারা যে কাজ সম্পন্ন হচ্ছে তা ‘কবিতা'। কবিতা কর্ম অর্থ প্রকাশ করছে। কাজেই 'কবিতা' কর্মকারক। কবিতা লেখার কাজ সম্পন্ন হচ্ছে ‘রাত্রিতে”। কবিতা লেখা কাজের সময়ের অর্থপ্রকাশক পদ হল ‘রাত্রি’। ‘রাত্রিতে অধিকরণকারক। কাজেই বাংলা কারকে ক্রিয়ার সঙ্গে বাক্যের অন্য পদের শুধু সম্পর্কই নয়, অর্থগত যোগও গুরুত্বপূর্ণ।
কারকের শ্রেণিবিভাগ
কারক কী —সে সম্পর্কে আমাদের সাধারণ ধারণা হয়েছে। আমরা এখন কারকের শ্রেণিবিভাগ নিয়ে আলোচনা করব।
রানী ভবানী প্রতিদিন প্রভাতে ভাণ্ডার হতে স্বহস্তে দীনদুঃখীকে ধনরত্ন দান করতেন।
এটি একটি বাক্য। এই বাক্যে ‘করতেন' ক্রিয়ার সঙ্গে বিভিন্ন পদের নানা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। ‘করতেন' ক্রিয়াকে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করে তা পরিষ্কার করে জেনে নেওয়া যায়। মনে রাখতে হবে, ক্রিয়ার সঙ্গে বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের এই সম্পর্কই কারক-সম্পর্ক।
* বিভিন্ন পদের সঙ্গে ক্রিয়ার কারক-সম্পর্ক :
প্র: কে দান করতেন ?
উত্তর: রানী ভবানী (কর্তৃ-সম্পর্ক)
প্র: কাদের জন্য দিচ্ছেন ?
উত্তর: দীনদুঃখীকে(নিমিত্ত সম্পর্ক)
প্র: কী দান করতেন ?
উত্তর: ধনরত্ন (কর্ম সম্পর্ক)
প্র: কোথা থেকে দিচ্ছেন?
উত্তর: ভাণ্ডার হইতে (অপাদান সম্পর্ক)
প্র: কখন দিচ্ছেন ?
উত্তর: প্রভাতে (অধিকরণ সম্পর্ক)
প্র: কী দিয়ে দিচ্ছেন ?
উত্তর: হাত দিয়ে (করণ সম্পর্ক)
বিভিন্ন পদের সঙ্গে ক্রিয়ার কারক সম্পর্ক অনুযায়ী কারক ছ প্রকার- কর্তৃ, কর্ম, করণ, নিমিত্ত, অপাদান ও অধিকরণ।
কর্তৃকারক
ক্রিয়া হল কাজ। যে কাজ করে, সে কর্তা। যেমন:
(১) যদু লেখে। (২) লীলা বই পড়ে। (৩) বীণা গান গায় আর নাচে।
প্রথম বাক্যে ‘লেখা’ কাজের কর্তা ‘যদু’। দ্বিতীয় বাক্যে ‘বই পড়া’ কাজের কর্তা ‘লীলা’। তৃতীয় বাক্যে ‘গাওয়া’ ও ‘নাচা’ দুটি কাজেরই কর্তা ‘বীণা’। তা ছাড়া প্রতিটি বাক্যে ক্রিয়াকে ‘কে’ দিয়ে প্রশ্ন করলে ক্রিয়ার সঙ্গে ‘যদু’, ‘লীলা’ ও ‘বীণা’-র কর্তৃ-সম্পর্ক বেরিয়ে আসে।
সংজ্ঞা: যে ক্রিয়া নিষ্পন্ন করে, সে কর্তা। 'ক্রিয়ার সঙ্গে কর্তৃ-সম্বন্ধযুক্ত পদকে বলা হয় কর্তৃকারক (Nominative Case)। যেমন: (১) 'বনে থাকে বাঘ, গাছে থাকে পাখি।' (২) 'পাটনাতে এসেছেন সাধু রামানন্দ।'
প্রতিটি বাক্যের ক্রিয়াকে ‘কে’ দিয়ে প্রশ্ন করতে যে উত্তর পাওয়া গেছে, তা হল ওই ক্রিয়ার কর্তা। ক্রিয়াকে ‘কী’ দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর মেলে, তাও কর্তা হয়। যেমন—গাড়ি ছুটছে। ‘কী’ ছুটছে ? ‘গাড়ি’–কর্তা।
কর্তৃকারকের প্রকারভেদ
- প্রযোজক কর্তা : কর্তা নিজে কাজ না করে অপরকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিলে, তাকে বলা হয় প্রযোজক কর্তা। মা ছেলেকে চাঁদ দেখান। “চাঁদ দেখা’ কাজটি মা ছেলেকে দিয়ে করিয়ে নেন। ‘মা’-প্রযোজক কর্তা। এরকম—‘মোক্ষদা ছাগলশিশুকে সযত্নে ফ্যানজল খাওয়াত।' দিদিমণি মেয়েটিকে ইংরেজি পড়াবেন।
- প্রযোজ্য কর্তা : অপরের প্রেরণায় যে কাজ করে, তাকে বলা হয় প্রযোজ্য কর্তা। যেমন—মা ছেলেকে চাঁদ দেখান। নিজের ইচ্ছায় নয়, মায়ের প্রেরণায় ছেলে চাঁদ দেখে। ‘ছেলে’—প্রযোজ্য কর্তা। এরকম-তারা শিশুটিকে কাঁদাচ্ছে কেন?
- নিরপেক্ষ কর্তা : বাক্যে অসমাপিকা ও সমাপিকা ক্রিয়ার পৃথক পৃথক কর্তা থাকলে, অসমাপিকা ক্রিয়ার কর্তা সমাপিকা ক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত না হওয়ায় নিরপেক্ষ হয়ে পড়ে, সেজন্য অসমাপিকা ক্রিয়ার কর্তাকে বলা হয় নিরপেক্ষ কর্তা। যেমন—সূর্য অস্ত গেলে অন্ধকার নামে। ‘গেলে’ অসমাপিকা ক্রিয়ার কর্তা ‘সূর্য”। ‘নামে’ সমাপিকা ক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক না থাকায় নিরপেক্ষ কর্তা। এরকম— ঝড় থামলে আমরা দরজা খুললাম। সূর্য উঠলে পদ্ম ফোটে।
- বাক্যাংশ কর্তা : বাক্যের কিছুটা অংশ ক্রিয়ার কর্তা হলে, তাকে বলে বাক্যাংশ কর্তা। যেমন—‘ভয় কারে কয় নাইকো জানা।'
- উহ্য কর্তা : বাক্যের কর্তা উহ্য থাকলে এ ধরনের কর্তাকে বলা হয় ঊহ্য কর্তা। যেমন—‘এসো।'—কর্তা ‘তুমি’ উহ্য।
- এক ক্রিয়ার একাধিক কর্তা : কোনো কোনো বাক্যে একটি ক্রিয়ার একের বেশি কর্তা থাকে। যেমন—ভোজ খেল পিন্টু, মিন্টু, অনেকে।
- একাধিক ক্রিয়ার এক কর্তা : কোনো কোনো বাক্যে এক কর্তার অধীনে থাকে একের বেশি ক্রিয়া। যেমন—পাগলটা হাসছে, নাচছে, কাঁদছে।
- ব্যতিহার কর্তা : একই ক্রিয়ার দুই কর্তার পরস্পরের মধ্যে কাজ করার অর্থ প্রকাশিত হলে, ওই দুই কর্তাকে বলা হয় ব্যতিহার কর্তা। যেমন—পণ্ডিতে পণ্ডিতে তর্ক হয়। ভাইয়ে ভাইয়ে ঝগড়া করে। রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়।
- সহযোগী কর্তা : ক্রিয়ার দুই কর্তার মধ্যে পারস্পরিকতা না বুঝিয়ে সহযোগিতা বোঝালে সহযোগী কর্তা হয়। যেমন আমাদের বড়োবাবুর দাপটে বাঘে-গোরুতে একঘাটে জল খায়। মায়ে-ঝিয়ে কাজ করে।
- সমধাতুজ কর্তা : ক্রিয়াপদটি যে ধাতু থেকে গঠিত, সেই ধাতু থেকে গঠিত বিশেষ্য পদ ওই ক্রিয়ার কর্তা হলে, তাকে বলা হয় সমধাতুজ কর্তা। যেমন—উৎসবের বাজনা বাজছে। ‘বাজ’ ধাতু থেকে নিষ্পন্ন বিশেষ্য পদ ‘বাজনা', 'বাজ' ধাতু থেকে নিষ্পন্ন ক্রিয়াপদ ‘বাজছে’। ‘বাজছে’ ক্রিয়ার কর্তা ‘বাজনা”। এরকম—কত ঘটনা ঘটেছে। পড়ুয়া তখনও চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে পড়ছে।
কর্তৃকারকে বিভিন্ন বিভক্তির প্রয়োগ :
(ক) শূন্য (অ) বিভক্তি: কানাহরি দত্ত মনসামঙ্গলের আদি কবি। 'পিসিমা তো ভয়ে কাঁদিয়াই ফেলিলেন।' ‘মনে হল, আমি দিব্যচক্ষু পেয়েছি।’ ‘বোনেরও মনটা ঠাণ্ডা হইল।’ ‘জোসেফ মিস্টার নামে একটি ছেলে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিল।’‘পুরুষেরা নিঃশব্দে দুর্গানাম জপ করিতে লাগিল।’ ‘একটা নতুন ব্যামো আসিয়াছে।' যতক্ষণ টাকা আছে।’ ‘স্নেহ গাঢ়তর হইলে লাগিল।' ‘সে মাঠে তখনও চাষ পড়ে নি।
(খ) 'কে' বিভক্তি— তোমাকে বাড়ি যেতেই হবে। তোমাকে এক হাত খেলা দেখাতে হবে।' ‘বাপ্পাকে নগেন্দ্রনগর ছেড়ে যেতে হল।' ‘তাঁকে টিকিট কিনতে হয়নি।” (গ) ‘র’ বা ‘এর’ বিভক্তি—'কুবেরের চলিবে না।’ ‘মহাশয়ের আসা ভালো হয় নাই।' ‘মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে।' ‘তোমার যাওয়া হয় নাই।' বাবুর কোথায় যাওয়া হচ্ছে? তোমার খাওয়া হবে না।
(ঘ) ‘এ’, ‘তে’, ‘য়’ বিভক্তি—পাগলে কিনা বলে, ছাগলে কিনা খায়। বুলবুলিতে ধান খেয়েছে। ‘নরনারীগণে সোনার দেউল-পানে না তাকায়ে চলিয়াছে ছুটি।' 'চারিজনে একজনকে বাঁধিয়াছে।' ‘লোকে তাদেরও একসময় বলত।’ ‘সম্বর্ধনা জানাবে সকলে।' ‘কুম্ভীরে যাবে লয়ে।’ ‘লোকে তো আর কথা কয় না।' 'তাকে শিয়ালে খাইয়াছে। ‘নবকুমারকে ব্যাঘ্রে হত্যা করিয়াছে।' ‘তাহা পণ্ডিতে বলিতে পারে না।’ ‘ঝড়ে আমাদের বড়োই উপকার করিয়াছে। তাহা পক্ষীতেও আহার করে না।' তোমায় কাজটা করতে হবে।
কর্মকারক
‘কর্ম’ শব্দের অর্থ কাজ। কর্তা যে পদকে অবলম্বন করে কাজ করে তা কর্ম। যেমন: (১) সুরেশ মাটি কাটে। (২) কুকুরটা মাংস খায়। (৩) চাষিরা মাঠে ধান চাষ করে।
প্রথম বাক্যে কর্তা ‘সুরেশ’ ‘মাটি’ পদকে অবলম্বন করে ‘কাটা’ কাজটি করে। দ্বিতীয় বাক্যে কর্তা ‘কুকুরটা’ ‘মাংস’ পদকে অবলম্বন করে ‘খাওয়া’ কাজটি করে। তৃতীয় বাক্যে কর্তা ‘চাষিরা’ ‘ধান’ পদকে অবলম্বন করে ‘চাষ করা’ কাজটি করে। কাজেই ‘মাটি’, ‘মাংস’ ও ‘ধান’ কর্ম। প্রতি বাক্যের ক্রিয়াকে ‘কী’ দিয়ে প্রশ্ন করলে ‘ক্রিয়ার’ সঙ্গে ‘মাটি’, ‘মাংস’ ও ‘ধান’-এর কর্ম-সম্পর্ক বেরিয়ে আসে।
সংজ্ঞা: যে পদ ক্রিয়ার সঙ্গে কর্ম-সম্বন্ধ নিষ্পন্ন করে, তাকে বলা হয় কর্মকারক (Objective Case)। যেমন—‘স্বামীর নাম নাহি ধরে নারী।’ ‘মাকে প্রণাম করল।' ‘বরকে সভায় আনা যাবে না।’ প্রতিটি বাক্যের ক্রিয়াকে ‘কী’ বা ‘কাকে’ দিয়ে প্রশ্ন করলে যে উত্তর পাওয়া যায়, তা ওই ক্রিয়ার কর্ম।
কর্ম কারকের প্রকারভেদ
- মুখ্য কর্ম ও গৌণ কর্ম : বাক্যে দ্বিকর্মক ক্রিয়ার দুটি কর্ম থাকে। ক্রিয়াপদের সঙ্গে মুখ্য সম্পর্কযুক্ত কর্মটি হয় মুখ্য কর্ম, আর গৌণ সম্পর্কযুক্ত কর্মটি হয় গৌণ কর্ম। মুখ্য কর্মটি হয় বস্তুবাচক, গৌণ কর্মটি হয় প্রাণীবাচক। যেমন—‘তাহলে আপনি আমার স্বর্গীয় পিতামহাশয়কে এই রামায়ণ পড়তে দেখেছেন।‘এই রামায়ণ’ মুখ্য কর্ম, ‘পিতামহাশয়কে’ গৌণ কর্ম।
- উদ্দেশ্য কর্ম ও বিধেয় কর্ম : কিছু ক্রিয়ার কর্মের পরিপূরক হিসেবে অন্য যে পদ ব্যবহার করা হয়, সেই পরিপূরক পদকে বলা হয় বিধেয় কর্ম, আর আসল কর্মটিকে বলা হয় উদ্দেশ্য কর্ম। উদ্দেশ্য কর্ম হয় বিভক্তিযুক্ত, বিধেয় কর্ম হয় বিভক্তিশূন্য। যেমন—আমরা চিত্তরঞ্জন দাশকে দেশবন্ধু বলি। দেশবাসী তাঁকে রাষ্ট্রপতি করেছেন।
- সমধাতুজ কর্ম : ক্রিয়াপদটি যে ধাতু থেকে গঠিত, সেই ধাতু থেকে গঠিত বিশেষ্য পদ ওই ক্রিয়ার কর্ম হলে, তাকে বলা হয় সমধাতুজ কর্ম (Cognate Object)। যেমন—লোকটি কী ঘুমই না ঘুমাল। ‘ঘুম্’ ধাতু থেকে গঠিত ক্রিয়া ঘুমাল আর ‘ঘুম’ ধাতু থেকে গঠিত বিশেষ্য পদ ‘ঘুম’। সমধাতুজ কর্মে শূন্য বিভক্তি হয়। অকর্মক ক্রিয়া সকর্মকরূপে ব্যবহৃত হয়। এরকম—ছেলেটি কী দৌড়ই না দৌড়ায়। মেয়েটি কী নাচই না নাচে।
- অনুক্ত কর্ম : সকর্মক ক্রিয়ার কর্ম উহ্য থাকলে, তাকে বলা হয় অনুক্ত কর্ম। যেমন—‘কাশীরাম দাস কহে শুনে পুণ্যবান।'
- বাক্যাংশ কর্ম : বাক্যের সমাপিকা ক্রিয়াহীন কিছুটা অংশ কর্মরূপে ব্যবহৃত হলে, তাকে বলা হয় বাক্যাংশ কর্ম। যেমন—‘সবেতে তার গা ঝাড়া ভাব আমরা সইতে পারি নে।’ শেষ বেলার রক্ত-রাঙা আকাশ আমরা দেখেছি।
- কর্মের বীপ্সা : একই কর্মের বার বার উল্লেখকে বলা হয় কর্মের বীপ্সা। যেমন— যা যা বলছি, করো। জনে জনে ডাকো।
* কর্মকারকে বিভিন্ন বিভক্তির প্রয়োগ :
(ক) শূন্য (অ) বিভক্তি—‘আমরা রেললাইন পেরিয়ে যাব।' ‘আমি রেলগাড়ি দেখব বাবা।’ ‘জলের ধারা আমার মনের কথা পুলকশর বর্ষণ করিত।’ ‘এ সংবাদ তিনি অন্য যাত্রীর মুখে পাইয়াছিলেন। সেই হিন্দুস্থানের ঝুলনগান শুনতে শুনতে.....।’ ‘রেলগাড়ি এখন কি করে দেখবে?’ ‘একসূত্রে বাঁধিয়াছি সহস্ৰটি মন।' ‘বিধবা নারী দোকানে বসিয়া মুড়িমুড়কী বেচিতেছিলেন।’ ‘এবার ফ্লাস্কটা উল্টে ধরলেন।' ‘জলস্পর্শ করব না আর চিতোর রাণার পণ।'’ ‘ত্যজিবে কি পথমাঝ?’ ‘সমুদ্র দেখিব।' ‘এক পোয়া মাত্র দুগ্ধ পাইলাম।’ ‘এমন সুন্দর পুষ্পের লতা আমি আর কখনও দেখি নাই। ‘উহার ল্যাজ কাটিয়া দাও।’ ‘ঘোড়া ফেরাও।’ ‘সে দিনটা আমার খুব মনে পড়ে।’ ‘আচ্ছা যাইব; কুড়ালি দাও।'
(খ) 'রে', 'এরে' বিভক্তি—‘মোরে জিনি তবে জয়গৌরবে ব্রজ থেকে যাবে চলি। ‘সাত কোটি সন্তানেরে হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালি করে মানুষ কর নি।’ ‘যুধিষ্ঠিরে আন গিয়া বলি আজ্ঞা দিল।’ ‘আমারে করিল বিধি ভিক্ষুকের প্রতিনিধি।’ ‘জীবনেরে কে পারে লঙ্ঘিতে?’ ‘আপনায় স্থাপিয়াছ, জগতের দেবতারে নহে।' ‘আমি উহারে ছাড়িব না।'
(গ) ‘এ’, ‘য়’ বিভক্তি—‘দুলালে আগলি বক্ষে।'‘কেশরী কি কভু ক্ষুদ্র শশকে বধে?? ‘প্রণাম তোমায় ঘনশ্যাম।’ ‘বৃথা গঞ্জ দশাননে, তুমি বিধুমুখী।‘‘কেউ-না-কেউ এসে আমায় ডেকে নিয়ে যেত।’ ‘জীয়াতে চাহি না তনয়ে আমার।
(ঘ) ‘র’, ‘এর’ বিভক্তি—‘জাতির অথবা জাতের করিবে ত্রাণ?’ বন্যার্তের সেবা করা উচিত।
(ঙ) ‘কে’ বিভক্তি—'রামরতন বালককে তাহার গাত্রবস্ত্র খুলিয়া ফেলিতে বলিলেন। ‘এবার তোকে নিয়ে যাচ্ছি মা।'’ ‘মাকে জড়াইয়া ধরিত।’ ‘বাণ ছুঁড়িয়া বিপন্ন শত্রুকে নাশ করিল।’ ‘আপনাকে একেবারে ভুলিয়া যাইতেন।’ ‘রাজকুমারীকে একগাছা দড়ি দিতে পার?’ ‘আমি তাকে বলুলম।’ ‘বৃদ্ধ ক্রুদ্ধ হইয়া মাঝিকে তিরস্কার করিতে লাগিলেন।'
করণকারক
(১) এ কলমে ভালো লেখা হয়। (২) ব্যায়ামে দেহ সুগঠিত হয়। (৩) আমরা চোখ দিয়ে দেখি।
প্রথম বাক্যে ‘লেখা’ কাজ হয়েছে ‘কলমে’। দ্বিতীয় বাক্যে ‘দেহ সুগঠিত হওয়ার’ কাজ হয় ‘ব্যায়ামে’। তৃতীয় বাক্যে ‘দেখা’ কাজ হয় ‘চোখ দিয়ে’। তিনটি বাক্যে ‘লেখা হয়’, ‘হয়’ ও ‘দেখি’ ‘কী দিয়ে’ বা ‘কীসের দ্বারা’ দিয়ে প্রশ্ন করলে উত্তরস্বরূপ পাওয়া যায় যথাক্রমে ‘কলমে’, ‘ব্যায়ামে’ ও ‘চোখ দিয়ে। এগুলির সাহায্যে কর্তা কার্য সম্পাদন করে, সেজন্য করণ।
সংজ্ঞা: যে পদ ক্রিয়ার সঙ্গে করণ-সম্বন্ধ নিষ্পন্ন করে, তাকে করণকারক (Instrumental Case) বলা হয়।
যেমন: (১) লাঠিতে সাপ মারা হল। (২) ছেলেরা বল খেলে। (৩) করাত দিয়ে কাঠ কাটা হয়েছে।
করণ কারকের প্রকারভেদ
- যন্ত্রাত্মক করণ : যে বস্তু বা যন্ত্র দিয়ে কাজ করা হয়, তা যন্ত্রাত্মক করণ। যেমন—ছুরি দিয়ে পেনসিল কাটা হয়।
- উপায়াত্মক করণ : যে উপায় দ্বারা কাজ সম্পন্ন হয়, তা উপায়াত্মক করণ। যেমন—নিয়মিত শরীরচর্চায় দেহ সুঠাম হয়।
- হেতুময় করণ : হেতু বা কারণ অর্থ বোঝাতে হেতুময় করণ হয়। যেমন—‘ভয়ে (ভয়-হেতু) প্রাণ কাঁপতে লাগল।'
- কালাত্মক করণ : সময় বা কালজ্ঞাপক করণকে বলা হয় কালাত্মক করণ। যেমন—তিরিশ দিনে এক মাস হয়।
- সমধাতুজ করণ : ক্রিয়াপদটি যে ধাতু থেকে তৈরি, সেই ধাতু থেকে করণকারকটিও তৈরি হলে, তাকে বলা হয় সমধাতুজ করণ। যেমন—‘মায়ার বাঁধনে বেঁধেছ আমায়।”
- লক্ষণাত্মক করণ : লক্ষণপ্রকাশক করণকে লক্ষণাত্মক করণ বলা হয়। যেমন—শিকারি বিড়াল গোঁফে চেনা যায়।
- করণের বীপ্সা : পোস্টারে পোস্টারে দেয়াল ছয়লাপ। 'পুষ্পে পুষ্পে ভরা শাখী।'
করণ কারকে বিভিন্ন বিভক্তি ও অনুসর্গের প্রয়োগ :
(ক) শূন্য (অ) বিভক্তি— ছেলেরা বল খেলে। সে তাস খেলছে। তাহলে তুমি লাঠি খেলতে জান না।
(খ) ‘দিয়া’, ‘দ্বারা’ প্রভৃতি অনুসর্গ যোগে—'ইহার দ্বারা আমরা বিস্তর উপকার প্রাপ্ত হই।' শিক্ষক মহাশয় ছাত্রকে যষ্টি দ্বারা প্রহার করিলেন। সে ঠোঁঠ দিয়া চুক্চুক্ শব্দ করিল। ‘আমি আজ সর্বপ্রথম মন, বুদ্ধি ও হৃদয় দিয়া উহার নবীনতাকে আস্বাদ করিলাম। শাক দিয়া মাছ ঢাকা যায় না ।
(গ) হইতে (হতে), ‘থেকে’ প্রভৃতি অনুসর্গ যোগে—‘আমা হতে এই কর্ম হবে না সাধন।' তোমা থেকে আমাদের মান-মর্যাদা যাবার ভয় নেই।
(ঘ) 'র', 'এর', বিভক্তি—তাঁতের তৈরি কাপড় সুদৃশ্য। খাঁড়ার ঘায়ে ছাগ শিশুটার প্রাণ গেল। ‘অনেক কষ্টের সংগ্রহ করা তেলের পীপা।’ ‘নাকের উপর মস্ত এক চাঁদির চশমা।'
(ঙ) ‘এ’, ‘তে’, ‘য়’ বিভক্তি—অশ্রুপূর্ণ নয়নে তাহার পরিচয় দিলেন। 'কোন্ পাষাণের বিষবাণে তার নয়নের মণি ভিন্ন।’ ‘মোষটার মাথা এক কোপে বেমালুম কাটলে।’ ‘প্রাচীন দুটি ছাতিমের তলায় মার্বেল পাথরে বাঁধানো একটি নিরলঙ্কৃত বেদী।’ ‘আমি নিজের চোখে দেখেছি।' দৃশ্যটা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। 'ছুরিতে মাংস কাটিয়া অস্থি কাটিল না।’ ‘অনেক তরুণ বয়স্ক বৃক্ষও দাবানলে দগ্ধ হইয়া অসময়ে দুর্দশাগ্রস্ত হইয়াছে।' ‘পাথরে পা কেটে গেল।’ ‘বিবিধ শব্দবিন্যাসে কাঁদিতে লাগিল'। 'তাতে দেহ স্নিগ্ধ হল।' ‘বাপ্পাকে কম্বলে ঢেকে নিয়ে রাণী দাঁড়িয়ে রইলেন।’ ‘স্বহস্তে আশালতার মূলচ্ছেদ করিয়াছি।’ ‘গণনায় দেখা গেল।'’ ‘বাঙালির খুনে লাল হল।'
নিমিত্তকারক
লক্ষণীয়: স্বত্বত্যাগপূর্বক দানকে সম্প্রদান বলা হয়। সংস্কৃতে ক্রিয়ার সঙ্গে সম্প্রদান সম্বন্ধকে সম্প্রদানকারক বলে। সম্প্রদানকারকের জন্যে সংস্কৃতে চতুর্থ বিভক্তি নির্দিষ্ট আছে। বাংলায় সম্প্রদানের জন্য কোনো বিভক্তি পৃথক করে নির্দিষ্ট নেই। সাধারণত কর্মকারকের বিভক্তি দিয়ে সম্প্রদানের কাজ চালানো হয়। যেমন—ক্ষুধাতুরকে অন্ন দাও। ‘ক্ষুধাতুর’ শব্দের সঙ্গে ‘কে’ বিভক্তি যুক্ত হয়েছে। গৌণ কর্মেও একই বিভক্তি ব্যবহার করা হয়। যেমন—যদুকে গল্পটি বলো। গৌণ কর্ম ‘যদু’-তে 'কে' বিভক্তি যুক্ত হয়েছে। সেজন্য বাংলায় সম্প্রদানকারকের পৃথক ব্যবহার দেখাতে আধুনিক বৈয়াকরণেরা চান না। বাংলায় সম্প্রদানকারক বর্জন করে নিমিত্তকারকের ব্যবহার হয়েছে।
সংজ্ঞা: ক্রিয়ার সঙ্গে নিমিত্ত-সম্বন্ধ (নিমিত্ত, জন্য ইত্যাদি অর্থ) বোঝাতে যে কারক হয়, তাকে বলা হয় নিমিত্তকারক। যেমন— ‘বেলা যে পড়ে এল জলকে চল।' এই বাক্যে ‘চল' ক্রিয়াকে ‘কীসের নিমিত্ত চলা' দিয়ে প্রশ্ন করলে উত্তর মেলে ‘জলকে’, নিমিত্তকারক। এরকম আরও দৃষ্টান্ত : ‘তোমার পতাকা যারে দাও।' ‘যারে’ অর্থাৎ, ‘যার জন্য'। 'মৃতজনে দেহ প্রাণ।’ ‘মৃতজনে’ অর্থাৎ, মৃত ব্যক্তির নিমিত্ত।
* নিমিত্তকারকে বিভিন্ন বিভক্তির প্রয়োগ :
(ক) শূন্য (অ) বিভক্তি–তোমা (তোমার জন্য/নিমিত্ত) দিব সর্বস্ব।
(খ) (কে) বিভক্তি –‘সকলেই কন্যাকে (কন্যার জন্য) অলংকার দিয়েছে।'
(গ) (রে) বিভক্তি—'সে আমারে (আমার জন্য) গৃহ করে দান।'
(ঘ) (এরে) বিভক্তি–ভক্তেরে (ভক্তের জন্য) দিলেন সব।
(ঙ) (র) বিভক্তি – দেবতার (দেবতার জন্য নিবেদিত) ধন কে নেয় কেড়ে?
(চ) (এর) বিভক্তি—তীরের (তীরের জন্য) প্রতীক্ষা।
(ছ) (দের) বিভক্তি–ছেলেদের (ছেলেদের জন্য) খাবার দাও।
(জ) (এ) বিভক্তি–অন্ধজনে (অন্ধজনের জন্য) দেহ আলো।
অপাদানকারক
(১) তিল থেকে তেল হয়। (২) বাদল মেঘে বৃষ্টি হয়। (৩) ঘোড়া থেকে নামল।
প্রথম বাক্যে তিল থেকে উৎপন্ন, দ্বিতীয় বাক্যে মেঘ থেকে পতিত, তৃতীয় বাক্যে ঘোড়া থেকে নামা বোঝাচ্ছে। প্রথম বাক্যে ‘তেল হয় কী থেকে’, দ্বিতীয় বাক্যে ‘বৃষ্টি হয় কী থেকে’, তৃতীয় বাক্যে ‘নামল কী থেকে’ দিয়ে প্রশ্ন করলে যথাক্রমে উত্তর হয় ‘তিল থেকে’, ‘বাদল মেঘে’, ‘ঘোড়া থেকে”। এগুলি অপাদান।
সংজ্ঞা: যা থেকে কোনো কিছু চলিত, ভীত, গৃহীত, রক্ষিত, পতিত, বিরত, উৎপন্ন হয়, তাকে অপাদান বলে। যে পদ ক্রিয়ার সঙ্গে অপাদান সম্বন্ধ গড়ে, তাকে বলা হয় অপাদানকারক (Ablative Case)।
অপাদান কারকের প্রকারভেদ
- আধার বা স্থানবাচক অপাদান : 'রথ থেকে লাফিয়ে পড়লেন।' কলকাতা থেকে ডাক্তার এসেছেন। 'রথ' আধার, ‘কলকাতা' স্থান। কোনো আধার বা স্থান থেকে পতিত, আগত ইত্যাদি অর্থ বোঝালে আধার বা স্থানবাচক অপাদান হয়।
- কালবাচক অপাদান : লোকটা সকাল থেকে বসে আছে। বাক্যে কাল বা সময় বোঝানো হয়েছে।
- দূরত্ববাচক অপাদান : ‘বুঁদির কেল্লা চিতোর হতে যোজন তিনেক দূর।' কলকাতা থেকে মুম্বই অনেক দূর। দুটি বাক্যে যথাক্রমে চিতোর ও কলকাতা থেকে দূরত্ব বোঝানো হয়েছে।
- তারতম্যবাচক অপাদান : লতার চেয়ে অসীমা বয়সে বড়ো। বাক্যে তারতম্য বা তুলনা বোঝানো হয়েছে।
অপাদানকারকে বিভিন্ন বিভক্তি ও অনুসর্গের প্রয়োগ :
(ক) শূন্য (অ) বিভক্তি – স্কুল পালিয়ে কোথায় গিয়েছিলে? ‘করিলাম মন শ্রীবৃন্দাবন বারেক আসিব ফিরি।’ ‘ট্রেন হাওড়া ছাড়ল।’
(খ) ‘কে’ বিভক্তি—তুমি থাকলে যমকেও ভয় নেই।
(গ) 'দিয়া’, ‘দিয়ে’ অনুসর্গ যোগে—তাহার কলম দিয়া এই কবিতা বাহির হইল? ‘আনন্দে দুই চোখ দিয়া জল পড়িতে লাগিল।’ ‘শীতকালেও তাহাদের গা দিয়া ঘাম ঝরিতে লাগিল।' ক্ষতমুখ দিয়ে রক্ত ঝরছে।
(ঘ) ‘থেকে’, ‘হইতে’ অনুসর্গ যোগে—‘সে ও তাহার দিদি নিচু ক্ষেত হইতে মাঝে মাঝে কলাই ফল তুলিয়া খাইতেছিল।' ‘রাত্রিশেষে একখানি যাত্রীর নৌকা গঙ্গাসাগর হইতে প্রত্যাগমন করিতেছিল।' 'রথ থেকে লাফিয়ে পড়লেন।' 'মুখ হইতে ছেলের প্রসারিত হাতের উপর রাখিয়া বলিত।’ ‘একমাত্র জীব থেকে জীবের উৎপত্তি হয়। ‘অশ্ব হইতে নামিল।’ ‘আমি যদি সড়কি ওর হাত থেকে খসিয়ে না দিতুম, তা হলে তা আমার পেটে ঠিক ঢুকে যেত।
(ঙ) 'এর', 'দিগের' বিভক্তি—যেখানে বাঘের ভয়, সেখানে সন্ধ্যা হয়। ‘নাবিক-দস্যুদিগের ভয়ে যাত্রীর নৌকা দলবদ্ধ হইয়া যাতায়াত করাই তৎকালের প্রথা ছিল।’ ‘ছোড়দা ও যতীনদার সমবেত আর্তকণ্ঠের গগনভেদী রৈ রৈ চীৎকার।'
(চ) ‘এ’, ‘য়’, ‘তে’ বিভক্তি—'বিপদে মোরে রক্ষা কর এ নহে মোর প্রার্থনা।' এবারে তার ব্যবসায় টাকায় টাকা লাভ হয়েছে। ‘ব্যাঘ্রভয়ে কেহই আসিতে স্বীকৃত হইল না।” “এ সংবাদ তিনি সাগরে উপনীত হইলে পরে পশ্চাদাগত অন্য যাত্রীর মুখে পাইয়াছিলেন। ইহাতে বুঝিনু তুমি দেবতা নিশ্চয়।’ ‘জনম তব কোন্ মহাকুলে?’ ‘জন পাঁচেকের মুখে শুনেছি।’ ‘সাপে বাঘে ভয় নাই।’ ‘আমি রাজধৰ্ম্মে পতিত হইব।’ ‘বেগম সাহেবার মুখে আরবী গজল শুনতে শুনতে—। ‘সকল সময় চোখে ধারা বয়।’ ‘চেষ্টায় বিরত হইও না।” ‘ইহাতে আলকাতরা জন্মে।' ‘মুখে শোনা গান।
অধিকরণ কারক
সংজ্ঞা: ক্রিয়ার আধার হল অধিকরণ। যে বিশেষ্য বা সর্বনাম পদে বাক্যস্থিত ক্রিয়ার আধার, কাল, স্থান ইত্যাদি বোঝায়, তাকে অধিকরণকারক (Locative Case) বলে। যেমন—বনে বাঘ আছে। শিশুকালে ভোগবিলাসের আয়োজন ছিল না।’ ‘প্রাচীন দুটি ছাতিমের তলায় মার্বেল পাথরে বাঁধানো একটি নিরলংকৃত বেদি।' এই তিনটি বাক্যে ‘বাঘ কোথায় আছে’, ‘কখন ভোগবিলাসের আয়োজন ছিল না’, ‘কোথায় নিরলংকৃত বেদি’ এই প্রশ্ন করলে উত্তর মেলে যথাক্রমে ‘বনে’, ‘শিশুকালে’, ‘ছাতিমের তলায়’, স্থান ও সময় বুঝিয়েছে। কাজেই এগুলি অধিকরণকারক।
+
অধিকরণ কারকের প্রকারভেদ
অধিকরণকারক তিন প্রকার—(ক) স্থানাধিকরণ, (খ) কালাধিকরণ, (গ) বিষয়াধিকরণ।
(ক) স্থানাধিকরণ : যে স্থানে ক্রিয়া নিষ্পন্ন হয়, তাকে বলে স্থানাধিকরণ। যেমন—‘ঢেলারে ভাঙিবে শিরে'।
স্থানাধিকরণ তিন প্রকার—(১) ঐকদেশিক, (২) ব্যাপ্তিসূচক, (৩) সামীপ্যসূচক।
(১) ঐকদেশিক : সমগ্র স্থান জুড়ে নয়, একটি স্থান বা অংশ জুড়ে ক্রিয়া অনুষ্ঠানের অবস্থান বোঝালে ঐকদেশিক স্থানাধিকরণ হয়। যেমন—কলকাতায় চিড়িয়াখানা আছে। পলাশ বিলাতে পড়ছে। জলে কুমির, ডাঙায় বাঘ।
(২) ব্যাপ্তিসূচক : কোনো অংশবিশেষ নয়, সর্বদেশ বা সকল অংশ জুড়ে ব্যাপ্ত হয়ে অবস্থান করছে, এরকম বোঝালে ব্যাপ্তিসূচক স্থানাধিকরণ হয়। যেমন—তিলে তেল আছে। বরফে শীতলতা আছে। খেজুর রঁসে শর্করা আছে।
(৩) সামীপ্যসূচক: সামীপ্য বা নিকটে বোঝাতে যে অধিকরণ, তাকে বলা হয় সামীপ্যসূচক স্থানাধিকরণ। যেমন—‘দুয়ারে প্রস্তুত গাড়ি।
(খ) কালাধিকরণ : যে কালে বা যে সময়ে ক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয় সেই কালজ্ঞাপক অধিকরণকে কালাধিকরণ বলে।
কালাধিকরণ দু-প্রকার- (১) মুহুর্তাধিকরণ (২) ব্যাপ্তাধিকরণ।
(১) মুহূর্তাধিকরণ : সময়ের নির্দিষ্ট মুহূর্তজ্ঞাপক অধিকরণকে মুহূর্তাধিকরণ বলা হয়। যেমন—বেলা দশটায় বাজার খোলে।
(২) ব্যাপ্তাধিকরণ : ক্রিয়ার কালবিস্তৃত অধিকরণকে বলা হয় ব্যাপ্তাধিকরণ। যেমন— শীতকালে রাত্রি বড়ো হয়।
(গ) বিষয়াধিকরণ : কোনো বিষয়কে কেন্দ্র করে ক্রিয়া নিষ্পন্ন হলে বিষয়াধিকরণ হয়। যেমন—ছেলেটি গণিতে কাঁচা।
(ঘ) অধিকরণে বীপ্সা : ‘ওরে ভাই, ফাগুন লেগেছে বনে বনে।' ‘পাতায় পাতায় পড়ে। নিশার শিশির।
0 Comments
Post a Comment