Header Ads Widget

পুরুষ | Person | বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি




পুরুষ (Person)

আমি বা তুমি যত চেষ্টাই করি না কেন, অঙ্কনের রাগ কিছুতেই কমবে না।”

উপরের বাক্যে তিন ধরনের ব্যক্তির কথা রয়েছে । আমি, তুমি আর অঙ্কন। এই তিনজনের ভূমিকা তিন রকম। ‘আমি’ এখানে বক্তা, ‘তুমি’ শ্রোতা এবং অঙ্কন বক্তাও নয়  আবার শ্রোতাও নয়। কিন্তু তার সম্পর্কে কথাটি বলা হয়েছে। তাহলে বলা যেতে পারে যে, এই বাক্যে বা ভাষার মধ্যে যত বাক্য ব্যবহার করা হয়, সেখানে তিন ধরনের পুরুষ বা ব্যক্তির কথা থাকে। প্রথমত-- একজন বা অন্যকে বলে , দ্বিতীয়ত-- একজন অনেকে শোনে, এবং তৃতীয়ত-- একজন বা অনেকের সম্বন্ধে বলা হয়।

পুরুষ: যে সর্বনাম বা বিশেষ্য পদের দ্বারা বক্তা, শ্রোতা বা অন্য কোন উদ্দিষ্ট ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয় তাকেই পুরুষ বলে । পুরুষ শব্দটি অর্থ হল ক্রিয়ার আশ্রয়। ব্যাকরণে ‘পুরুষ’ কথাটির সঙ্গে স্ত্রী-পুরুষ লিঙ্গবোধের কোন সম্পর্ক নেই  । এটি একটি পরিভাষিক নামমাত্র । পৃথিবীর সমস্ত ব্যক্তি বা বস্তু ব্যাকরণ-মতে কোনো না কোনো না কোনো ভাবে পুরুষ।

উপরের আলোচনা থেকে বোঝা যায় যে ভাষায় তিন ধরনের পুরুষ হতে পারে  । বক্তা অর্থাৎ আমি,  শ্রোতা অর্থাৎ তুমি, এবং উদ্দিষ্ট ব্যক্তি অর্থাৎ সে । অতএব পুরুষ তিন প্রকার। যথা --

(১) উত্তম পুরুষ  (আমি, আমরা, আমাদের, আমাকে, মুই, মোরা, মোদের প্রভৃতি)
(২) মধ্যম পুরুষ ( তুমি, তোমরা, তোমাকে, তোমাদের, তোদের, তোর, তোরা প্রভৃতি)
(৩) প্রথম পুরুষ ( সে, তারা, তিনি, উনি, তাদের, রাম, শ্যাম,যদু, অঙ্কন, অজয়, লক্ষন, সীতা, রাবন,  সুমন)

তিন পক্ষের বিভিন্ন রূপ ও তাদের সঙ্গে ক্রিয়া রূপের সামঞ্জস্য।


উত্তম পুরুষ (First Person)

উত্তম পুরুষ: বক্তা নিজের নামের পরিবর্তে যে সর্বনাম ব্যবহার করেন তাকেই উত্তম পুরুষ বলে ।

আমি প্রতিদিন বিদ্যালয়ে যাই।
আমরা বিকেলবেলা মাঠে খেলা করি ।
আমাকে মা একটা কলম কিনে দিয়েছেন।
আমাদের বাড়ির সামনে একটা খেলার মাঠ আছে।
সাধারণভাবে চলিতগদ্যে উত্তম পুরুষের এই উদাহরণগুলো প্রচলিত । কিন্তু সাধুগদ্যে অথবা কবিতায় আরো ভিন্ন প্রকার উত্তম পুরুষের উদাহরণ লক্ষ্য করা যায়। যেমন---

“আমারে তুমি অশেষ করেছ, এমনি লীলা তব...” (রবি ঠাকুর)
 “মোর কী ভাবনারে কী হাওয়ায় মাতালো..” ---(রবি ঠাকুর)
 “মাঝে মুক্তি কাঁদে বিংশ শতাব্দীর।” ---(নজরুল ইসলাম)
উত্তম পুরুষের রূপ একটি, অর্থাৎ সাধারণ, সম্ভ্রম বা তুচ্ছ অর্থে একই রূপে আমি, আমরা, আমাদের সর্বনাম পদ গুলো ব্যবহৃত হয়। তাই উত্তম পুরুষের ক্রিয়ার রূপও একই।

মধ্যম পুরুষ (Second Person)

মধ্যম পুরুষ : বক্তা সম্মুখস্থ কাউকে কিছু বলবার সময় সে ব্যক্তির নামের পরিবর্তে যে সর্বনাম ব্যবহার করেন তাকেই বলে মধ্যম পুরুষ।

তুমি বিকেলে আমাদের বাড়িতে এসো ।
তোমরা  মন দিয়ে পড়াশুনা করো ।
তোমাকে বইটা ফেরত দিতে হবে না ।
তোমার নামটা তো এখনও জানা হয়নি
তোমাদের পরীক্ষা কেমন হয়েছে ?
উপরের বাক্য গুলিতে মধ্যম পুরুষের উদাহরণ রূপে তুমি , তোমরা, তোমাকে,  তোমার , তোমাদের প্রভৃতি সর্বনাম পদগুলি ব্যবহার হয়েছে।

প্রথম পুরুষ (Third Person)

প্রথম পুরুষ: অনুপস্থিত কোনো ব্যক্তি বা দূরের কোন বস্তুর সম্বন্ধে কিছু বলবার সময় সেই ব্যক্তি বা নামের পরিবর্তে যে সর্বনাম বা বিশেষ্য পদ ব্যবহার করা হয় তাকেই প্রথম পুরুষ বলে।

অঙ্কন ভালো গাইতে জানে।
ওরা গঙ্গারামপুরে থাকে।
ওদের বাড়িতে আমি অনেকবার গিয়েছি।
ওর বাবার শিক্ষকতা করেন।
তিনি প্রচুর বই পড়েন।
ওপরের বাক্য যে সমস্ত বিশেষ্য বা সর্বনাম পদ ব্যবহার করা হয়েছে (অঙ্কন, ওরা, ওদের, ওর, তিনি) ,তারা  বক্তাও নয় শ্রোতাও নয় , তাই এদেরকে প্রথম পুরুষ বলে।


ধন্যবাদ।