পদ পরিচয়
সমষ্টিবাচক বিশেষ্য: যে বিশেষ্য পদে কোন জাতিবাচক বিশেষ্যের সমষ্টি বোঝায় তাহাকে সমষ্টিবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন-- সমিতি,সভা, সংঘ, জনসংখ্যা, পঞ্চায়েত পাল ,গুচ্ছ ,বাহিনী, ত্রিফলা ,পঞ্চপট্টি দল ইত্যাদি।
গুণবাচক বিশেষ্য: যে বিশেষ্য পদের দ্বারা প্রাণীর বা বস্তুর দোষ,গুণ ,ধর্ম ,উৎপত্তি ইত্যাদি বোঝায় তাকে গুণবাচক বিশেষ্য বলে । যেমন-- গুণ, বুদ্ধি ,সৌন্দর্য, অহংকার, কুটিলতা ,মাধুর্য ,তিক্ততা, কামনা ,বাসনা করুনা,প্রতিভা ইত্যাদি।
অঙ্কন প্রতিদিন বিদ্যালয়ে যায়।
অঙ্কন প্রতিদিন মন দিয়ে পড়াশোনা করে।
এই জন্য অঙ্কন কে শিক্ষক/শিক্ষিকাগণ খুবই ভালোবাসে।
উপরের বাক্য চারটিতে বারবার অঙ্কনের নাম ব্যবহার করা হয়েছে । এইভাবে নাম ব্যবহার না করে তার পরিবর্তে সে বা তাকে শব্দটি ব্যবহার করতে পারি। এমন ব্যবহারে অর্থের পরিবর্তন ঘটে না, সেইসঙ্গে বাক্যগুলি শ্রুতি মধুর হয়। যেমন--
অঙ্কন খুবই বুদ্ধিমান ছেলে।
সে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে যায়।
সে প্রতিদিন মন দিয়ে পড়াশোনা করে।
এই জন্য তাকে শিক্ষক/শিক্ষিকাগণ খুবই ভালোবাসে।
এইভাবে সাধারণত নামের বা বিশেষ্যের পরিবর্তে যে পদ আমরা বাক্যে ব্যবহার করি তাকে সর্বনাম পদ বলা হয়। । যেমন-- আমি, তুমি, সে, তাকে, ইনি, ওটা, যিনি, নিজ আপনি, উভয়, সকল ইত্যাদি।
সর্বনামের শ্রেণি বিভাগ
পুরুষবাচক বা ব্যক্তিবাচক সর্বনাম: যে সর্বনামে কোন ব্যক্তি কে বোঝায়, তাকে ব্যক্তিবাচক বা পুরুষ বাচক সর্বনাম বলা হয়। যেমন-- আমি, আমরা, আমাকে, আমাদের, তুমি, সে, তুই, তোকে, তারা, তিনি, তাহাদের, তার ইত্যাদি।
নির্দেশক বা সামীপ্যবোধক নির্দেশক সর্বনাম: যে সর্বনামে কোন ব্যক্তি বা বস্তু কে নির্দেশ করে, তাকে নির্দেশক বা সামীপ্যবাচক নির্দেশক সর্বনাম বলে। যেমন:- এ, এরা, ইহা, ইহারা, এই,এরা, একে, এটা, এগুলি, প্রভৃতি ।
অনির্দেশক সর্বনাম : যে সর্বনামে কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা বস্তু বা ভাবের পরিবর্তে বসে, তাকে অনির্দেশক সর্বনাম পদ বলে । যেমন: কেহ, কেউ, কিছু, যে ,কেহ, কিছু-কিছু,আর, কেউ, কেউ-কেউ, অমুক, কোনো কিছু ইত্যাদি।
প্রশ্নবাচক সর্বনাম: যে সর্বনাম পদে কোন কিছু জানবার ইচ্ছা থাকলে, তাকে প্রশ্ন বাচক সর্বনাম বলে। যেমন-- কে কী, কোনটা, কারা-কারা, কিসে, কে কে, কী কী, কোনগুলো, কোনগুলি ইত্যাদি।
সংযোগক সর্বনাম: যে সর্বনাম পদ দুই বা তার বেশি ব্যক্তি বা বস্তুর মধ্যে সংযোগ বোঝায়, তাকে সংযোজক বা সম্বন্ধ বাচক সর্বনাম বলে। যেমন-- যে, যিনি, যা,যিনি-তিনি, যাকে-তাকে ইত্যাদি।
অন্যাদি বাচক সর্বনাম: অন্য, অপর, অমুক, স্বয়ং, আপনা-আপনি প্রভৃতি কয়েকটিকে অন্যাদিবাচক সর্বনাম বলে।
সাকুল্যবাচক সর্বনাম: যে সর্বনাম পদ সমষ্টি বাচক ব্যক্তি বস্তু বা ভাবের পরিবর্তে প্রয়োগ করা হয়, তাকে সাকুল্যবাচক সর্বনাম বলে। যেমন-- সর্ব, সব, সকল, উভয়, সবাই, সবকিছু ইত্যাদি।
আত্মবাচক সর্বনাম: যে সর্বনামে কারো সাহায্য না নেওয়ার ভাবটি বিশেষ জোরের সঙ্গে বুঝানো হয়, তাকে আত্মবাচক সর্বনাম বলে। যেমন-- আপনি ,আপনারা, নিজেদের, আপন ইত্যাদি।
বিশেষণ
খোঁপায় বেঁধেছে হলুদ গাঁদার ফুল।
ওপরের বাক্যটিতে গাঁদা ফুলটির একটা বিশেষ গুণ উল্লেখিত হয়েছে। গুণটি হলো ‘হলুদ’ যা কিনা গাঁদা ফুলকে এক বিশিষ্ট পরিচয় দান করেছে। এইভাবে বাক্যে ব্যবহৃত যেপদ কোনো কিছুকে বিশিষ্ট করে তাকেই বলে বিশেষণ। বিশেষণ শুধু যে বিশেষ্যকেই বিশেষিত করে তা নয়, অন্যান্য অর্থাৎ সর্বনাম, ক্রিয়া ইত্যাদি পদকেও বিশেষিত করে।
বাংলা ভাষায় বহু ধরনের বিশেষণের প্রয়োগ আমরা লক্ষ করি। যাকে আবার মূল চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। যেমন—
বিশেষ্যের বিশেষণ : পাকা বাড়ি। পোষা কুকুর। অনেক লোক। অল্প চুল। দু রাত। তিন বেলা। প্রথম শ্রেণি। বিংশ শতক। ধবধবে চাদর। ঝিরঝিরে বৃষ্টি।
সর্বনামের বিশেষণ : পন্ডিত তিনি। বোকা সে। বুদ্ধিমান তুমি। জ্ঞানী আপনি।
বিশেষণের বিশেষণ : খুব ভালো নাটক। কনকনে ঠান্ডা বাতাস।
ক্রিয়া বিশেষণ : জোরে হাঁটো। এখানে আচ্ছি। ক্রমাগত চলছে। এখন এলাম।
ক্রিয়া
বরুণ ছবি আঁকছে।
বাক্যটিতে ‘আঁকছে’ পদটি দ্বারা একটি কাজ করা বোঝাচ্ছে। এই বাক্যটিকে বিশ্লেষণ করলে আমরা এও দেখতে পাব যে, এখানে ‘বরুণ’ সম্বন্ধে কিছু বলা হচ্ছে। এইভাবে বাক্যে যার সম্বন্ধে কিছু বলা হয় সে হলো উদ্দেশ্য। আর এই উদ্দেশ্যের সম্বন্ধে যা বলা হয় তা হলো বিধেয়। এক্ষেত্রে উদ্দেশ্য ‘বরুণ’ হচ্ছে কর্তা আর তার হওয়া বা কোনো কিছু করা যে শব্দ দ্বারা বোঝানো হলো তা হচ্ছে ক্রিয়া। যেহেতু এখানে ‘আঁকছে’ পদটি দিয়ে ‘বরুণ’-এর কোনো কাজ করা বোঝানো হয়েছে তাই এই পদটি হলো ক্রিয়া।
এই ক্রিয়া বাক্যের বিধেয় অংশে থাকে। যেমন—
পাখি ওড়ে। সূর্য ওঠে। জল পড়ে।
বাক্যগুলিতে বিধেয় অংশে থাকা ‘ওড়ে’, ‘ওঠে’, ‘পড়ে’-এই পদগুলি যথাক্রমে পাখি, সূর্য ও জলের কোনো কাজ করা বোঝাচ্ছে, তাই এরা একএকটি ক্রিয়াপদ।