সমার্থক শব্দ

শব্দ ভাষার প্রাথমিক উপাদান। ভাষাকে ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হলে শব্দের ওপর দখল থাকা দরকার। একই শব্দের বারবার ব্যবহার ভাষার মাধুর্যকে নষ্ট করে। সেজন্য একই অর্থবিশিষ্ট ভিন্ন ভিন্ন শব্দ প্রয়োজনমতো প্রয়োগ করে ভাষাকে পাঠকের হৃদয়গ্রাহী করতে হয়। উদাহরণ দেওয়া যাক—

১. লতা মহেশবাবুর কন্যা। 

২. মৃগেনবাবুর কন্যা স্কুলে ভরতি হয়েছে।

৩. সুরপতির কন্যার পাকা দেখা হল কাল। 

৪. কন্যাকে শাসন করে মনে মনে কষ্ট পাচ্ছেন ওর মা।

৫. অসুস্থ বাপের সেবা করছে ওঁর কন্যা

প্রতিটি বাক্যে ‘কন্যা' শব্দ ব্যবহার করায় ভাষার মাধুর্য নষ্ট হয়েছে। শুনতেও ভালো লাগছে না। বরং ‘কন্যা' শব্দের একই অর্থযুক্ত ভিন্ন ভিন্ন শব্দ প্রয়োগ করলে ভাষার ও শোনার মাধুর্য যায় বেড়ে। যেমন—

১. লতা মহেশবাবুর কন্যা

২. মৃগেনবাবুর মেয়ে স্কুলে ভরতি হয়েছে। 

৩. সুরপতির দুহিতার পাকা দেখা হল কাল।

৪. তনয়াকে শাসন করে মনে মনে কষ্ট পাচ্ছেন ওর মা।

৫. অসুস্থ বাপের সেবা করছে ওঁর আত্মজা

প্রতিটি বাক্যে একই অর্থযুক্ত পৃথক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এগুলি সমার্থক বা সমনাম বা প্রতিশব্দ

সংজ্ঞা: ভাষায় একই অর্থে ভিন্ন ভিন্ন শব্দের ব্যবহারকে বলা হয় সমার্থক শব্দ। একে সমনাম বা প্রতিশব্দও বলা হয়। যেমন—

  • মানবদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিষয়ক

মাথা—মস্তক, শির, শীর্ষ।

কান—কৰ্ণ, শ্রবণেন্দ্ৰিয়, শ্রুতি।

পা—পদ, পাদ, চরণ।

চুল—চিকুর, অলক, কুন্তল, কেশ।

চোখ—নয়ন, লোচন, আঁখি, চক্ষু, নেত্র।

মুখ—বদন, আনন, আস্য, মুখমণ্ডল।

নাক—নাসা, নাসিকা, ঘ্রাণেন্দ্রিয়।

হাত—পাণি, কর, ভুজ, হস্ত, বাহু।

  • পরিচিত পরিবেশ বিষয়ক

বাড়ি—আলয়, নিলয়, গৃহ, ঘর, ভবন।

গ্রাম— গাঁ, পল্লিগ্রাম, দেহাত।

অঙ্গন— উঠোন, প্রাঙ্গণ, আঙিনা।

শহর— নগর, নগরী, পুর।

  • আত্মীয়পরিজন বিষয়ক

বাবা—জনক, পিতা, পিতৃ, বাপ, জন্মদাতা। 

মা—জননী, মাতা, জন্মদাত্রী, প্রসূতি, গর্ভধারিণী।

বন্ধু — সখা, মিত্র, মিতা, সুহৃদ, বান্ধব।

শিক্ষক—আচার্য, গুরুমশায়, শিক্ষাদাতা।

স্বামী—পতি, নাথ, ভর্তা, প্রভু, মনিব।

কন্যা—তনয়া, দুহিতা, মেয়ে, পুত্রী,আত্মজা, নন্দিনী।

ভাই—ভ্রাতা, ভ্রাতৃ, সহোদর।

কাকা—খুল্লতাত, খুড়া, খুড়ো, পিতৃব্য।

বোন—ভগিনী, স্বসা, সহোদরা।

পুত্র – তনয়, আত্মজ, ছেলে, সন্তান, নন্দন।

  • জীবজন্তু বিষয়ক

গোরু—ধেনু, গো, গাই, গাভি।

হাতি—গজ, করী, হস্তী, মাতঙ্গ, দন্তী।

পাখি—বিহগ, বিহঙ্গ, পক্ষী, খেচর।

ময়ূর—শিখী, কেকা, কলাপী।

ঘোড়া—অশ্ব, বাজী, তুরগ, তুরঙ্গম, ঘোটক।

মৌমাছি—মধুকর, অলি, মধুমক্ষিকা।

কোকিল—পরভৃত, পিক, বসন্তদূত, বসন্তসখা

সর্প—নাগ, ফণী, সাপ, অহি, বিষধর, ভুজগ, ভুজঙ্গ।

  • দেবদেবী বিষয়ক

ঈশ্বর—ভগবান, বিধি, বিধাতা, জগদীশ্বর, পরমেশ্বর।

শিব—শম্ভু, শংকর, গিরিশ, মহাদেব,ভোলানাথ। 

গণেশ— গণপতি, হেরম্ব, সিদ্ধিদাতা,গজানন।

অগ্নি—অনল, বহ্নি, আগুন, পাবক, কৃশানু।

দুর্গা—পার্বতী, গৌরী, উমা, শারদা।

ইন্দ্র–বাসব, দেবরাজ, শচীপতি, পুরন্দর, সুরপতি।

লক্ষ্মী—পদ্মা, কমলা, নারায়ণী, বিষ্ণুপ্রিয়া।

সরস্বতী—ভারতী, বীণাপাণি, সারদা, বাগদেবী

  • প্রাকৃতিক বস্তু ও পরিবেশ বিষয়ক

গাছ—বৃক্ষ, তরু, উদ্ভিদ, পাদপ, মহিরুহ, বিটপী।

আকাশ—অম্বর, গগন, বিমান, নভঃ, ব্যোম।

বন—অরণ্য, জঙ্গল, কানন, বিপিন, কান্তার।

 চন্দ্ৰ—চাঁদ, শশী, ইন্দু, বিধু, শশাঙ্ক, শশধর। 

বাতাস— অনিল, বায়ু, সমীর, পবন।

জল–বারি, পানি, নীর, সলিল, অম্বু।

বিদ্যুৎ—চপলা, তড়িৎ, বিজলি, ক্ষণপ্রভা,সৌদামিনী।

নদী—তটিনী, নদ, তরঙ্গিণী, স্রোতস্বিনী।

মেঘ-বারিদ, জলদ, নীরদ, জলধর, অম্বুদ।

পাহাড়—গিরি, শৈল, পর্বত, অচল, ভূধর। 

সমুদ্র—দরিয়া, সিন্ধু, সাগর, বারিধি, অর্ণব।

পৃথিবী—জগৎ, ভূ, মেদিনী, ধরা, ধরিত্রী, ভুবন, বসুধা।

সূর্য—তপন, রবি, অরুণ, ভানু, প্রভাকর, দিবাকর, দিনমণি।


ধন্যবাদ


আরো পড়ুন.............

👉নিত্য সমাস

👉 সন্ধি

👉 সমাস

👉 কারক

👉 সমোচ্চারিত ভিনার্থক শব্দ

👉 অব্যয় পদ