মুদালিয়র কমিশন


মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. লক্ষণ স্বামী মুদালিয়ার সভাপতিত্বে 1952-53 খ্রিস্টাব্দে মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়। কমিশনের সভাপতি ড. লক্ষণ স্বামি মুদালিয়ার নাম অনুসারে উক্ত মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন মুদালিয়র কমিশন বলা হয়।

কমিশনের নামকরণ— মুদালিয়র কমিশন 1952 খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাস থেকে 1953 খ্রিস্টাব্দের জুন মাস পর্যন্ত (9 মাস) অক্লান্ত পরিশ্রম করে ভারতের মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থার সব দিক খতিয়ে দেখে ওই শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের জন্য 1953 খ্রিস্টাব্দের 29 আগস্ট 311 পৃষ্ঠার গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করে। কমিশনের সভাপতি ড, লক্ষণ স্বামী মুদালিয়র নামানুসারে এই কমিশন মুদালিয়র কমিশন বলা হয়।

মুদালিয়র কমিশনের সদস্যগন —

মুদালিয়র কমিশন নয় জন সদস্য নিয়ে গঠিত। তারা হলেন—(1) শ্রী অনাথ বসু (সম্পাদক), (2) ড. লক্ষণ স্বামি মুদালিয়ার (সভাপতি), (3) শ্রীমতী হংস মেহেতা (সদস্য), (6) ড. কে এস শ্রীমালি (সদস্য), (5) শ্রী জে এ তারাপরেওয়ালা (সদস্য), (6) শ্রী এস টি ব্যাস (সদস্য), (7) শ্রী কে জি সঙ্গদিয়ান (সদস্য), (8) ড. জন ক্রিস্টি (বিদেশি সদস্য), (9) ড. কেননেথ রাষ্ট্র উইলিয়াম (বিদেশি সদস্য)।

মুদালিয়র কমিশনের বিষয়বস্তু —

ভারত সরকারের যে নির্দেশের ভিত্তিতে মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয়, তাতে কমিশনের কাজের পরিধি কী হবে তা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়। প্রথমেই বলা হয় মাধ্যমিক শিক্ষা কমিশনের লক্ষ্য হবে ভারতবাসীর চাহিদার প্রতি নজর দিয়ে একটি সুসংবদ্ধ মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থা রচনা করা। সরকার যেসকল বিষয়ে কমিশনকে পরামর্শ দিতে বলেছিল তা হল—

(I) লক্ষ্য নির্ধারণ : মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরের লক্ষ্য কী হবে এবং সেই লক্ষ্যে কীভাবে পৌছােনাে যাবে, সে বিষয়ে পরামর্শদান।

(II) শিক্ষার পুনর্গঠন : মাধ্যমিক শিক্ষার নতুন সংস্কার সাধনের মাধ্যমে পুনর্গঠন করার কৌশলসমূহ নিয়ে আলােচনা ও পরামর্শদান।

(III) পাঠক্রম পরিবর্তন : তৎকালীন সময়ে শিক্ষার লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পাঠক্রম কী ধরনের পরিবর্তন আনা প্রয়োজন, কিভাবে তা বাস্তবায়ন করা হবে সে বিষয়ে পরামর্শ দিতে বলা হয়েছিল।

(IV) প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার মধ্যে সমন্বয় সাধন : সরকার ইতিপূর্বে গান্ধী প্রবর্তিত কর্মকেন্দ্রিক বুনিয়াদি শিক্ষা প্রাথমিক শিক্ষাস্তরের মূল কাঠামো হিসেবে গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই প্রাথমিক স্তরের ওই শিক্ষার সঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষা কিভাবে সার্থক সমন্বয়সাধন করা যায়, সে বিষয়ে কমিশনকে পরামর্শ দিতে বলা হয়েছিল।

(V) বিদ্যালয়ের পুনর্বিন্যাস : মাধ্যমিক স্তরের বিদ্যালয়গুলোকে কীভাবে পুনর্বিন্যস্ত করা হবে, সে বিষয়ে পরামর্শদান।

(VI) বিদ্যালয় সমূহের পারস্পরিক যােগাযােগ বৃদ্ধি : মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার জন্য বিভিন্ন শ্রেণির যেসব মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হবে, তাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক কী হবে, সে বিষয়ে ও পরামর্শদানের জন্য কমিশনকে বলা হয়েছিল।

(VII) বুনিয়াদি শিক্ষার সঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষার সমন্বয় : বুনিয়াদি শিক্ষার সঙ্গে নবগঠিত মাধ্যমিক শিক্ষার কীভাবে সার্থক সমন্বয় সাধন করা যায় সে বিষয়ে পরামর্শদান।

(VIII) অন্যান্য বিচার্য বিষয় : মাধ্যমিক শিক্ষার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অন্যান্য বিষয়গুলি উপযুক্ত সংস্কারের জন্য পরামর্শ দান করেছে কমিশন। যেমন—শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়,পরীক্ষা ও মূল্যায়ন ব্যবস্থার উন্নয়ন সংক্রান্ত আলোচনা, শিখন পদ্ধতি সংক্রান্ত ব্যবস্থাপনা গ্রহণ, বিদ্যালয় পরিচালনা সংক্রান্ত সুপারিশ ইত্যাদি।




THANKS