https://dasch2017.blogspot.com/2022/06/blog-post_11.html

বোধপরীক্ষণ

বোধপরীক্ষণ কথাটির অর্থ বুদ্ধি, অনুভূতি, ধারণা বা অনুমানের পরীক্ষা। আমরা অনেকসময় কোনো বিবরণ শুনে সহজে মনে রাখতে পারি, আবার অনেকসময় ভুলে যাই। বোধপরীক্ষণ একটি নির্দিষ্ট অনুচ্ছেদে মনে রাখতে হয় এবং তার থেকে প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। বোধপরীক্ষণ দ্বারা ছাত্রছাত্রীদের জ্ঞানের পরিধি ও উপলব্ধি শক্তির পরীক্ষা করা যায়।

বোধপরীক্ষণ সম্পর্কে যে কয়েকটি বিষয়ে লক্ষ রাখতে হয় তা হল --

(১) অনুচ্ছেদটি মন দিয়ে ভালো ভাবে পড়া।

(২) শব্দার্থগুলি জানা।

(৩) উদ্ধৃত অংশটি যতক্ষণ না বুঝতে পারছ ততক্ষণ একাধিকবার পড়া।

(৪) প্রশ্নগুলিকে বুঝে, উত্তর খোঁজা।

(৫) মনে রাখতে হবে যে প্রশ্নগুলি সাজানো আছে, অনুচ্ছেদে তার উত্তর পরপর দেওয়া নাও থাকতে পারে।

(৬) উত্তর অবশ্যই নিজের ভাষায় লিখতে হবে।

(৭) উত্তরের মধ্যে তোমার নিজস্ব মত ব্যবহার করবে না। 

(৮) উত্তর লেখার পর অনুচ্ছেদটি আর-একবার পড়ে অনুচ্ছেদের বিষয়টি ঠিক লিখতে পারছ কিনা তা মিলিয়ে নেবে।

(৯) প্রত্যেকটি প্রশ্নই অনুচ্ছেদটির মধ্যে থেকে দেওয়া থাকে। তাই বোধপরীক্ষণে মন দিয়ে পাঠ করাই আসল লক্ষ্য।


নিম্নে বোধপরীক্ষণের উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হলো---

অনুচ্ছেদ- ১

একটি মেয়ে আছে জানি

 পল্লীটি তার দখলে, 

 সবাই তারি পুজো জোগায় 

 লক্ষ্মী বলে সকলে। 

 আমি কিছু বলি তোমায়

কথায় যদি মন দেহ

খুব যে উনি লক্ষ্মী মেয়ে 

আছে আমার সন্দেহ।

ভোরের বেলা আঁধার থাকে 

ঘুম যে কোথা ছোটে ওর–

বিছানাতে হুলুস্থুলু

কলরবের চোটে ওর!

খিলখিলিয়ে হাসে শুধু 

আড়ি করে পালাতে যায়

পাড়াসুদ্ধ জাগিয়ে,

মায়ের কোলে গিয়ে।

(পরিচয়, শিশু—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নির্বাচিত অংশ)

প্রশ্নাবলি

(১) সবাই কার পুজো জোগায়?

(২) ভোরের বেলা সে কী করে?

(৩) পাড়াসুদ্ধ জেগে ওঠে কেন? 

(৪) কার মনে কীসের সন্দেহ আছে?

উত্তর

(১) সবাই একটি ছেটো মেয়ের পুজো জোগায়।

(২) ভোরের বেলা সেই মেয়েটির ঘুম ভেঙে যায়। সে তখন বিছানায় হুলুস্থূল বাঁধায় এবং কলরব করে। তার হাসিতে পাড়াসুদ্ধ লোকের ঘুম ভেঙে যায়।

(৩) পাড়াসুদ্ধ জেগে ওঠার কারণ ছোটো মেয়েটির আচরণ। সে ভোরবেলা জেগে উঠে দুষ্টুমি করে কলরব করে এবং খিলখিল করে হেসে সকলের ঘুম ভাঙিয়ে দেয়।

(৪) কবির মনে সন্দেহ আছে যে মেয়েটি লক্ষ্মী বা শাস্ত কি-না। অন্য সকলে তাকে লক্ষ্মী বললেও কবি মনে করেন দুরন্তপনায় সে কম নয়।


অনুচ্ছেদ- ২

১৯৯৩ সালে ৩১শে মে স্বামী বিবেকানন্দ ধর্ম মহাসম্মেলনে যোগদানের জন্য আমেরিকায় যাত্রা করেন। অনেক চেষ্টার পর তিনি এই ধর্মসভায় যোগ দেবার অধিকার পেলেন। শ্রী শ্রী ঠাকুর রামকৃষ্ণের নাম স্মরণ করে তিনি বক্তৃতা শুরু করলেন, ‘আমার আমেরিকাবাসী ভাই ও ভগ্নীরা”। স্বামীজীর এই কথাটুকু শুনেই সমস্ত আমেরিকাবাসী আনন্দে হাততালি দিতে লাগল। প্রায় দু-মিনিট চলল এই হাততালি দেওয়া। তাঁর বক্তৃতা শুনে আমেরিকাবাসী দলে দলে তাঁর শিষ্য হতে লাগল। এরপর তিনি যান ইংলন্ডে। সেখানেও তাঁর অনেক শিষ্য হল। এই ভাবে জগতের কাছে ভারতের গৌরব প্রচার করে তিনি দেশে ফিরে এলন। বহু বিদেশিনী তাঁর শিষ্য হন। ১৯০২ সালের ৪ঠা জুলাই তিনি দেহত্যাগ করেন।

প্রশ্নাবলি

(১) কোথায় ধর্মমহাসভা হয়েছিল? সেকানে কে যোগ দিতে গেলেন? কত তারিখে তিনি যাত্রা করেন?

(২) স্বামীজি কীভাবে ওই সভায় বক্তৃতা দেবার অধিকার পান? কাকে স্মরণ করে তিনি বক্তৃতা শুরু করেন?

(৩) কীভাবে তিনি বক্তৃতা শুরু করেন? দর্শকেরা তাতে কীভাবে সাড়া দেন? 

(৪) এই বক্তৃতা শুনে কী করল আমেরিকাবাসীরা ?

(৫) স্বামীজির এই বিদেশ যাত্রার ফল কী হল ?

(৬) কত সালে কোন্ তারিখে তিনি দেহত্যাগ করেন ?

 উত্তর

(১) ধর্মমহাসভা হয়েছিল আমেরিকায়। সেই সভায় যোগ দিতে যান স্বামী বিবেকানন্দ। তিনি ১৮৯৩ সালের ৩১ মে ভারত থেকে আমেরিকায় যাত্রা করেন।

(২) অনেক চেষ্টা করে তিনি ওই সম্মেলনে যোগ দেবার অধিকার পান। তিনি ঠাকুর শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণকে স্মরণ করে বক্তৃতা শুরু করেন।

(৩) তিনি আমেরিকাবাসীদের ভাই ও বোন সম্বোধনে বক্তৃতা শুরু করেন। শুনেই শ্রোতারা বিমুগ্ধ হয়ে হাততালি দিতে থাকে। প্রায় দু-মিনিট ধরে হাততালি চলতে থাকে।

(৪) স্বামীজির এই বক্তৃতা শুনে আমেরিকাবাসীরা দলে দলে তাঁর শিষ্য হতে থাকল। 

(৫) স্বামীজির এই বিদেশযাত্রার ফলে জগতের কাছে ভারতের গৌরব প্রচারিত হয়।

(৬) স্বামীজি ১৯০২ সালের ৪ঠা জুলাই দেহত্যাগ করেন।