https://dasch2017.blogspot.com/2022/06/blog-post_8.html

ভারতের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা


প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা

সময় কাল : 1951-1956

উদ্দেশ্য

(1) খাদ্য সমস্যা সমাধান ও কাঁচামাল হিসাবে পাট, তুলার উৎপাদন বৃদ্ধি।
(2) যুদ্ধ ও দেশভাগের ফলে বিধ্বস্ত অর্থনীতির পুনরুন্নয়ন ও মুদ্রাস্ফীতি রোধ।

(3) পথঘাট, নির্মান, রেললাইন, সেচব্যবস্থার উন্নয়ন।(4) কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ইত্যাদি।

অনুমতি ব্যয়: 2356 কোটি টাকা।

ব্যয় হয় : 1960 কোটি টাকা (19% কৃষি, সমাজ উন্নয়নমূলক কাজে, 29% জলসেচ ও উৎপাদনে ধার্য্য ও 27% পরিবহন খাতে)।

ফলাফল : জাতীয় আয় 11% থেকে 18% হয়, মাথাপিছু আয় বাড়ে 11% খাদ্য উৎপাদন 20% বাড়ে, শিল্প উৎপাদনের বার্ষিক বৃদ্ধি 8% কয়েকটি নতুন শিল্প যেমন তৈল পরিশোধন, জাহাজ নির্মান,                        পেনিসেলিন শিল্প গড়ে ওঠে।

দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা

সময় কাল: 1956 - 1961

উদ্দেশ্য : এই পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য পরিকল্পনার মাধ্যমে অর্থনীতির পুনরুজ্জীবনের দ্বারা ভারতের অর্থনীতিকে একটি উর্দ্ধমুখী উন্নয়ন স্তরে পৌঁছানো।

ব্যয়: 4800 টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হলেও প্রকৃত পরিমান দাঁড়ায় 4460 টাকা বেসরকারী খাতে  বিনিয়োগের পরিমান 3100 কোটি টাকা ধরা হয়। (শিল্প, খনিজ খাতে 20%, পরিবহন খাতে 25%,      সমাজসেবাতে 18%)

ফলাফল : প্রথম পরিকল্পনার তুলনায় দ্বিতীয় পরিকল্পনায় সাফল্য কম চোখে পড়ে। জাতীয় আয়ের বৃদ্ধি হয়। 19.5 (লক্ষ্যমাত্রা ছিল 25)। এই সময়ে 10.3 হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় মাথাপিছু আয় মাত্র 8% বৃদ্ধি পায়।। শিল্পোৎপাদন 7% বাড়লেও লক্ষ্যমাত্রার কম। এই সময় দুর্গাপুর,ভিলাই, রাউরকেল্লায় ইস্পাতকেন্দ্র স্থাপিত হয়। কৃষিক্ষেত্রে ব্যর্থতার জন্য খাদ্যশস্যর দামবাড়ে অভূতপূর্ব। বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি এই পরিকল্পনা রূপায়নে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।


তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা

সময় কাল: 1961-1966

উদ্দেশ্য : (1) বার্ষিক 5 শতাংশ বেশী হারে জাতীয় আয় বৃদ্ধি করা।

2) খাদ্যশস্য স্বয়ং-সম্পূর্ণতা অর্জন।

(3) ইস্পাত, রাসায়নিক শিল্পের মতো ভারী শিল্পের সম্প্রসারণ এবং যন্ত্রনির্মান ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা                 করা।

ব্যয় : সরকারি খাতে মোট ব্যয় হয় 8,631 কোটি টাকা। (36% কৃষি, সেচ ও বিদ্যুত; 20% পরিবহনে এবং অন্যান্য খাতে ব্যয়ের পরিমান হয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মতো) তৃতীয় পরিকল্পনার সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় কৃষি।

ফলাফল : এই পরিকল্পনায় কোন লক্ষ্যমাত্রাই পূর্ণ হয়নি অর্থাৎ ব্যর্থ হয়। জাতীয় আয় বৃদ্ধি 13-এ নেমে আসে (লক্ষ্যমাত্রা 30 ছিল) মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পায় 1% শিল্প ক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধি পায় 14% (লক্ষ্যমাত্রা ছিল 70%) কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শিল্পোৎপাদন বার্ষিক 7.6% হারে বৃদ্ধি পায়।

ব্যর্থতার কারণ : এই পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার পেছনে অনেকগুলি রাজনৈতিক কারণ বর্তমান যেমন ভারত-চিন, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ, নানা স্থানে ঘরা, বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি, দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, কেন্দ্র-রাজ্যের সংহতির অভাব ইত্যাদি।

তিনটি বার্ষিক পরিকল্পনা : (1966 - 1969) হিসেব মতো 66-71 চতুর্থ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা নেওয়ার কথা থাকলেও পরিকল্পনা শুরু না করার ফলে এবং বার্ষিক উন্নয়নের কার্যধারাকে অবিচ্ছিন্ন রাখার উদ্দেশ্যেই তিনটি ব্রন্দ্রিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। ফলে ধারাবাহিক পরিকল্পনায় ছেদ পড়ে। এই কারণে এই সময়কে 'পরিকল্পনা থেকে বিরতি'র সময় বলা হয়। এই সময় নতুন কোনো কর্মসূচী গ্রহণ না করে তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় যেসব কাজ অসমাপ্ত রয়ে গেছিল সেগুলিকে সুষ্ঠুভাবে রূপায়িত করার চেষ্টা করা হয়। 1969 সাল থেকে আবার চতুর্থ পরিকল্পনা শুরু হয়।


 চতুর্থ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা 

 

সময় কাল: - 1969 - 1974

উদ্দেশ্য: (1) অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জন।

(2) কৃষি ও শিল্পের উৎপাদন বার্ষিক 5.7% হারে বাড়ানো।

(3) কৃষিজাত দ্রব্যের মূল্যস্তর ও সাধারণ মূল্যস্তরের মধ্যে একটি সহনযোগ্য স্থিতিশীলতা আনয়ন। 

(4) অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণ ও অনুন্নত শ্রেণীর মধ্যে অর্থনৈতিক সুযোগ সুবিধা সম্প্রসারণ।

বায় : এই পরিকল্পনাতে 24,882 কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয় (কৃষি ও সেচের ওপর 24%, শিল্প ও খনিজে 21%, পরিবহনে 20% এবং সমাজ সেবা খাতে 18%) ফলাফল : এই পরিকল্পনাতেও ব্যর্থতাই লক্ষ্যনীয়। জাতীয় আয় বৃদ্ধির হার 3.3% (লক্ষ্যমাত্রা ছিল 5.7%) মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির হার হয় 1.2%। এই সময় কৃষিক্ষেত্রে নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভব হলেও কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধির হার 2.8% হয় (5.7% এর বদলে), শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধির হার 3.9% (লক্ষ্যমাত্রা ছিল 8.1%) বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি, শিল্পে মন্দা, শ্রমিক অশান্তি এসবই ছিল প্রধান কারণ।


পঞ্চম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা

সময় কাল1974 - 1979

উদ্দেশ্য : বিগত কয়েকটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ায় ভারতীয় অর্থনীতির ওপর তীব্র চাপের সৃষ্টি হয়েছিল এই পরিকল্পনায়, তাই এই পরিকল্পনায় প্রধান দুই উদ্দেশ্য দারিদ্র দূরীকরণ ও অর্থনৈতিক স্বয়ম্ভরতা অর্জন।

ব্যায়: সরকারি খাতে বিনিয়োগে পরিমান ধরা হয় 39,303 কোটি টাকা এবং বেসরকারী খাতে বিনিয়োগের পরিমান ধরা হয় 20,084 কোটি টাকা। (সরকারী ব্যয়ের 26% শিল্প খনিজে, সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রনে 18%, পরিবহনে 18% ও সমাজসেবা খাতে ১৭% ব্যয়িত হবে বলে ধরা হয়। 

ফলাফল: এই পরিকল্পনাটি শেষ পর্যন্ত রূপায়িত হয়নি ভারতবর্ষে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের জন্য। ফলে 1979 সালের বদলে 1978-এর মার্চে এটিকে শেষ করে দেওয়া হয়। 1977 সালের এপ্রিল মাসে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার বদলে 1978-80 পর্যন্ত পরিকল্পনা গ্রহন করে। তবুও পঞ্চম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় প্রথম চার বছরে জাতীয় আয় বার্ষিক 3.9% হারে বাড়ে (লক্ষ্যমাত্রা 4.4%), কৃষিজাত দ্রব্যের রেকর্ড উৎপাদন হয় 12.6 কোটি টন (লক্ষ্যমাত্রা কৃষিদ্রব্য উৎপাদন 3.4% হারে বাড়বে) শিল্প উন্নয়ন 5.3% (লক্ষ্যমাত্রা 8% থেকে কমিয়ে 6.2% করা হয়)।



Next Part Coming Soon